কক্সবাজারের টেকনাফে বনবিভাগের অপহৃত তিন বনপ্রহরীর পরিবার থেকে জনপ্রতি ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে পাহাড়ি দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার সকালে অপহরণকারীরা অপহৃত মোহাম্মদ শাকেরের মায়ের মুঠোফোনে কল দিয়ে ২০ লাখ টাকা ও অপহৃত মোহাম্মদ রহিমের বাড়িতে তার রেখে যাওয়া মুঠোফোনে কল দিয়ে একই অংকের মুক্তিপণ দাবি করেছে বলে জানা গেছে। আরেক অপহৃত আবদুর রহমানের আত্মীয়–স্বজনের কাছে এখনো মুক্তিপণ দাবি করেনি। অপহৃত মোহাম্মদ শাকেরের বড় ছেলে মোহাম্মদ আয়ুব জানান, সকালে মায়ের মুঠোফোনে দুর্বৃত্তরা ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না দিলে মেরে ফেলবে বলেও জানায়। তাদেরকে শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছে। মুঠোফোনে সেই চিৎকার শুনানো হচ্ছে। এদিকে এ ঘটনায় পুরো এলাকার বাসিন্দারা উদ্বেগ ও আতংকের মধ্যে রয়েছে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ন্যাচার পার্কের বনপাহারা দিতে গিয়ে তিনজনই নিখোঁজ হয়েছিলেন। তাদের খুঁজতে বনবিভাগ ও স্থানীয়রা বিকালে পাহাড়ে অভিযান চালায়। নিখোঁজ তিনজন হলেন, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়ার এলাকায় বাসিন্দা ও সিপিজি বনপাহারা দলের সদস্য আবদুল মালেকের পুত্র মোহাম্মদ শাকের (২৪), মৃত আবদুল শুক্কুরের পুত্র আব্দুর রহিম (৩৭) ও মৃত বকসু মিয়ার পুত্র আব্দুর রহমান (৩২)।
কোথাও খোঁজ খবর না পেয়ে রাতেই টেকনাফ মডেল থানায় আবদুল মালেক বাদী হয়ে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। গত শুক্রবার সকাল আটটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত তারা উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মোচনী বিটের নেচার পার্ক বনে পাহারা দেওয়ার কথা ছিল। পাহারা দিতে গিয়ে তিনজন নিখোঁজ হন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নেচারপার্ক মোচনী বন পাহারা দলের সভাপতি মোহাম্মদ ওসমান। নিখোঁজ তিনজনের পরিবার সূত্র জানায়, শুক্রবার সকালে বনপাহারা দেওয়ার জন্য মোহাম্মদ শাকের, আব্দুর রহিম ও আব্দুর রহমান তারা তিনজন বনের ভিতর ঢুকেন। কিন্তু তারা বেলা ১১টার দিকে ফেরত আসার কথা থাকলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের কোনো ধরনের খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি এবং তাদের হাতে থাকা মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এতে করে পরিবারের লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অবশেষে গতকাল সকালে দুবৃর্ত্তরা মুঠোফোনে মুক্তিপণ দাবি করে।
এ ব্যাপারে বনবিভাগের টেকনাফ রেঞ্জ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলার হ্নীলার মোচনী বিটের আওতাধীন বন পাহারা দলের সিপিজি ৩৭ জন সদস্য রয়েছেন। এ পাহারা দলের সদস্যরা দৈনিক সকাল ও বিকেল দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে বনে পাহারা দিয়ে আসছিলেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের কোনো ধরনের খোঁজ খবর না পেয়ে বনবিভাগের অপরাপর সদস্য ও বনকর্মীদের নিয়ে বিকেলে পাহাড়ে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।
টেকনাফ মডেল থানার (ওসি) মোহাম্মদ জুবাইর সৈয়দ জানান, এ ব্যাপারে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছে। পুলিশ তাদের উদ্ধারে কাজ করছে।
এদিকে স্থানীয় মেম্বার মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে শতাধিক স্থানীয় লোকজন ও বন পাহারা দলের অর্ধ শতাধিক সদস্য পাহাড়ে অভিযান চালায়।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের কয়েকটি দুর্বৃত্তদল সশস্ত্রভাবে পাহাড়ে অবস্থান করে প্রতিনিয়ত অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। মুক্তিপণ না দিলে হত্যা করছে। গত ২৬ আগস্ট জাফর আলম নামে এক রাখালকে গুলি করে হত্যা করে এবং গত সোমবার নুরুল আবছার নামে এক যুবককে অপহরণ করলে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসে।
রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের অপহরণ করে পাহাড়ে তাদের আস্তানায় নিয়ে গিয়ে মারধর ও নির্যাতন চালায়। তাদের বিরুদ্ধে আইন শৃংখলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চালানোর জোর দাবি জানান টেকনাফবাসী ও সচেতন মহল।