বাংলা সাহিত্যের দিকপালদের পদচারণায় মুখরিত চট্টগ্রাম

স্মৃতির শহর চট্টগ্রাম

কুমার প্রীতীশ বল | বুধবার , ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলা সাহিত্যের অনেক দিকপালের পদচারণায় বিভিন্ন সময়ে মুখরিত হয়েছিল আমার স্মৃতির শহর চট্টগ্রাম। তাঁদের কেউ ভ্রমণ বা অনুষ্ঠানে যোগদান করতে, কেউবা কর্মসূত্রে এসেছিলেন।

এঁদের মধ্যে একজন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ চট্টগ্রাম এসেছিলেন কবিভাস্কর শশাঙ্ক মোহন সেনের আমন্ত্রণে। কবিভাস্কর শশাঙ্ক মোহন সেনের স্ত্রী’র স্বামীকথা নামের স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ১৮৯৬ সালের জানুয়ারি মাসের কোনো একসময় কবিভাস্কর শশাঙ্ক মোহন সেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তাঁদের উভয়ের মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ আলোচনা হয়। চট্টগ্রামের নবীন চন্দ্র সেন ও নবীন চন্দ্র দাস রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ কবি ছিলেন। এঁেদর সঙ্গেও রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাঁদের সাহিত্যকর্মে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের চট্টগ্রামে আসার আগে থেকেই একটা মানসিক সংযোগ ছিল। রবীন্দ্রনাথের চট্টগ্রাম আগমন উপলক্ষে একটি সংবর্ধনা কমিটি গঠিত হয়। অর্ভ্যথনা কমিটির প্রধান ছিলেন যামিনীকান্ত সেন। যামিনীকান্ত সেন ছিলেন রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতির প্রথম পাঠক এবং রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবির প্রথম দর্শক। এ কমিটিতে কাজেম আলী মাস্টার প্রমুখও ছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ চট্টগ্রাম এসেছিলেন ১৯০৭ সালের ১৭ জুন। এদিন চট্টগ্রাম রেল স্টেশন অভ্যর্থনা কমিটি ফুল দিয়ে বিশেষভাবে সজ্জিত করেছিল। সারাদিন অনেক বৃষ্টি হয়েছিল। তারপরও সেদিন চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে অনেক লোকের সমাগম হয়। সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে কবিকে স্বাগত জানানো হয়। কবি সে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম কলেজের আইনের অধ্যাপক সাহিত্যিক রজনীকান্ত সেনের পার্সিভিল হিলের দি প্যারেড হাউজে চট্টগ্রামে সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে এক সভায় উপস্থিত ছিলেন। সে সভায় চট্টগ্রামের ৪৬ জন সাহিত্যিক ও সাহিত্যপ্রেমী উপস্থিত ছিলেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, নবীণ চন্দ্র সেন, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, শশাঙ্ক মোহন সেন, আবদুর রহমান দোভাষ, এম নাদের আলী, ব্রজমোহন সেন, শীলানন্দ মহাথের, কাজেম আলী মাস্টার, আব্দুল কুদ্দুস।

রেল স্টেশন থেকে কবিকে একটি পুষ্পসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় যামিনীকান্ত সেনের বাসায়। ঐ বাড়ির দোতলায় কবির রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা হয়। বাসাটি বর্তমান সময়ের জেনারেল হাসপাতালের পাহাড়ের উত্তর দিকে হাসপাতাল রোডে ছিল। যামিনীকান্ত সেনের বাবা কমলাকান্ত সেন চট্টগ্রামের মধ্যে প্রথম বি.এল. পাশ করেন। তিনি অনেক অর্থবিত্তের মালিক ছিলেন। চট্টগ্রামের সদরঘাটে লায়ন সিনেমা হল ছিল তাঁর নামেকমলাকান্ত থিয়েটার হল। তিনি এ হল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে কোলকাতার বাইরে এতো বড় হল আর ছিল না। শহরের গণ্যমান্য রাজনীতিবিদআমলাকবিসাহিত্যিকগণ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে যামিনীকান্ত সেনের বাসায় সেদিন এসেছিলেন। কবি সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সে রাতে চট্টগ্রামের আই.সি.এস. জজ বি.কে. মল্লিক কবির সম্মানে নৈশ ভোজের ব্যবস্থা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তা শুনে একটু হেসে বলেছিলেন, ‘ও আমার কাজ নয়।’ কবির সফরসঙ্গী সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র লেখক, অনুবাদক সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর কবির পক্ষে জজ সাহেবের নৈশ ভোজে অংশ নিয়েছিলেন।

পরেরদিন ১৮ জুন, রবীন্দ্রনাথ গিয়েছিলেন কর্ণফুলী নদী দেখতে। কবি একজন খালাসীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তখন জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমার চট্টগ্রাম কেমন দেশ?’ উত্তরে খালাসী বলেছিলেন, ‘বাবু এরকম স্থান জগতে আর নাই। মক্কামদিনার পরই আমরা চট্টগ্রামকে গণ্য করি।’ জন্মভূমির প্রতি এমন ভালোবাসায় কবি মুগ্ধ হয়েছিলেন।

সেদিনের বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় কমলাকান্ত থিয়েটার হল চট্টগ্রামের প্রগতিশীল রাজনীতিকসাহিত্যসংস্কৃতিপ্রেমীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। সভায় সভাপতিত্ব করেন যামিনীকান্ত সেন। পরিচয়পর্বের পর সংবর্ধনার জবাবে রবীন্দ্রনাথ চমৎকার একটা বক্তৃতা দেন। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো কবির কথা শুনেন। আলোচনা শেষ হলে কবিভাস্কর শশাঙ্ক মোহন সেনের পিতা ব্রজমোহন সেন কবিকে একটা গানের অনুরোধ জানান। কবির সঙ্গে কলকাতা থেকে আগতজনরা আপত্তি জানালেও তিনি সেদিন একটি গান শুনিয়েছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে চট্টগ্রাম ত্যাগের উদ্দেশ্যে কবি রেল স্টেশনে যখন আসেন, তখনও বৃষ্টি হচ্ছিল। সে রাতে অনেক জলকাদার মধ্যে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়েছিল। একসময় জনতা ‘বন্দেমাতরম’ গগনবিদারী স্লোগানে স্টেশন মুখর করে তোলে। রাত সাড়ে আটটার সময় কবি রেলে আবার বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। চট্টগ্রামে রবীন্দ্রনাথের সংবর্ধনা সম্পর্কে যামিনীকান্ত সেন স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথের অভ্যর্থনা হয় অতুলনীয়, কলিকাতার বাইরে যেযুগে এরূপ দৃশ্য দুর্লভ ছিল। সেকালে সাহিত্যিকরূপে এরূপ বিরাট অর্ঘ্য পাওয়া শুধু এখানেই (চট্টগ্রাম) সম্ভব ছিলো।’

বিদ্রোহী কবি নজরুল চট্টগ্রামে মোট চারবার এসেছিলেন। শেষবার যখন এসেছিলেন, তখন ছিলেন নির্বাক। নজরুল ১৯২৬ সালে প্রথম চট্টগ্রাম আসেন। রাজনীতিবিদ হেমন্ত কুমার সরকারের সঙ্গে ঢাকা হয়ে নজরুল চট্টগ্রাম আসেন। চট্টগ্রামে তাঁরা ডাকবাংলোতে ওঠেন। ক’দিন পর হেমন্ত কুমার সরকার কোলকাতা চলে গেলে নজরুল বন্ধু হাবীবুল্লাহ বাহারের আমন্ত্রণে তামাকুন্ডী লেইন আজিজ মঞ্জিলে ওঠেন। খান বাহাদুর আব্দুল আজীজ ছিলেন হাবীবুল্লাহ বাহারের মাতামহ। এবারে নজরুল এক মাসের বেশি সময় চট্টগ্রামে ছিলেন।

নজরুল ১৯২৯ সালে দ্বিতীয় বার আবার চট্টগ্রাম আসেন। সেবার তিনি এসেছিলেন চট্টগ্রাম মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি’র (বর্তমান এমইএস কলেজ) ত্রিশতম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে প্রধান অতিথি হিসেবে। তখন তিনি বন্ধু কমরেড মুজফফর আহম্মেদের বাড়ি সন্দ্বীপ সফর করেছিলেন। কবি মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, ‘নিখুঁত ছবির মতো তোমাদের দেশ।’ এখানে সংবর্ধনানুষ্ঠানে বক্তৃতার পাশাপাশি কবি গানকবিতাও শোনান। এছাড়াও বুলবুল সোসাইটি, কাট্টলী ইউনিয়ন ক্লাব ও হাটহাজারী থানার ফতেয়াবাদ গ্রামে আলম পরিবারের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। হাটহাজারী কবি এক রাত্রিযাপন করেছিলেন। কবি দিদারুল আলমের আমন্ত্রণে তিনি হাটহাজারী গিয়েছিলেন। এখানে অনেক মানুষ তাঁকে দেখতে এসেছিল। এবারেও নজরুল এক মাসের বেশি সময় হাবীবুল্লাহ বাহারের মাতামহের বাড়িতে ছিলেন।

নজরুল তৃতীয় বার চট্টগ্রাম আসেন ১৯৩২ সালে। সেবার তিনি রাউজানের একটি সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতে চট্টগ্রাম আসেন। পরেরদিন তিনি চট্টগ্রামে সাহিত্য সম্মেলনে যোগদান করেন। এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আবুদল কমির সাহিত্যবিশারদ। সেদিন নজরুল খদ্দরের পাঞ্জাবি, মাথায় ঝাঁকড়া বাবরি চুলের উপর খদ্দরের টুপি পরেছিলেন। তাঁকে একনজর দেখার জন্য অসংখ্য লোকের সমাগম হয়েছিল। এবার তিনি খুব কম সময় চট্টগ্রাম অবস্থান করেন। এবারও চট্টগ্রাম অবস্থানকালে তিনি বন্ধু হাবীবুল্লাহ বাহারের মাতামহের বাসায় ছিলেন। এটা ছিল তাঁর প্রিয় একটা আবাসস্থল। হাবীবুল্লাহ বাহার ও তাঁর বোন শামসুন নাহার মাহমুদ ছিলেন সাহিত্যসাংস্কৃতিক মনস্ক মানুষ। ভাইবোন দুজনেই নজরুলের প্রিয়পাত্র ছিলেন। তাঁদের কারণে নজরুল বারে বারে এ বাসায় ওঠতেন। নজরুলের সঙ্গে তাঁদের পত্র যোগাযোগও ছিল। এখানে নজরুল সারা রাত ধরে গান, কবিতা লিখতেন। সকাল হলে ওদের পড়ে শুনাতেন। কর্ণফুলী নদী ছিল কবির ভ্রমণের প্রিয় একটি স্থান। তিনি যুবকদের নিয়ে পাহাড় ও কর্ণফুলী নদীতে নৌবিহার করতেন।

চট্টগ্রামে নজরুলকে বিভিন্ন সময়ে সাহিত্যসংস্কৃতির পাশপাশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা সংবর্ধনা, সম্মাননা ও শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম হলো সূর্য সেন, অনন্ত সেন, জুলু সেন, অধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন, খান বাহাদুর আবদুস সাত্তার, আবদুল খালেক চৌধুরী, রায় বাহাদুর কুমার দাশ, জ্যোতি সম্পাদক মহিম চন্দ্র দাশ, রায়বাহাদুর কামিনী দাশ। শেষবার নজরুল চট্টগ্রাম এসেছিলেন ১৯৭৩ সালে সরকারি উদ্যোগে। তখন তিনি নির্বাক। উল্লেখ্য, এর আগে বঙ্গবন্ধু কবিকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। কবি আমৃত্যু ঢাকায় ছিলেন।

কিশোর কবি সুকান্ত কোনো এক কারণে ১৯৪৩ সালে চট্টগ্রামে এসেছিলেন। কবি চট্টগ্রামের কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে বসে লিখেছিলেন চট্টগ্রাম ১৯৪৩ কবিতা-‘ক্ষুধার্ত বাতাসে শুনি এখানে নিভৃত এক নাম চট্টগ্রাম: বীর চট্টগ্রাম

কবি অন্নদাশঙ্কর রায় একাধিকবার চট্টগ্রাম আসেন। প্রথমবার আসেন নবাগত আইসিএস অফিসারদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ১৯৩৩ সালে। কবির ‘যুক্তবঙ্গের স্মৃতি’ গ্রন্থে চট্টগ্রাম সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা আছে। তখন উঠেছিলেন সার্কিট হাউজে। এরপরে আসেন ১৯৩৭ সালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে। কিন্তু কলকাতা থেকে এতদূরে বদলিতে কবি মন খারাপ করেছিলেন। আত্মীয়স্বজন ছেড়ে এখানে বসবাসকে তিনি নির্বাসন মনে করেছিলেন। কবি প্রথমবার যখন এসেছিলেন, তখন চট্টগ্রাম বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে তপ্ত কড়াইয়ের মতো ফুটছিল। সর্বক্ষণ মিলিটারি পাহাড়ায় কাটিয়েছিলেন। এটাও তাঁর মন খারাপের একটি কারণ ছিল। তবে দ্বিতীয় বার তাঁর সেই বিধিবদ্ধ জীবনের অবসান ঘটে। তিনি চট্টগ্রামের সাহিত্যসংস্কৃতির স্বাদ গ্রহণ করতে পেরেছিলেন বন্ধনহীন উন্মুক্ত পদ্মার মতো। দ্বিতীয়বারে তাঁর ‘আবাস হলো কাছারি পাহাড়ের লাগানো টেম্পেস্ট হিলে। পাশে ফেয়ারী হিল। বাংলো থেকে স্পষ্ট দেখা যায় পূর্বদিকে রাঙামাটি অঞ্চলের শৈলমালা, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, মাঝখানে কর্ণফুলী নদী।’ চট্টগ্রামে থাকাকালীন তিনি পূরবী পত্রিকায় লিখতেন। তখন তিনি বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন সাহিত্যিক আশুতোষ চৌধুরী, প্রবর্তক সংঘের বঙ্কিম সেন, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী প্রমুখকে।

কবি পূর্ণেন্দু পত্রী চট্টগ্রাম এসেছিলেন ১৯৮৯ সালে। তিনি ঢাকা এসেছিলেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে ২১দিনের এক কর্মশালা পরিচালনা করতে। বইঘর প্রকাশনীর মালিক সৈয়দ মোহাম্মদ শফি’র আমন্ত্রণে তিনি চট্টগ্রাম এসেছিলেন। এখানে কবি গণায়ন নাট্য সম্প্রদায়ের ১৪ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তখন আবৃত্তি সংসদ চারদিন ব্যাপী তাঁর চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে। এসময় চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র সংসদ শিশু একাডেমী মিলনায়তনে তাঁকে সম্মাননা জানায়। স্বল্প সংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে তিনি চলচ্চিত্র বিষয়ক ভাবনা তুলে ধরেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে আমার একটি প্রতিবেদন দৈনিক আজাদী’র সমাজসংস্কৃতি বিভাগে সেসময় প্রকাশিত হয়েছিল। কবি শিশির দত্তের লেখা অপর একটি প্রতিবেদন দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। কবি চট্টগ্রামে অবস্থানকালে শিল্পী হাসি চক্রবর্তীর বাসায় চট্টগ্রামে বসবাসকারী শিল্পী সাহিত্যিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কবি শঙ্খ ঘোষ, কবি সুভাস মুখ্যোপাধ্যায়ও চট্টগ্রাম এসেছিলেন ।

বাংলা সাহিত্যের এসব দিকপালদের স্মৃতিঘেরা স্মৃতিচিহ্ন কালের গর্ভে আজ হারিয়ে গেছে। কবিগুরুর সফরের কোনো স্মৃতি চিহ্ন এখন আমার স্মৃতির শহর চট্টগ্রামে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। নেই জেনারেল হাসপাতালের পাহাড়ের উত্ত্‌রদিকে কমলাকান্ত সেনের সেই দ্বিতল বাড়ি, পার্সিভিল হিলের দি প্যারেড হাউজ, সদরঘাটের কমলাকান্তের থিয়েটার হল, যাকিনা পরে লায়ন সিনেমা হল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। এমনকী চট্টগ্রাম শহরের সেই রেলস্টেশন। তবে কধুরখীল স্কুলে সেই কক্ষটি বর্তমানে সুকান্ত কক্ষ হিসেবে কবির স্মৃতি বহন করে চলেছে। এছাড়া নজরুলের স্মৃতি রক্ষার্থে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজার এলাকায় একটি সড়কের নাম ও চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের বাংলা বিভাগের নজরুল পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের উল্লেখিত দিকপালের চট্টগ্রামে পদচারণার স্মৃতিচিহ্নগুলো যদি সংরক্ষণ করা যেত, আমাদের শিল্পসাহিত্যের ইতিহাস অনেক বেশি সমৃদ্ধ হতো। আজকের স্বপ্নকাতর কিশোরকিশোরী, তরুণতরুণীগণের কাছে আমার স্মৃতির শহর চট্টগ্রাম অনেকবেশি নন্দিত হতো।

তথ্যসূত্র : নিতাই সেন: চট্টগ্রামে রবীন্দ্রনাথ নজরুল ও অন্নদাশংকর, এফ.এম.মিজানুর রহমান : দ্য ডেইলি স্টার (বাংলা),জুন ২৯, ২০২২, দৈনিক আজাদী ২নভেম্বর ১৯৮৯।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার

পূর্ববর্তী নিবন্ধতারুণ্যের জয়গানে মুখরিত চারিদিক
পরবর্তী নিবন্ধআবদুর রহমান বাবুল