নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আলু, পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম সরকার বেঁধে দিলেও বাজার চলছে বাজারের নিয়মে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আলু, পেঁয়াজের বেঁধে দেয়া দামে ভ্রুক্ষেপ নেই ব্যবসায়ীদের। কম দামে কিনতে না পারায় নির্ধারিত দামে বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি বিক্রেতাদের। এদিকে অভিযানের পাশাপাশি গুদামে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ ক্রেতাদের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এক কেজি আলু খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করতে হবে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়। আর পাইকারিতে বিক্রি হবে ২৭ থেকে ২৮ টাকায়, উৎপাদক পর্যায়ে যা বেচাকেনা হবে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য সূত্রে এভাবেই প্রতিকেজি আলু হাত বদলে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অথচ এসবে ভ্রুক্ষেপ নেই ব্যবসায়ীদের। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি পর্যায় থেকেই বাড়তি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এরপর শ্রমিক ও পরিবহন খরচসহ অন্যান্য আনুসাঙ্গিক খরচ রয়েছে। তাই আলু সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না।
একইভাবে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় যে মানের দেশি পেঁয়াজ ভোক্তার হাতে পৌঁছানোর কথা, তা পাইকারিতে বিক্রি হবে ৫২ থেকে ৫৩ টাকায়। আর উৎপাদক পর্যায়ে বিক্রি হবে ৪১ থেকে ৪২ টাকায়। অথচ খুচরা বিক্রেতারা জানান, পাইকারি পর্যায়ে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮২ টাকা কেজি দরে। তাদের দাবি, সরকার নির্ধারিত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ পাইকারি ও আড়ৎ পর্যায় থেকেই বাড়তি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বেঁধে দেয়া দাম বাজারে কার্যকর করতে এসব পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করার পরামর্শ ভোক্তাদের। তারা বলেন, শুধু খুচরা পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা করলে দাম কমবে না। পাইকারি ও আড়ৎ পর্যায়েও অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
অন্যদিকে, অনেকে অভিযোগ করে বলেছেন, দাম নির্ধারণ হয়েছে সিন্ডিকেটের স্বার্থেই। তাঁরা বলেন, ‘নিত্যপণ্যের উৎপাদন, মজুত ও সরবরাহ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। বাজার ও গুদামে পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। এরপরও সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য এক বা একাধিক পণ্য টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে। পরে এ দাম আর তেমন একটা কমছে না। দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা শুরু হলে সরকার নানা উদ্যোগ নেয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওইসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু যত টাকা দাম বাড়ানো হয়েছিল, পুরোটা না কমিয়ে সামান্য কিছু কমানো হয়। এমনকি উৎপাদন, পরিবহণ, ব্যবসায়ীর মুনাফাসহ যে দাম হওয়ার কথা, এর চেয়েও বেশি দাম নির্ধারণ করা হয়। এতে প্রকৃতপক্ষে ভোক্তা কোনোভাবেই লাভবান হচ্ছেন না। উলটো তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লাভবান হচ্ছে কথিত সিন্ডিকেট। এ কারণে অনেকে মনে করেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে, তা সিন্ডিকেটের পক্ষেই যাচ্ছে।’
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার প্রত্যাশা অনুযায়ী বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। নতুন নির্ধারিত পণ্যের ক্ষেত্রেও সেটা হওয়ার শঙ্কাই বেশি। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বাজারে দাম বাড়ছে। আমদানি ও স্থানীয় পর্যায়ে সিন্ডিকেশন গুরুতর আকার ধারণ করেছে। সব পণ্যেই সিন্ডিকেশনের কারণে দাম অনেক বেশি। আবার উৎপাদনের তথ্যেও সমস্যা রয়েছে। যে কারণে পলিসিও ঠিকভাবে নেয়া যায় না।
আমরা পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জেনেছি, বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে দেখা যায়, পর্যাপ্ত মজুদ সত্ত্বেও বাড়তি দামে আলু বিক্রি করা হচ্ছে। এ সময় আড়তদাররা বাড়তি দামে ক্রয় করার কারণে সীমিত লাভে আলু বিক্রি করছে বলে দাবি করলেও এর সপক্ষে কোনো নথিপত্র দেখাতে পারেননি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালকের বক্তব্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান শুরু করেছি। শুরুতে ব্যবসায়ীদের সচেতনতার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।’ ধারাবাহিক অভিযানে বাড়তি দামে আলুসহ নির্ধারিত দামের পণ্য বিক্রি করলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আসলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ ও অসাধু ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা রোধে সরকার একাধিকবার একাধিক পণ্যের দাম নির্ধারণ করেছে। কিন্তু একবারও তা কার্যকর হয়নি। এবারও কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তবে অসাধু ব্যবসায়ীদের অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন আর ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। এবার অনন্ত কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।