কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে স্থাপনা নির্মাণ, টপ সয়েল কাটাসহ রাঙ্গুনিয়ায় নানা অব্যবস্থাপনার কারণে কমে আসছে আবাদি জমির পরিমাণ। এছাড়া সেচ সুবিধার অভাবে প্রতি মৌসুমে অনাবাদী থেকে যাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি। আধুনিক সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও এখনো অনেক কৃষি জমি বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করে বছরে মাত্র এক মৌসুমে আবাদ হচ্ছে। এসব জমিকে উন্নত সেচ ব্যবস্থার আওতায় আনা গেলে বছরে তিন মৌসুমেই আবাদ করা যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রান্তিক কৃষকরা। সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টায় তারা আবার মাঠে নামেন। তাদের রোপিত আমন ধান ক্ষেত বর্তমানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ৯ম পৃষ্ঠার ৭ম কলাম
গেছে। ক্ষেতের সবুজাভ চোখ জুড়ানো দৃশ্য এখন সবার মন কাড়ছে। কিন্তু বৃষ্টির পানির অভাবে সেচ সুবিধা না থাকা জমিগুলোতে সেচ দিতে কৃষকরা সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বেতাগী চম্পাতলি এলাকার কৃষকরা সনাতন সেঁউতি পদ্ধতিতে কৃষি জমিতে সেচ দিচ্ছেন। একটি ডুবায় জমে থাকা বৃষ্টির পানি বিশেষ পদ্ধতিতে সেচ দিয়ে কৃষি মাঠে ফেলছেন দুজন কৃষক। তারা বলেন, আধুনিক সেচ সুবিধার অভাবে এখনও তাদের নির্ভর করতে হয় পেশী নির্ভর প্রাচীন এই পদ্ধতির উপর।
রহিম উদ্দিন (৬০) নামে বেতাগী ইউনিয়নের স্থানীয় একজন কৃষক জানান, চম্পাতলি এলাকায় রয়েছে অন্তত ৬০০ কানি কৃষি জমি। যেখানে সেচ সুবিধার অভাবে বছরে একবার মাত্র চাষাবাদ হয়। আমন মৌসুমে এসব কৃষি মাঠের কৃষকরা চাষাবাদ করলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির পানি পাচ্ছেন না। ফলে কৃষি মাঠের একপাশে মাটি খনন করে ডুবা বানিয়ে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় সময়ে কৃষকরা সনাতন সেঁউতি পদ্ধতিতে কৃষি জমিতে সেচ দিয়ে থাকেন।
আবদুল কাদের (৫৫) নামে অন্য একজন কৃষক বলেন, ১০/১২ বছর আগে স্কিমের সাহায্যে কর্ণফুলী থেকে পানি এনে এই এলাকার কৃষকরা সেচ দিতো। তবে এখন তা বন্ধ, বৃষ্টি ছাড়া চাষাবাদ করা যায় না বলে বছরে এক মৌসুমে চাষাবাদ হয় এবং সারাবছর খালি পড়ে থাকে বিলগুলো।
বেতাগীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহজাহান জানান, কৃষি জমিগুলোতে এর আগে সরিষা আবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু সেচের অভাবে ৫০ কানি সরিষা আবাদ নষ্ট হয়ে যায়। তাই ড্রেন করে পরিকল্পিত সেচ সুবিধার আওতায় আনা গেলে কৃষি জমিগুলো থেকে বছরে তিন মৌসুমে চাষাবাদ করা যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, চলতি আমন মৌসুমে রাঙ্গুনিয়ার ১৫ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে কৃষকরা পুনরায় চাষাবাদ করে লক্ষমাত্রা অনুযায়ী আবাদ সম্পন্ন করেছেন। শুষ্ক মৌসুমে অনাবাদি থাকা কৃষি জমিগুলোকে পরিকল্পিত আধুনিক সেচ সুবিধার আওতায় এনে আবাদ করা হচ্ছে। সেচ সুবিধার আওতায় আনার কাজটা বিএডিসি কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে করা হয়। সেচ সুবিধার আওতায় আসায় এখন অনেক কৃষি জমিতে বছরে তিন মৌসুমে আবাদ হচ্ছে। রাঙ্গুনিয়ার শতভাগ কৃষি জমিকে আধুনিক সেচ সুবিধার আওতায় আনতে আমরা সহায়তা করে যাচ্ছি।