২৩টি মোবাইল ক্রেন কেনা সম্ভব হয়নি চার বছরেও

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

চার বছরেরও বেশি সময় ধরে নানা প্রক্রিয়া চালিয়েও চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ২৩টি দশ টনের মোবাইল ক্রেন ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। একে একে তিন দফা দরপত্র আহ্বান এবং নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলেও প্রায় ৭০ কোটি টাকার ইকুইপমেন্ট কেনার উদ্যোগ ঝুলে আছে। গুরুত্বপূর্ণ এসব ইকুইপমেন্ট ক্রয় করা সম্ভব না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পণ্য হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে সংকট বিরাজ করছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, বিশ্বের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতি বছর গড়ে ৩০ লাখেরও বেশি কন্টেনারসহ দশ কোটি টনেরও বেশি পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। বিশাল এই কর্মযজ্ঞে বিভিন্ন ধরণের ইকুইপমেন্ট ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্ট হচ্ছে ক্রেন। বন্দরে কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ নানা ধরনের ক্রেন ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধারণক্ষমতার ক্রেন দিয়ে কাজ করা হয় বন্দরে। এরমধ্যে কম ধারণক্ষমতার পাশাপাশি অতি বেশি ধারণক্ষমতার ক্রেনও লাগে। বন্দরে ১০৪টি ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ প্রকল্পের আওতায় ২৩টি ১০ টন ধারণক্ষমতার ক্রেন কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়। কন্টেনার থেকে পণ্য খালাস করার পর হ্যান্ডলিং এর ক্ষেত্রে এসব ক্রেন গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম বন্দরে ছোট ক্রেনের সংকট থাকায় বিগত ২০২০ সালেই ১০ টন ধারণক্ষমতার ক্রেন কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়। এই ধরনের ক্রেনের অভাবে ১০টনি ক্রেন দিয়ে যেসব কাজ করা হয় সেগুলো ২০টন, ৩০ টন এবং ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ টনের ক্রেন দিয়ে করতে হয়। এতে করে জ্বালানি খরচসহ পণ্য হ্যান্ডলিং খরচ বহুলাংশে বেড়ে যায়। ছোট ক্রেন দিয়ে হ্যান্ডলিং করলে এসব খরচ অনেকাংশে সহনীয় হয়ে আসে বলে সূত্র জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৩টি ১০ টন ক্ষমতার ক্রেন কেনার জন্য প্রথম টেন্ডার আহ্বান করে ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। ওই টেন্ডারে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। ইকম ট্রেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৫৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকায় উক্ত

২৩টি ১০ টন ধারণক্ষমতার ক্রেন সরবরাহ দেয়ার টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। বন্দর থেকে তাদেরকে কার্যাদেশ দেয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন চাইলেও ইতোপূর্বে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করায় প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। এই টেন্ডার বাতিল করে দ্বিতীয় দফায় পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করা হয় ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল। ওই টেন্ডারে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। তাদের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়ার প্রক্রিয়া বেশ অগ্রসর হলেও ওই প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পারফরমেন্স গ্যারান্টি দিতে না পারায় ওই টেন্ডারও বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল নতুন করে তৃতীয় দফার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। গত ৩১ মে এই টেন্ডার দাখিলের শেষদিন ছিল। মাত্র দুইটি প্রতিষ্ঠান এই টেন্ডারে দরপত্র দাখিল করে। ইতোমধ্যে এই টেন্ডার নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অভিযোগ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের নির্ধারিত বাজেট ৬৯ কোটি টাকা থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকা বাড়তি দরে ৭৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকায় একটি কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগের মাঝে শেষতক তৃতীয় দফার টেন্ডারেও ২৩টি ১০ টন ধারণক্ষমতার ক্রেনগুলো কেনা সম্ভব হয় কিনা তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগ করা হয়েছে যে, মাত্র দুইটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করায় প্রতিযোগিতামূলক দর পাওয়া যায়নি। ক্রেন সরবরাহকারী আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় আসলে ক্রেনের দর আরো কমে যেতো বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকৌশল বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ক্রেনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যত দ্রুতই এসব ক্রেন বন্দরের ইকুইপমেন্ট বহরে যুক্ত হবে ততই জাতি উপকৃত হবে। বন্দরের কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়বে। তবে একে একে তিনবার টেন্ডার আহ্বান পুরো প্রকল্পটিকে ঝুলে দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ক্রেনগুলো আনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে বলেও তিনি জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২০৩০ সালে দেশে সচ্ছল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা হবে সাড়ে ৩ কোটি : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে হোটেলে তরুণীর মরদেহ