২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির আবেদন শেষে প্রাথমিক পর্যায়ের ফল প্রকাশিত হয়েছে। প্রাথমিক আবেদন করা ১ লাখ ২৩ হাজার ১৫১ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ১লাখ ১৪ হাজার ৪৫০ জন কলেজ বরাদ্দ পেয়েছে। আর ৮ হাজার ৭০১জন কোন কলেজই পায়নি, যাদের অধিকাংশই জিপিএ-৫! আবার যারা কলেজে আসন পেয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেরই পছন্দের কলেজটি নেই।
সরকারী কলেজগুলোতে বিজ্ঞান বিভাগে কেবল গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্তরাই সুযোগ পেয়েছে। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী কাংখিত কলেজ না পেয়ে ভুগছে স্বপ্নভংগের বেদনায়! অনেকে এমন কলেজ পেয়েছে যা শহর এলাকা থেকে অনেক দূরে, যেখানে পড়া সম্ভব নয় কিংবা পরিবেশ মানসম্মত নয়। সবকিছু মিলে হাজারো শিক্ষার্থী ও অভিভাবক রয়েছেন পরম দুশ্চিন্তায়।
বিশেষ করে নগরীর সরকারী কলেজ সমূহের বিজ্ঞান শাখায় মোট ৩৫০০ আসনের বিপরীতে প্রায় ৭৫,০০০ আবেদন যাচাই বাছাই করে প্রকাশিত এই ফলাফলে হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্নভংগ হয়েছে! এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া প্রায় ৮,০০০ বিজ্ঞান শিক্ষার্থী সরকারি কোন কলেজের তালিকায় আসেনি। তাই উদ্বিগ্ন অভিভাবকের একমাত্র চাওয়া বেসরকারি হলেও একটি ভালো কলেজ, যেখানে তার সন্তান নিরাপদে ও আত্মবিশ্বাসের সাথে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বছর শিক্ষা লাভ করবে।
পুনরায় অনিশ্চয়তা এড়াতে একাদশে ভর্তিতে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে সর্বনিন্ম ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করার সুযোগ থাকায় সর্বোচ্চ দশটি কলজে পছন্দক্রম দিয়ে আবদেন করার পরার্মশ আবারও দিয়েছেন শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহদেুল হক।
তবে হতাশার বিপরীতে আশার আলো হয়ে আসতে পারে বেশ কিছু বেসরকারি কলেজ। বন্দরনগরীর শিক্ষাসচেতন অভিভাবকদের কাছে সরকারি কলেজের পর দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় রয়েছে শিক্ষাবোর্ড অনুমোদিত চট্টগ্রাম ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ, সিডিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ অব সায়েন্স, বিজনেস এন্ড হিউমেনিটিজ, হাজেরা তজু ডিগ্রী কলেজ ইত্যাদি।
এ প্রসংগে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো. জাহেদুল হক বলেন, প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থী অনুপাতে কলেজে পর্যাপ্ত আসন রয়েছে। সংকট কেবল ভালো কলেজের আসন সংখ্যার। তবে শিক্ষাবোর্ড অনুমোদিত বেশ কিছু বেসরকারী কলেজ মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জন্য নগরীর একমাত্র বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ জাহেদ খান।
তিনি বলেন, প্রথম আবেদনে কলেজ পছন্দক্রম নির্বাচনে এসএসসিতে শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্ট বিবেচনায় না রাখা, কলেজের শিক্ষা পরিবেশ ও মান এবং বাসা থেকে দূরত্ব ইত্যাদি বিবেচনায় না আনার কারণে এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে! তাই ২য় আবেদনে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। না বুঝে পছন্দক্রম না দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় বিবেচনা করে দ্বিতীয় ধাপে আবদেন করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
তিনি আরও বলেন, সরকারি কলেজে পড়ার সুযোগ না পেলেও উন্নততর শিক্ষা পরিবেশ, নিয়মিত ক্লাস গ্রহণ, মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্লাসনির্ভর পাঠদান, মেধাবী শিক্ষকগণের তৈরী হ্যান্ডনোট, ছাত্রছাত্রীদের নিবিড় পরিচর্যা, দ্রুত সিলেবাস সমাপন ইত্যাদি ব্যতিক্রমী পাঠপদ্ধতি সম্পন্ন প্রাইভেট কলেজ চট্টগ্রামে রয়েছে। ফলে সে আগামী ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর ২য় বার আবেদন করার সময় পছন্দক্রমে যে কলেজের নাম প্রথমে রাখবে, সে কলেজেই ভর্তি হতে পারবে। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের সচেতন অভিভাবকমহলের আস্থা অর্জনকারী ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষামন্ত্রণালয় অনুমোদিত ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজ (EIIN-১৩৪৭৮০) হতে পারে অন্যতম পছন্দ।
চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজে এসএসসি-তে জিপিএ ৪.৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে এইচএসসি-তে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হচ্ছে! ২০২২ সালে ৩৯ জন এ+, ২০২৩ সালে ২০ জন এ+সহ পর্যন্ত মোট ১৫০০ জন এই কলেজ থেকে এ+/এ অর্জন করেছে।
কারণ অত্র কলেজে কোন শিক্ষা্র্থীকে বাহিরে প্রাইভেট পড়তে হয়না! আমরা নিজস্ব ক্রিয়েটিভ সিস্টেমের হ্যান্ডনোটের সাহয্যে এবং অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে জিপিএ বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে থাকি। এখান থেকে পাশ করে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার গৌরব অর্জন করছে প্রতিবছর। অতএব সরকারী বেসরকারী মুখ্য বিষয় নয় নিয়মিত ক্লাস করলে এবং মনেযোগী হলে প্রাইভেট কলেজ থেকেও ভালো ফলাফল করা সম্ভব।
উল্লেখ্য, প্রথম র্পযায়ে নির্বাচিতদের ভর্তি নিশ্চায়নের শেষে ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত ২য় পর্যায়ের আবেদন গ্রহণ করা হব। ২য় পর্যায়ের আবেদন গ্রহণ শেষে ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় প্রথম পর্যায়ের মাইগ্রেশনের ফল ও ২য় র্পযায়ে মনোনীতদের ফল প্রকাশ করা হবে।
এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের সচেতন অভিভাবকমহল আস্থা রাখছে প্রাইভেট ডিজিটাল কলেজগুলোর উপর, এমনটি জানিয়ে একজন অভিভাবক প্রকৌশলী আহমেদ কামাল বলেন, প্রাইভেট কলেজে পড়াতে হলে ডিজিটাল ক্লাসের সুযোগ রয়েছে এমন কলেজকে প্রধান্য দেয়া উচিত, যাতে শিক্ষার্থীর কাছে পাঠ সহজবোধ্য হয়। এর সাথে বিবেচনা করতে হবে কলেজ ক্যাম্পাসটি রাজনৈতিক কোলাহলমুক্ত কিনা এবং পরিবেশ শিক্ষাবান্ধব কিনা।