মামলা দায়েরসহ নানা দরখাস্ত দাখিলে স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি ব্যবহৃত হয়। গত দেড় মাস ধরে প্রয়োজনীয় এসব উপাদান চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে আইনজীবীদের। আইনজীবীরা বলছেন, ১০০ টাকার স্ট্যাম্প বিক্রি হচ্ছে ১২২ থেকে ১২৫ টাকা। কেউ কেউ ১৩০ টাকা দিয়েও ১০০ টাকার স্ট্যাম্প ক্রয় করেছে বলে অভিযোগ করছেন। অন্যদিকে ১০ টাকার কার্টিজ পেপার ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও আইনজীবীরা জানিয়েছেন। কোর্ট ফি বিক্রি হচ্ছে, ১০ টাকারটা ১২ টাকায়। এমনকি ফলিও’র দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মুহাম্মদ রাহিম উদ্দীন চৌধুরী নামের একজন আইনজীবী লিখেছেন, চট্টগ্রামে ১০০ টাকার স্ট্যাম্প ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অবিলম্বে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের অপর একজন আইনজীবী আজাদীকে জানিয়েছেন, দেড় মাস ধরে চড়া মূল্যে স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ নেই দাবি করে ভেন্ডাররা চড়া মূল্য নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি দেখা প্রয়োজন এবং সংকট নিরসনে কাজ করতে হবে। স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ছাড়া মামলা দায়েরসহ সংশ্লিষ্ট কাজকর্ম করা যায় না বলে আইনজীবীরা বাধ্য হয়ে এসব ক্রয় করছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
আইনজীবীরা বলেন, দেড় মাস আগেও ১০০ টাকার স্ট্যাম্প ১০৫ টাকা, ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কার্টিজ পেপারের প্রকৃত মূল্য ৭ টাকা বলেও জানান আইনজীবীরা। এদিকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিও এর স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে অনুরোধ করেছেন হাইকোর্ট। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর ফেসবুকে মো. করমুল্লাহ নামের একজন আইনজীবী লিখেছেন, আশা করছি, ভালো একটা সমাধান হবে। ১০ টাকার কোর্ট ফি নাই বললেই চলে বলে দাবি করেছেন তিনি। ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প ৩৬০ টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফেসবুকে তিনি লিখেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর চিঠির মাধ্যমে করা অনুরোধে বলা হয়, সম্প্রতি হাইকোর্টের গোচরীভূত হয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এবং দেশের ৬৪টি জেলায় স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিও এর সংকট বিরাজ করছে। বিচারপ্রার্থীদের বাধ্য হয়ে কয়েক গুন বেশি দামে ভেন্ডারদের কাছ থেকে এসব কিনতে হচ্ছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
ভেন্ডারদের অভিযোগ, ট্রেজারিতে স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিও এর চরম সংকট থাকায় ট্রেজারি শাখা থেকে চাহিদা মতো স্ট্যাম্প, কার্টিজ পেপার, কোর্ট ফি ও ফলিও এর সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। আরো বলা হয়, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের উভয় বিভাগ এবং দেশের ৬৪টি জেলার অধস্তন আদালতে প্রতি কার্যদিবসে বিচারপ্রার্থী জনগণের পক্ষে মামলা দায়েরসহ অন্যান্য দরখাস্ত দাখিলের সময় জুডিসিয়াল ও নন–জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হয়। আদালতে দাখিলকৃত স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফির মাধ্যমে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেয়ে থাকে।
বাংলাদেশ স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, আসলেই সরবরাহ স্বাভাবিক নেই। এ জন্য স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের ট্রেজারী বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবন কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি নজরে পড়েছে। ভেন্ডারদের সাথে কথা বলব এবং সংশ্লিষ্ট জায়গায় অবহিত করব।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি’র সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। কোন ঘাটতি নেই। গোপনে পরিদর্শন করে দেখা হবে কারা বাড়তি দামে এসব উপাদান বিক্রি করছে এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরবরাহ একেবারে নেই তা সঠিক নয়। সরবরাহ মোটামুটি পর্যাপ্ত রয়েছে। প্রকৃত পক্ষে স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি কেন্দ্রিক ব্যবসা সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে। সরবরাহ কম দাবি করে এই সিন্ডিকেট স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি চড়া মূল্যে বিক্রয় করছেন।