অনন্য চিত্রকর ভিনসেন্ট ভ্যানগগ

লিটন কুমার চৌধুরী | বুধবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের চিত্রশিল্পের ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায় একেকজন শিল্পী এসে তাঁদের প্রতিভার যাদুতে পুরাতন ছাঁচ ভেঙে নতুন এক শিল্পভাষার উদ্ভাবন ঘটিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বাঁক বদল ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। সেইসব শিল্পীর তালিকায় ডাচ চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যানগগ এর নাম নিঃসন্দেহে উপরদিকে স্থান পাবে। ১৮৫৩ সালের ৩০ মার্চ নেদারল্যান্ডের উত্তর ব্রাবন্টের প্রধানত ক্যাথলিক প্রদেশের গ্রুট জুন্ডার্টে একটি উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে ভিনসেন্ট ভ্যানগগ জন্মগ্রহন করেন । তাঁর বাবার নাম ছিল থিওডোরাস ভ্যানগগ আর মায়ের নাম ছিল আনা কর্নেলিয়া কার্বেন্টাস। তাদের ছয় সন্তানের মধ্যে ভিনসেন্ট ছিলেন সবার বড়। প্রাথমিকভাবে মায়ের কাছে এবং এক পরিচারিকার কাছে ভ্যানগগের শিক্ষা শুরু হয়েছিল। তিনি ছিলেন ডাচ পোস্ট ইমপ্রেশনিস্ট যুগের চিত্রকর। উদ্যোম সৌন্দর্য্য, আবেগজাত সত্যনিষ্ঠ এবং উজ্জ্বল ও সার্থক রং প্রয়োগে ছিল তার দূর্বার ক্ষমতা। বিশ শতকের চিত্রকলায় তিনি সুদুরপ্রসারী অবদান রেখেছেন। মুষ্টিমেয় কিছু লোক তাঁর শিল্পকর্ম সর্ম্পকে জানতেন। তাঁর জীবদশায় কোন রকম খ্যাতি ও প্রতিপত্তির দেখা মেলেনি। বছরের পর বছর ধরে সৃষ্টি করে চলেছিলেন অসাধারণ সব চিত্রকর্ম। যা তাকে মহান শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। এক দশকে প্রায় ২১০০টি শিল্পকর্ম নির্মাণ করেছিলেন ভ্যানগগ। যার মধ্যে ৮৬০টি তৈলচিত্র, ১৩০০এর বেশি জলরং, ড্রয়িং, স্কেচ ও ছাপচিত্র । চিত্রকর্মের বিষয়বস্তু হচ্ছে আত্মপ্রতিকৃতি, নৈসর্গিক দৃশ্যমালা, স্থিরচিত্র, বৃক্ষসারি, সূর্যমুখী কিংবা শস্যক্ষেতের দৃশ্য। চিত্রশিল্পের প্রথাগত ধরন থেকে বেরিয়ে এসে একটি স্বতঃস্ফুর্ত শৈলীর সন্ধান করেছিলেন তিনি এবং এক পর্যায়ে সফল হয়েছিলেন। একসময় প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মপ্রচারক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। বছর বছর উদ্বেগ ও ঘন ঘন মানসিক অসুস্থতায় তাকে বেশ অবসাদগ্রস্থ মনে হতো। এই সময় তিনি নিজেকে পৃথিবীর কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে করতে লাগলেন। মানসিক অসুস্থতা তার মনে এমনভাবে প্রভাব ফেলেছিল যে ১৮৯০ সালের ২৭ জুলাই হতাশা এবং দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে না পেরে গমের ক্ষেতে নিজের বুকে নিজে গুলি করেন তিনি। দুইদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ২৯ জুলাই মাত্র ৩৭ বছর বয়সে এই মহান শিল্পীর মৃত্যু হয়।

তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে “স্টেরি নাইট” “সানফ্লাওয়ার” “বেডরুম ইন আর্লস” “সরো” “সাইপ্রেসাস” “হেড অব পিসেন্ট ওম্যান” “ক্যান্টি রোড ইন প্রোভেন্স বাই নাইট” এবং শেষ ছবি “কর্ণফিল্ড উইথ ক্রো” অন্যতম। ভ্যানগগ মাত্র ৩৭ বছর বয়সে অমর সৃষ্টির মাধ্যমে যা দিয়ে গেলেন তা পৃথিবীর মানুষ আজীবন মনে রাখবে ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারকেল পাতার বাঁশি
পরবর্তী নিবন্ধমমতার শৈশবকালীন সেবা ও বিকাশ কেন্দ্রের উদ্বোধন