স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও একুশে পদক প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেছেন, মায়ের ভাষা শুদ্ধ করে বলতে পারা পুণ্যের কাজ। মাতৃভাষার শুদ্ধ উচ্চারণে উদ্বুদ্ধ করতে আবৃত্তি শিক্ষকদের অবদান রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ১০ নম্বরের জন্য বাংলা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণ শেখাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ পাঠক কবিতা পড়তে পারেন না বা বোঝেন না। এ কাজটা আবৃত্তিকাররা সহজতর করে তুলেছেন। এতে স্কুল কলেজের বাংলার শিক্ষকদের পাঠদান ও শিক্ষাগ্রহণ সহজ হয়ে উঠেছে। আবৃত্তি রুচিশীল মানুষের শিল্প। এই শিল্প সুন্দরের চর্চা করতে শেখায়। সুন্দর ও শুদ্ধ করে কথা বলতে শেখায়। আমরা সবাই এখনও সুন্দর ও শুদ্ধ করে মাতৃভাষার উচ্চারণ করতে পারি না। এক্ষেত্রে যা কিছু অগ্রগতি হয়েছে তাতে আবৃত্তি সংগঠনগুলোর অবদান রয়েছে। আর ক্বণন চট্টগ্রামে দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে কাজটা সাফল্যের সাথে করে যাচ্ছে, যা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। চট্টগ্রামে ক্বণন’র মত আরো যে কয়টি সংগঠন এমন সুন্দর কাজ করে যাচ্ছে তাদেরকে দৈনিক আজাদী আন্তরিকভাবে উৎসাহিত করে। কারণ আমরা মনেপ্রাণে চাই চট্টগ্রাম সত্যিকার অর্থে একটি সংস্কৃতি–বান্ধব নগরীতে পরিণত হোক।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ক্বণন শুদ্ধতম আবৃত্তি অঙ্গনের ৭৩–তম আবৃত্তি কর্মশালার সনদ প্রদান ও মা–কে নিবেদিত আবৃত্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ক্বণন সভাপতি ও আবৃত্তি প্রশিক্ষক মোসতাক খন্দকারের সভাপতিত্বে এ আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী ও প্রশিক্ষক অরুণ ভদ্র এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর শিক্ষক, আবৃত্তি শিল্পী রুম্মান মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্বণন সদস্য আবৃত্তি শিল্পী ও লেখক সৌভিক চৌধুরী। ক্বণন সদস্য আবৃত্তি শিল্পী শুভ্রা চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শিশু–কিশোর শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কর্মশালার অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন সুজন কর, শামীমা আক্তার ও জবাশ্রী দেব ধর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক আরো বলেন, ক্বণন তিন যুগের অধিক সময় ধরে আবৃত্তি চর্চা এবং এই শিল্পের প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে তাদের এই কাজ কয়েকটা প্রজন্মকে বিপথে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছে। এটা শুধু শুদ্ধ আবৃত্তির জন্য নয়, শুদ্ধ সমাজ বিনির্মাণেও ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, ক্বণন’র এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। শিল্পের জয় হোক, ক্বণন শতায়ু হোক, চট্টগ্রামের সমৃদ্ধি ঘটুক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাচিক শিল্পী ও প্রশিক্ষক অরুণ ভদ্র বলেন, চট্টগ্রামের আবৃত্তি অঙ্গনে আজকের যে প্রসার তার নেপথ্যে যে ক’জনের নাম উল্লেখ করা যায়, তাদের মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল নাম মোসতাক খন্দকার। তিনি তিন যুগেরও বেশি সময় এই চর্চার সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। তার হাত ধরে অনেকেই আবৃত্তি শিল্পের বৃহত্তর অঙ্গনে এবং গণমাধ্যমে আজ প্রতিষ্ঠিত। তিনি বলেন, ক্বণন শুধু আবৃত্তি প্রশিক্ষণ দেয়না, একজন শুদ্ধ মানুষ হিসাবে গড়ে উঠতে প্রেরণা যোগায়। এই সংগঠনে যথার্থ অর্থে গুরুমুখী শিক্ষা রয়েছে। তাই এই সংগঠনকে ৩৮ বছর অন্যান্য আবৃত্তি সংগঠনের মত করুণ পরিণতির শিকার হতে হয় নি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর শিক্ষক, আবৃত্তি শিল্পী রুম্মান মাহমুদ বলেন, একটি আবৃত্তি সংগঠন আটত্রিশ বছর টিকে থাকার এমন নজির ঢাকায়ও নেই। আমি ঢাকায় থাকার সুবাদে রাজধানীর শিক্ষা হিসাবে নিজেকে সমৃদ্ধ করবো ভেবে দু একটি নামকরা আবৃত্তি সংগঠনে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি খুব হতাশ হয়েছি। ক্বণনে যা শেখানো হয় ঢাকায় তার ছিটেফোঁটাও নেই।
আলোচনাপর্ব শেষে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের হাতে সনদ তুলে দেন অতিথিরা। পরে মোসতাক খন্দকারের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় মা–কে নিবেদিত ‘তবুও আমার মা’ শীর্ষক বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করে ক্বণন সদস্য শুভ্রা, ইব্রাহীম, সুস্মিতা, আহমদউল্লাহ, মেহজাবিন, সমৃদ্ধ, আফরা, ইবরার ও রাইয়ান। একক আবৃত্তি পরিবেশন করে সৌভিক চৌধুরী, ইমরানুল হক, শরীফ মাহমুদ, প্রেমা চৌধুরী, মিজানুর রহমান, শুভ্রা চক্রবর্তী, সুস্মিতা চৌধুরী, ইব্রাহীম মাহমুদ, আহমদউল্লাহ, মেহজাবিন রুশনী, সমৃদ্ধ ধর আর্দি, আসলিরাফ সাইফান রহমান, আফরা আনাম আরোহী ও জাবির আহমেদ চৌধুরী। এরপর আমন্ত্রিত শিল্পী হিসাবে আবৃত্তি পরিবেশন করেন বিশিষ্ট আবৃত্তি শিল্পী রুম্মান মাহমুদ।