উত্তরা, টঙ্গী, আশুলিয়া কিংবা গাজীপুর থেকে যেসব গাড়ি ঢাকার কেন্দ্রের দিকে প্রবেশ করত, সেগুলোর নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল যানজট। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত পৌঁছাতে লেগে যেত দুই ঘণ্টার মতো। তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর বদলে গেছে এই চিত্র। এখন যেন নতুন এক ঢাকার দেখা মিলেছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত নির্ধারিত গতিতে যেতে এখন সময় লাগছে মাত্র ১০–১১ মিনিট। শনিবার বিকালে এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্সপ্রেসওয়েতে গতকাল সকাল ৬টা থেকে যান চলাচল চালু হয়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রথম ১১ ঘণ্টায় চলাচল করেছে ১০ হাজার ৮৫৪টি গাড়ি। এই সময়ে আট লাখ ৮৩ হাজার ৫২৯ টাকার টোল আদায় হয়েছে। খবর বাংলানিউজের। বিমানবন্দরের কাওলা র্যাম্প থেকে উঠেছে ছয় হাজার ৬১৬টি গাড়ি। কুড়িল থেকে উঠেছে এক হাজার ১৯৮টি, বনানী থেকে এক হাজার ৯১টি গাড়ি উঠেছে। আর বিজয় সরণি র্যাম্প ব্যবহার করেছে এক হাজার ৯৪৯টি গাড়ি। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল ম্যানেজার আমিনুল রাসেল এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করা গাড়ির মধ্যে অধিকাংশই প্রাইভেট কার। সরকারি–বেসরকারি কর্মজীবীদের বহনকারী অল্প কিছু বাসও চলেছে। দিনের প্রথমাংশে উত্তরার দিক থেকে আসা গাড়িগুলো সচিবালয় কিংবা মতিঝিলে যেতে বিমানবন্দরের কাওলা র্যাম্প ব্যবহার করেছে। বিকালের ফিরতি যাত্রায় এসব গাড়ি বনানী ও বিজয় সরণি র্যাম্প ব্যবহার করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী শফিকুল ইসলাম উত্তরার বাসা থেকে সকাল আটটায় বের হয়ে কাকরাইলের অফিসে পৌঁছেন সকাল ৯টার আগেই। অন্যদিন তার দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যেত। তবে আজকের সকালটা ছিল ব্যতিক্রম। তিনি বলেন, আমার জন্য সুবিধা হয়েছে, ফার্মগেট যেতে ৯–১০ মিনিট লেগেছে। এক ঘণ্টা সময়ের তুলনায় ৮০ টাকার টোল তেমন সমস্যা নয়। এখন ফার্মগেট থেকে কাকরাইল যেতে আরও এক ঘণ্টা লেগেছে। পুরো প্রকল্প চালু হলে বাসা থেকে অফিস যেতে তখন ১৫ মিনিট লাগবে। তখন বড় ভোগান্তির হাত থেকে বাঁচব।
গতকাল বিকালে কাওলা ও কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা সময়ে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপর বিভিন্ন প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ ছোট যানবাহন উঠছে এক্সপ্রেসওয়েতে।
প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, সকালে কাওলা ওই অংশ থেকেই বেশি যানবাহন শহরের দিকে ঢোকে। আবার বিকালে তেজগাঁওয়ের দিক থেকে বেশি যানবাহন যাবে। মাঝখানের পয়েন্টগুলো থেকেও কিছু যানবাহন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠছে। এখন পর্যন্ত মানুষ জানে না। মাত্র চলাচল শুরু হলো। আরও অনেক যানবাহন এটি ব্যবহার করবে আশা করি।
দ্রুত ছুটে চলছে গাড়ি : এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাধাহীন যাত্রায় বাংলানিউজের গাড়ি ৩টা ৩৪ মিনিটে বিমানবন্দরের কাওলা র্যাম্প থেকে ওঠে। ফার্মগেট পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১১ মিনিট। ৩টা ৪৫ মিনিটে ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনে নামে গাড়ি।
বাংলানিউজের গাড়ি ৬০ কিলোমিটার গতিতে চললেও অধিকাংশ গাড়ি বাধাহীন রাস্তায় ওভার স্পিডে চলছে। সারা বিশ্বের এক্সপ্রেসওয়ের গতিসীমা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার থেকে ১২০ কিলোমিটার। কিন্তু মানুষকে অভ্যস্ত করতে এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ ৬০ কিলোমিটার গতিতে চলার অনুমতি দিয়েছে। এরপর গতি বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, মাত্র আজই খোলা হলো। একটু সময় দিতে হবে। যে দুটি র্যাম্প বন্ধ আছে সেখানে কাজ চলছে। খুব তাড়াতাড়ি খুলে দেওয়া হবে। সময় এখনই বলা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের যে চুক্তি সেখানে সিএনজি বা মোটরসাইকেল উঠতে পারবে না। এটি কোথাও হয় না। এসবের গতির সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ের গতির পার্থক্য রয়েছে। শুরুতে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বলা হলেও এখানে ৮০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চলবে, যেটি সিএনজিতে সম্ভব নয়। তারপরেও আপাতত সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ের মূল যে উদ্দেশ্য সে অনুযায়ী এখন চার চাকার যানবাহন চলবে।