ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ২৫টি গ্রুপ। প্রতিটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা অন্তত ১২ থেকে ২০ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পরিবহন নেতৃবৃন্দ বলছেন, ডাকাতি প্রতিরোধ এবং ডাকাতের কবল থেকে যাত্রীদের রক্ষা করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ গতকাল অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সর্দারসহ চার ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব–৭। র্যাব–৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) তাপস কর্মকার বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে র্যাব অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাতচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করছে। শনিবার গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত দলটি হাইওয়ে এবং আন্তঃজেলা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তারা ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি করে মালামালসহ ঢাকার উদ্দেশ্যে গমন করে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘরমুখী সাধারণ মানুষের চলাচলের স্থানে পথচারীকে আটক করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাদেরকে জিম্মি করে মূল্যবান জিনিসপত্র, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা–পয়সা ৯ম পৃষ্ঠার ৭ম কলাম
ছিনতাই বা ডাকাতি করে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষ প্রায়ই মোটা অংকের টাকা নিয়ে চলাচল করে। বিশেষ করে যারা ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করে তাদেরকে টার্গেট করতো তারা।
জানা গেছে, মহাসড়কে বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক এবং প্রাইভেট পরিবহন প্রায় ডাকাতের কবলে পড়েছে। অভিযোগ, ডাকাতির ঘটনায় মামলা করতে গিয়ে হয়রানির ভয়ে অনেক ভুক্তভোগী থানায় যান না। এতে আড়ালেই থেকে যায় অনেক ঘটনা। পরিবহন মালিকগণ নাইট কোচে যাত্রীদের ভিডিও ধারণ, কাউন্টার ছাড়া যাত্রী না তোলা এবং যাত্রাপথে রেস্তোরাঁয় বিরতির পর আবার ভিডিও করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মহাসড়ক ছাড়া কোনো বাইপাস সড়ক বা স্থানীয় সড়ক ব্যবহার না করতে পরিবহন চালক–শ্রমিকদের নির্দেশ দেওয়া আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মহাসড়কে যারা ডাকাতি করে তারা দিনে ছোটখাটো পেশাজীবীর ছদ্মবেশে থাকে। তবে রাতের আঁধারে তারাই হয়ে উঠে ভয়ংকর। পণ্যবোঝাই ট্রাক অথবা কাভার্ড ভ্যান ছিনিয়ে নিয়ে তারা মালামাল বিক্রি করে দেয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়কে ডাকাতিতে ২৫টির বেশি ডাকাত গ্রুপ জড়িত। এরমধ্যে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৬–৭টি ডাকাত গ্রুপ সক্রিয়। মাইক্রোবাসে যাত্রী তুলেও তারা ডাকাতি করে।
মহাসড়কের ডাকাত গ্রুপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো– দিলীপ ওরফে সোহেল গ্রুপ, আবু জাফর গ্রুপ, মনু গ্রুপ, সাতক্ষীরা বিপ্লব গ্রুপ, বরিশাইল্যা বিল্লাল গ্রুপ, কুমিল্লা গ্রুপ, ময়মনসিংহ গ্রুপ, হুমায়ুন গ্রুপ, হীরা গ্রুপ, চিটাগাইংগ্যা নুরু গ্রুপ, রহিম গ্রুপ, শহিদ গ্রুপ, সিদ্দিক গ্রুপ, জহির গ্রুপ, ইসমাইল গ্রুপ, আজম গ্রুপ, হাবিব গ্রুপ, হক সাব গ্রুপ ও সরোয়ার গ্রুপ। প্রতিটি গ্রুপে ১২ থেকে ২০ জন ডাকাত রয়েছে। তাদের কাছে পিস্তল, রিভলভার ও চাইনিজ কুড়ালের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের দেশি অস্ত্রও থাকে। ডাকাতি করতে গিয়ে কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে তাকে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করে অন্যরা।
গ্রেপ্তারকৃত রব সাব গ্রুপের সদস্যরা জানিয়েছে, ডাকাতি করতে গিয়ে তারা ছয়টি কৌশল অবলম্বন করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে–যাত্রীবেশে বাসে উঠে ডাকাতি, রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে গাড়ি আটকে ডাকাতি, প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসে তুলে জিম্মি করে ডাকাতি, মহাসড়কে চলন্ত গাড়ির সামনের গ্লাসে ডিম ছুড়ে মারা, ঢিল মারা, কলাগাছে কাপড় পেছিয়ে লাশের মতো বানিয়ে রাস্তায় ফেলে গাড়ি আটকে ডাকাতি।
ডাকাতির ঘটনায় মামলা না নেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনায় বলা হয়– যে থানা এলাকায় ডাকাতির ঘটনা শুরু সেই থানাকে মামলা নিতে হবে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে মহাসড়কের নিরাপত্তায় অন্তত দেড় ডজন সুপারিশ করা হয়।
মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধে করণীয় নিয়ে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর, হাইওয়ে পুলিশ, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং রেঞ্জ পুলিশ একাধিক বৈঠক করেছে। বৈঠকগুলোতে উপস্থিত থাকা দুজন পুলিশ কর্মকর্তা আজাদীকে জানান, হাইওয়ে পুলিশের প্যাট্রলিং বাড়ানো, বাসগুলোতে জিপিএস ট্রেকার এবং আইপি ক্যামেরা বসিয়ে মনিটরিং করা, যাত্রীদের এনআইডি এবং মোবাইল ফোন নম্বর সংরক্ষণ, দূরপাল্লার বাসে যাত্রীদের ছবি তুলে রাখা, বাসের রুট পারমিট চেক করা, ডাকাতদের ডাটাবেজ তৈরি করা, এক রুটের বাস অন্য রুটে দেখলেই চেক করাসহ ১৮টি সুপারিশ করা হয়েছে।