সড়কে সব আগের মতই

অনিয়ম কমে না নেই সমন্বিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন

ঋত্বিক নয়ন | শুক্রবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ

নগরীর বিভিন্ন সড়কে পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই, অতীতে নেওয়া পরিকল্পনাগুলোরও বাস্তবায়ন নেই। যানবাহন ধরা হচ্ছে, মামলা, জরিমানা করা হচ্ছে, আটক করছে গাড়ি; ব্যস এটুকুই। অনিয়মটাই ঠিক আগের মতো নিয়ম হিসেবে দৃশ্যমান প্রতিটি রাস্তায়। নো পার্কিংয়ে গাড়ি পার্কিং, যানজট, মোড়ে মোড়ে এলোমেলো গাড়ির লাইন, রাস্তার মাঝে দাঁড় করিয়ে গাড়িতে যাত্রী উঠানো নামানো, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক দেখা যাওয়াসবই আছে আগের মতোই। মাঝেমধ্যে ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন সড়কে ঘটালেও সমন্বিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নেই কোথাও।

বর্তমানে নগরীর সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। দিন যত যাচ্ছে সমস্যা তত প্রকট হচ্ছে। যানজট ক্রমশ দুর্বিষহ করে তুলেছে জনজীবন। নষ্ট হচ্ছে মানুষের শ্রম ঘণ্টা। পুড়ছে জ্বালানি। নষ্ট জ্বালানিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়গুলোর একতৃতীয়াংশই বর্তমানে গণপরিবহন, প্রাইভেট গাড়ি, সিএনজি টেক্সি, রিকশা, ভ্যান ও ভ্রাম্যমাণ হকারের দখলে থাকে। এতে সাধারণ যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে চরমভাবে বিঘ্ন ঘটছে। স্কুল ছুটির সময় অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে যানজট অসহনীয় হয়ে ওঠে।

প্রাইভেট গাড়ি এবং গণপরিবহন যেখানে সেখানে দাঁড়ানোর কারণে যানজট বেড়েছে। রাস্তায় পার্কিং প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) তারেক আহমেদ কাউকে দোষারোপ না করে বলেন, অবৈধ পার্কিং আমরা তখনই বলতে পারবো, যখন বৈধ পার্কিং প্লেস থাকবে। সেটাতো আমরা দিতে পারছি না নগরবাসীকে। এখন অবৈধভাবে পাকিং করা হলে বড়জোর মামলা দেই, জরিমানা করি। এর বেশি কিছু করার সামর্থতো আমাদের নেই। ভবনের অনুমোদন দিয়ে থাকে সিডিএ এবং তা মনিটরিংও তাদেরই করার কথা। একইভাবে রাস্তার উপরে কিংবা ফুটপাতে যদি কেউ গাড়ি পার্ক করে রাখে তাহলে সিটি করপোরেশন বা সিডিএ থেকে মোবাইল কোর্ট করা হয়ে থাকে।

উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিকউত্তর) জয়নুল আবেদীন বলেন, সড়কে উন্নয়ন কাজ, সিগন্যাল বাতি না থাকা এবং চালক, মালিক ও যাত্রীদের অসচেতনতার কারণে যানবাহনে পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি মাসে আইন অমান্যকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলার বিপরীতে জরিমানা আদায় করছে ট্রাফিক পুলিশ। এত ব্যবস্থা নেওয়ার পরও থামছে না আইন ভঙ্গের প্রবণতা। শুধু তাই নয়, অসংখ্যবার নগরীর স্বনামধন্য স্কুলগুলোকে বাসের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

চট্টগ্রাম শহরে ৫ লাখের বেশি যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক গাড়ি চলাচল করে। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তা কিংবা ফুটপাতের উপর রাখা হচ্ছে গাড়ি। কিছু বিপণিকেন্দ্রে পার্কিং ব্যবস্থা থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। নগরীর অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে নেই গাড়ি পার্কিং সুবিধা। হাতেগোনা কয়েকটি রেস্টুরেন্টে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে বহাদ্দারহাট মোড় প্রধান সড়কের দুই পাশে, কদমতলী থেকে কোতোয়ালী মোড়, লালখানবাজার থেকে স্টেডিয়াম হয়ে জামালখান, চকবাজার, কাপাসগোলা, ষোলশহর, মুরাদপুর, নিমতলা থেকে হালিশহর হয়ে নয়াবাজার, সাগরিকা, অলংকার মোড় এলাকায় নামিদামি যেসব রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগ গড়ে উঠেছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ছাড়াই। চমেক হাসপাতালের পূর্ব গেট থেকে অলি খাঁ মসজিদের পশ্চিম পর্যন্ত, আন্দরকিল্লা থেকে লালদীঘি মোড় পর্যন্ত, চেরাগি পাহাড় মোড় থেকে জামাল খান মোড়, নিউমার্কেট মোড় থেকে কোতোয়ালী মোড়সহ নগরের অধিকাংশ সড়কের একাংশই যেন গাড়ির নির্ধারিত পার্কিং!

দেওয়ানহাট এলাকায় গাড়ির যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্য কেনাবেচার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কেট। এই মার্কেটগুলোর সামনের রাস্তায় প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। মার্কেটে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় গাড়িগুলো রাস্তার উপর থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এই এলাকার যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশকে নিতে হয় বিশেষ ব্যবস্থা। একইভাবে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আশপাশে, নগরীর মেহেদীবাগ, গোলপাহাড় মোড় থেকে পাঁচলাইশ, নাসিরাবাদ হাউজিং থেকে প্রবর্তক মোড় হয়ে চকবাজার, ষোলশহর ফরেস্ট গেট থেকে মুরাদপুর, মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট, জুবিলী রোড, স্টেশন রোডের পুরাতন রেল স্টেশন থেকে শুরু করে আমতল মোড়, জিপিওর সামনে, নগরীর কাপাসগোলা থেকে বহদ্দারহাট মোড়, কেবি ফজলুল কাদের চৌধুরী রোডের অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মোড় থেকে প্রবর্তক মোড়, চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকাসহ নগরীর প্রায় প্রতিটি স্থানেই অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজট নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে।

পাশাপাশি ৪০টির বেশি অনুমোদনহীন রুটে অবৈধভাবে চলছে নিবন্ধনহীন কয়েক হাজার গাড়ি। সেইসঙ্গে দাঁড়িয়ে গণপরিবহনে যাত্রী ওঠানামা এবং একই রুটের অন্য গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতা চলছে। সব মিলিয়ে সড়কজুড়ে যানবাহনে এখন চরম নৈরাজ্য। এসব কারণে সড়কে যানজটের পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেষ বলে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা
পরবর্তী নিবন্ধস্থানীয় সরকার দিবসের অনুষ্ঠান