এক মানবতার ফেরিওয়ালার কথা বলি

জোবায়দা আক্তার চৌধুরী | রবিবার , ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হবার পর মানুষ বাঁচার আশায় দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পরেন। কেউ দেশে চিকিৎসা শুরু করে দেন আবার কেউ সুচিকিৎসা পাওয়ার আশায় বিদেশে পাড়ি জমান। আমাদের দেশ থেকে এমন অসংখ্য মানুষ মুম্বাই টাটা মেমোরিয়ালে চিকিৎসা সেবা নিতে যান। মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বাংলাদেশের রোগী ও তাদের স্বজনরা শুরুতে অনেকটা অসহায়ের মতো। আর এই অসহায় মানুষগুলোর বিপদের মুহূর্তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে দেখেছি বাংলাদেশের এক তরুণকে। তিনি সবার কাছে মানবতার ফেরিওয়ালা নামে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। মানুষের সুখদুঃখে, বিপদেআপদে তিনি নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এক কথায় তিনি একজন সেবক ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ। তাই আজ এই মানবতার ফেরিওয়ালাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।

মুম্বাই টাটায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে বাঙালিরা বিবিধ সমস্যায় পড়েন। প্রথমত ভাষা জটিলতা, টাটায় রেজিস্ট্রেশনসহ চিকিৎসা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় গাইড লাইন, থাকার ব্যাবস্থা এবং বিশেষ করে আর্থিক সংকট। কেউ চিকিৎসাকালীন সময় মারা গেলে সেই মৃতদেহ দেশে আনা অনেক ঝামেলাপূর্ণ। সেখানে না পাবেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব না পাড়াপ্রতিবেশী। আর সেই সকল দুঃসময়ে যদি একজন মানবিক মানুষ পাশে এসে দাঁড়ান তখন তাকে স্রষ্টার দূত ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না। তেমনি এক দূত মুম্বাই শহরের এক জনপ্রিয় পরিচিত মুখ আকরাম শেখ। তিনি আমাদের বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার কবিরহাট উপজেলার নবোত্তমপুর গ্রামের ছিদ্দীক উল্যাহ মাস্টার বাড়ির ওলি উদ্দিন ও হোসনে আরা বেগমের সুপুত্র। তিনি বাবামায়ের তৃতীয় সন্তান। হাজার হাজার ক্যান্সার যোদ্ধা বাঙালির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আকরাম শেখ।

অনেকের কাছে মনে হতে পারে বাংলাদেশের ছেলে মুম্বাই কীভাবে গেল? আমাকেও বেশ ভাবিয়েছিল কী করে বাংলাদেশের একটি অজপাড়া গায়ের ছেলে মুম্বাই এসে ক্যান্সার রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে এভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। যেখানে আত্মীয়তা বা পরিচয়ের কোনো বন্ধন নেই। শুধু নিজ দেশের মায়ায় জড়িয়ে দেশের মানুষের দুর্দশা সহ্য করতে না পেরে এভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আপনাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে মানুষটা হয়তো টাকার জন্য করছে। না। এটা ভাবলে সম্পূর্ণ মিথ্যে ধারণা পোষণ করবেন। আকরাম শেখ কে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। যাওয়ার পর থেকেই দেখে আসছি কোনো স্বার্থ ছাড়াই তিনি মানবসেবায় নিয়োজিত আছেন। একটা উদাহরণ দিয়েই বলি, যা আমি নিজ চোখে দেখেছি। আমরা তখন অবস্থান করছি হাজী ইসমাইল সেনিটেরিয়ামে। আমরা যে ফ্লোরে ছিলাম ঠিক তার উপর তলায় রাজশাহী থেকে আগত দুই বোন এসেছে। তাদের ভেতর একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত। তিনি হুইল চেয়ার ব্যবহার করেন। দেখা গেল টাটাতে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে তার ব্লক, স্লাইড প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু উনি সেটা চেন্নাই এ্যাপোলো হসপিটালে ফেলে এসেছেন। তখন এই আকরাম শেখ বিদেশ বিভুঁইয়ে এই দুই বোনকে বিনা স্বার্থে তাদের নিয়ে চেন্নাই দৌড়েছেন। এবং ব্লক স্লাইড নিয়ে আবার মুম্বাই ফিরেছেন। আপনারাই বলুন এমনটা কেউ করবে? আজকাল টাকা দিয়েও এমন সেবা পাওয়া অসম্ভব।

আকরাম শেখের সঙ্গে আলাপ করে জেনেছি, ২০১২ সালের শুরুর দিকে প্রথমবারের মতো তিনি মুম্বাই যান। তখন কুরআনে হাফেজ থাকায় ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মুম্বাই এ একটা মসজিদে তিনি মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন বাসার বাচ্চাদের কুরআন শিক্ষা দিতেন। আনুমানিক ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে রাজশাহীর শামিম নামের এক ভদ্রলোক ঐ মসজিদে যান নামাজের উদ্দেশ্যে। শামীম সাহেব তাঁর ক্যান্সার আক্রান্ত ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে যান। আকরাম শেখের সাথে মসজিদে পরিচয় হবার পর শামীম সাহেব জানালেন তাঁরা কেউ হিন্দি/ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী না বিধায় ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গিয়ে নানাবিধ ঝামেলায় পড়েছেন। তখন আকরাম শেখ কে অনুরোধ করেছিলেন, যেন তাঁদের সাথে টাটা হসপিটালে গিয়ে একটু ডাক্তারের সাথে কথা বলিয়ে দেন। নিজের দেশের মানুষের এমন দুর্দশা দেখে তাঁর তখন বেশ মায়া হলো এবং সাথে সাথে তিনি চলে যান হসপিটালে শামীম সাহেবের সাথে। তারপর প্রথমেই তাঁদের ডাক্তারের সাথে কথা বলিয়ে দেন। সাথে সবগুলো টেস্টের রিপোর্ট ডাক্তারের থেকে শুনে রোগী ও এটেনডেন্স কে বাংলায় বুঝিয়ে দেন।

আকরাম শেখ মুম্বাই টাটায় যেয়ে দেখেন শামিম সাহেব ছাড়াও সেখানে অনেক অনেক বাংলাদেশী ভাইবোন। তারা ভাষা জটিলতা ছাড়াও নানাবিধ ঝামেলায় জর্জরিত। শামিম সাহেব পরিচিত বাংলাদেশী ভাইবোনদের সাথে আকরাম শেখকে পরিচয় করিয়ে দেন। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আস্তে আস্তে অনেক লোকের সাথে পরিচিত হয়ে গেলেন তিনি। একেকজন একেকভাবে তাকে তাদের সমস্যাগুলোর কথা বলে। কোথাও কিছু বুঝতে না পারলে আকরাম শেখের কাছে দৌড়ে আসেন সাহায্যের আশায়। আকরাম শেখ তখন তার সাধ্যানুযায়ী তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেন এবং তখন থেকেই বাংলাদেশ থেকে ছুটে যাওয়া ক্যান্সার যোদ্ধা হাজারো বাঙালী ভাইবোনদের পাশে এসে দাঁড়ান এবং সেই থেকে ক্যান্সার রোগী বা ক্যান্সারের সাথে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশী ভাইবোনদের নিয়ে এভাবেই আকরাম শেখের যাত্রা শুরু। এভাবেই তিনি ক্যান্সার যোদ্ধা হাজারো বাঙালি ভাইবোনদের মনে গেঁথে আছেন প্রদীপ শিখার মতো আশার আলো হয়ে আছেন।

ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য আকরাম শেখের কাজগুলো না বললেই নয়। তাই একটু ব্যাখ্যা করেই বলি।

আমাদের দেশে অনেকেই সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পান না। কখনো তাদের অগ্যতার কারণে কখনো ভুল জায়গায় চিকিৎসা নেবার কারণে। তাছাড়া কিছু অসাধু হসপিটাল কর্তৃপক্ষের স্বার্থপরতার জন্য অনেক রোগী সঠিক চিকিৎসাটুকুও পায় না। অথচ বাংলাদেশেও ক্যান্সারের সুচিকিৎসা হয়।

মুম্বাই এ অবস্থিত টাটা মেমোরিয়াল হসপিটাল ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য খুবই ভালো একটা হসপিটাল। সবাই এখানে ভালো একটা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে আসেন। এখানে সবাই যেরকম চিকিৎসার জন্য আসেন ঠিক তেমনিভাবে এখানকার মেডিসিন গুলোর ব্যাপারেও সবাই আগ্রহী। বাংলাদেশের তুলনায় মুম্বাই টাটায় মেডিসিন এর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক কম ও ভালো বিধায় সবাই টাটা থেকেই মেডিসিন ক্রয় করে থাকেন। এখানে চিকিৎসা করাতে আসা প্রায় সব রোগীরাই মুম্বাই টাটার মেডিসিনের উপর নির্ভরশীল। তাই যখনই পরিচিত কারো কোনো প্রকার মেডিসিন এর দরকার হয় তখনই তারা আকরাম শেখের স্মরণাপন্ন হন। যেসব মেডিসিন এর প্রয়োজন হয় দেশ থেকে তখন হোয়াটস অ্যাপ বা ম্যাসেঞ্জারে প্রেসক্রিপশন পাঠিয়ে দেন আকরাম শেখের কাছে। আর আকরাম শেখ খুবই গুরুত্বের সাথে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরেই টাটা থেকে সেই মেডিসিন সংগ্রহ করেন। প্রায় প্রতিদিনই মুম্বাই থেকে বাংলাদেশে আসাযাওয়া করেন এমন বাঙালীর হাতে সেই মেডিসিন দেশে পাঠিয়ে দেন। নতুন কেউ মুম্বাই এলে তাদের চাহিদা অনুযায়ী বাসা নিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে হসপিটালে রেজিষ্ট্রেশন, ডাক্তারের এপোয়েন্টমেন্ট নেওয়া,দোভাষী ঠিক করে দেওয়া, মেডিকেল ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক সিস্টেম দেখানো ছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষকে সরাসরি অথবা অন্য কারো মাধ্যমে নিজের সাধ্যানুযায়ী সঠিক পথটা দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। দেখা যায় আমাদের দেশী ভাইবোন যারা মুম্বাই টাটায় চিকিৎসা নিতে যান, তারা ব্লকস্লাইড সাথে না নিয়েই চলে যান। এদের ভেতর অনেকেই জানেন না, শুরুতেই টাটায় ব্লক স্লাইডের প্রয়োজন হয়। তখন দেশ থেকে ব্লক স্লাইড নেয়া অথবা দেশে আনার প্রয়োজন হলে মানবতার ফেরিওয়ালা এই আকরাম শেখই সহায়তা করে থাকেন।

এরপর আসি চিকিৎসা চলাকালীন সময় ভারতে কেউ মারা গেলে আকরাম শেখ কীভাবে বাঙালী ভাইবোনদের সহায়তা করেন। ভারতে চিকিৎসাকালীন সময় কেউ মারা গেলে মৃতদেহ দেশে আনা অনেক ঝামেলার ব্যাপার।

প্রথমে হসপিটাল থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নেন। তারপর যে ডাক্তারের তত্তাবধানে রোগী থাকে তার সহযোগিতা নিয়ে ডেথ সার্টিফিকেট এর অরিজিনাল এবং ফটোকপি, পেশেন্ট ও তার এটেনডেন্সের পাসপোর্ট এর অরিজিনাল এবং ফটোকপি নিয়ে নিটকস্থ পুলিশ স্টেশনে গিয়ে সেখান থেকে পুলিশ এর এন..সি কালেক্ট করেন। তারপরে ডেথ সার্টিফিকেট, এন.. সি এবং পাসপোর্ট(অরিজিনাল ও ফটোকপি) নিয়ে নিকটস্থ হাই কমিশনে গিয়ে পেশেন্ট এর মূল পাসপোর্ট ক্যান্সেল করে সেখান থেকে আরো একটি এন..সি কালেক্ট করেন।

এবার উপরোক্ত ডকুমেন্টস গুলো নিয়ে চলে যান FRRO তে। সেখানে গিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করার পর মোটামুটি কাজ শেষ। এরপরে PEACE HEAVEN অথবা এরকম কোনো অর্গানাইজেশন এর সাথে কথা বলে মৃতদেহ PRESERVATION করে EMBALMING CERTIFICATE সংগ্রহ করেন। সর্বোপরি মৃতদেহটি বাই রোড কিংবা বাই এয়ারে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

ক্যান্সার রোগীদের নিয়ে চলার পথে অনেক ঘটনাই ঘটেছে আকরাম শেখের সাথে। তবে সবচেয়ে স্মরণীয় এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিলো মহামারী করোনার সময়। ২০২০ সালে প্রথমে পুরো বিশ্বে যখন করোনা মহামারীর বিস্তার শুরু হয় তখন ভারতে এর ব্যাপক আকার ধারণ করে। সরকার লকডাউন চালু করে। বিনা কারণে রাস্তায় বের হলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে দিত। এমন পরিস্থিতিতে টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে চিকিৎসারত আইনজীবী কামরুন নাহারের বড় বোন শিউলি আক্তার মারা যান। তাঁদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। মারা যাওয়ার পর এই মহামারীর মধ্যে লাশটা বাংলাদেশে নেওয়া নিয়ে তাঁরা খুব চিন্তায় পড়ে যান। একে তো মহিলা মানুষ সাথে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। তখন টাটা হসপিটালের পাশে হাজী ইসমাইল সেনিটোরিয়াম। যেখানে হসপিটালের চিকিৎসা করাতে আসা অনেক মানুষ বাসা ভাড়া করে সেখানে থাকেন। সেনিটেরিয়ামের অনেক ভাই আকরাম শেখ কে অনুরোধ করলেন উনি যেন কামরুন নাহারের বোনের লাশটা বাংলাদেশে নিয়ে আনার ব্যাবস্থা করেন। আকরাম শেখ তখন দেশী ভাইবোনদের মায়া ও দায়িত্ববোধ থেকে তাদের অনুরোধ ফেলতে পারেননি। পরে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মৃতদেহ ও তাদের স্বজনদের নিয়ে এম্বুলেন্স যোগে বেনাপোল পর্যন্ত নিয়ে যান। পথে পথে চেক পোস্ট। তাদের সাথে সঠিক ডকুমেন্টস থাকার কারণে এই নিয়ে তেমন কোনো ঝামেলা হয়নি। রাস্তায় তখন প্রচুর গরম ছিল। ক্ষুধা লাগলে খাওয়ার মতো কিছু কেনা যায়নি। লকডাউনের কারণে দোকানপাট সব বন্ধ ছিল। একরকম না খেয়েই দিন কাটিয়েছিল। কিছু সবজির দোকান খোলা থাকাতে শুধু শসা কিনে দিন পার করেছিল কেবল। অবশেষে শত কষ্টের ভেতর প্রায় ৩৫/৩৬ ঘন্টা জার্নি করে তাদের বর্ডার পার করে দেন। পরে সেই এম্বুলেন্স যোগে তিনি মুম্বাই ফিরে আসেন ঠিক একই ভাবে। ঠিক এরকম আরো একটা ঘটনা ঘটেছিলো প্রিতম নামের এক হিন্দু ভাইয়ের সাথে। শিউলি আক্তারের ঘটনার কিছুদিন পর প্রিতমের চিকিৎসারত মামাও মারা যায়। প্রিতম একা লাশের সাথে যেতে ভয় পাচ্ছিলো। তাদেরকেও ঠিক একই ভাবে এম্বুলেন্স যোগে আখাউড়া বর্ডার পর্যন্ত নিয়ে যান তিনি রীতিমতো কঠিন লকডাউন ভেতর। তখনও তার কষ্টের সীমা ছিল না।

আবার দেখা যায় বাংলাদেশের অনেক মানুষই আর্থিকভাবে সচ্ছল না। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ ফ্যামিলিই অসচ্ছল। এমনিতেই ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল তার উপর ক্যান্সার আক্রান্ত অনেকেই দেশের বাহিরে চিকিৎসা করাতে পারে না। এমন অনেক ঘটনা আছে নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাটের কয়েকটা ফ্যামিলি আর্থিকভাবে অসচ্ছল হলেও এখানে চিকিৎসা করাতে আসে। কারণ বাঁচার প্রবল ইচ্ছা সবারই আছে। তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় হসপিটালে রেজিস্ট্রেশন করানোর পর কয়েকটি কেমো দিয়ে আর টাকার জোগান থাকে না তাদের কাছে। এদিকে ১৪/১৫ দিন পর পর তাদের কেমো দিতে হবে।একটা কেমো দিতে ৭৮ হাজার রূপি করে লাগে। টাকার জোগান করতে গিয়ে তারা বাসায় থাকাও ছেড়ে দেয়। রাস্তার ধারে ফুটফাটে শত রোদ বৃষ্টির মধ্যে দিন অতিবাহিত করেছিল তারা। এই খবর আকরাম শেখের কানে পৌঁছলে তিনি চিন্তা করেন, তারই বাংলাদেশি ভাইবোনরা চিকিৎসা করাতে এসে টাকার অভাবে রাস্তায় থাকছে। এরপর তাদের কাছে গিয়ে তাদেরকে বাসায় থাকার অনুরোধ করেন। তাদের ভাষ্যমতে তারা বাসায় থাকলে কেমোর টাকার ঘাটতি হবে না। টাটা গ্রুপে পোস্ট দিয়ে মানুষ থেকে টাকা সংগ্রহ করে তাদের বাসা ভাড়া করে দেন, কেমো সম্পন্ন করে দেশে ফেরার টিকেট করে দেন। আকরাম শেখের জীবনে এমন ঘটনা অনেক আছে। যা বলে প্রকাশ করা যাবে না।এই যুগে এমন মানবিক মানুষের বড়ই অভাব।

সর্বোপরি বলতে চাই মানবসেবায় নিয়োজিত অক্লান্ত পরিশ্রমী আকরাম শেখ কে দেখে এমন অসংখ্য আকরাম শেখ তৈরী হোক সর্বস্তরে এবং জগতের সকল ক্যান্সার যোদ্ধাদের মুখে হাসি ফুটুক এই শুভ কামনা। আর আকরাম শেখ এর প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও কথাসাহিত্যিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশ হতে দেশান্তরে
পরবর্তী নিবন্ধদূরের দুরবিনে