সব প্রক্রিয়া শেষ করেও চট্টগ্রামের প্রায় ৩০ হাজার আবেদনকারী ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না। বিআরটিএ’র কাছ থেকে লাইসেন্স না পেয়ে শত শত আবেদনকারী বিদেশ যাওয়াসহ নানা কাজে মারাত্মক রকমের সংকটে পড়েছেন। বিআরটিএর লাইসেন্স ছাপানোর কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতা এবং রহস্যজনক ভূমিকার কারণে লাইসেন্সগুলো আটকে আছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সারা দেশে প্রায় ৪ লাখ আবেদনকারীর লাইসেন্স আটকে রয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
বিআরটিএর দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সারাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড প্রদানের উদ্যোগ নেয় সরকার। যে কোন আবেদনকারী লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা পাস করে এই লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারছেন। আগে যাদের লাইসেন্স রয়েছে তারা আবেদন এবং নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করে স্মার্ট লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারছেন। সরকার ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স (এমএসপি) নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থাপনের কাজ প্রদান করে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্স ছাপানো এবং সরবরাহ দেয়ার ক্ষেত্রে চরম অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে করে সারাদেশে প্রতিদিন কয়েক হাজার আবেদন জমা হলেও তা ছাপানো এবং সরবরাহ দেয়া হচ্ছে না। হাজার হাজার লাইসেন্স আটকা পড়ে এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
একজন ড্রাইভারের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এই লাইসেন্স ছাড়া সরকারি চাকরিতে আবেদন করা যায় না। বেসরকারি চাকরিতেও লাইসেন্স না থাকলে অনাহুত ভোগান্তি হয়। রাস্তায় গাড়ি চালানের সময় পুলিশি হয়রানিসহ নানা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে চালকদের। সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক চালকদের জন্য। অনেকেই বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ভিসার সংস্থান করলেও লাইসেন্সের অভাবে বিদেশ যেতে পারছেন না।
এলসি খোলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স (এমএসপি) কার্ড আমদানি এবং সরবরাহ দিতে পারছে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, ব্যাংকে এলসি খোলার সমস্যা হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেকায়দায় পড়েছে। তারা বেশ কিছু লাইসেন্স ছাপিয়ে সরবরাহ দিয়েছে। তবে সারাদেশে এখনো ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৪৯৩ লাইসেন্স আটকা পড়ে আছে। চট্টগ্রামে আটকে আছে ২৮ হাজার লাইসেন্স। এসব লাইসেন্সের জন্য প্রায় প্রতিদিনই শত শত চালক বিআরটিএ কার্যালয়ে ধর্ণা দিচ্ছে। বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কতদিনে এসব লাইসেন্স সরবরাহ দেয়া সম্ভব হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। কর্মকর্তারা বলছেন, ঠিকাদারি সংস্থা সরবরাহ দিলেই কেবল আমরা চালকদের প্রদান করতে পারবো। এখানে বিআরটিএ’র কিছু করার নেই বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
বিআরটিএর সূত্র জানায়, মাদ্রাজ প্রিন্টার্সকে কার্যাদেশ দেয়ার সময় শর্ত ছিল যে, তারা প্রতিদিন গড়ে আট হাজার লাইসেন্স সরবরাহ করবে। কিন্তু মাদ্রাজ প্রিন্টার্স প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড দিতে পারছে না। এই প্রতিষ্ঠানের সেই সক্ষমতা আছে বলেও মনে করছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলেন, বার বার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স প্রদান করতে না পারায় দেশব্যাপী সংকট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।