প্রায় চার বছর ধরে বিকল (ডেড) থাকার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মধ্যকার টেলিফোনের আন্তঃসংযোগ (পিএবিএক্স) অবশেষে ফের সচল হচ্ছে। এরই মাঝে হাসপাতাল জুড়ে পিএবিএক্স–এর নতুন সংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি কেয়ার (ওসেক), আইসিইউ, প্রশাসনিক অফিস এবং ৪৬টি ওয়ার্ডসহ হাসপাতালে সবমিলিয়ে (শতাধিক) ১২০টি সংযোগ নতুন করে দেয়া হচ্ছে।
স্থাপনের কাজ শেষে এক মাসের মধ্যেই নতুন এই পিএবিএক্স সংযোগ চালু হবে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।
এর আগে প্রায় চার বছর ধরে পিএবিএক্স অচল থাকায় প্রায় অর্ধশত ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক–নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীর সাথে ইন্টারনাল যোগাযোগের সুযোগ ছিলনা হাসপাতাল প্রশাসনের। এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডেও যোগাযোগের সুবিধা ছিল না। বলতে গেলে মোবাইলই একমাত্র ভরসা। কিন্তু পিএবিএক্স–চালু না থাকায় জরুরি মুহূর্তে ওয়ার্ডে কারা দায়িত্বে আছেন, সেটিও তাৎক্ষণিক জানার সুযোগ নেই। এতে চিকিৎসা সেবাসহ সার্বিক কার্যক্রম তদারকিতে নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছিল হাসপাতাল প্রশাসনকে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। রোগীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ নিয়ে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি ‘চমেক হাসপাতাল : পিএবিএক্স ডেড সাড়ে তিন বছর/ ওয়ার্ডের সাথে ইন্টারনাল যোগাযোগের সুযোগ নেই হাসপাতাল প্রশাসনের’ শিরোনামে প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক আজাদী। পিএবিএক্স অচল থাকায় ইন্টারনালি যোগাযোগে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে স্বীকার করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান ওই প্রতিবেদনে বলেছিলেন, পিএবিএক্স চালু থাকলে ওয়ার্ডগুলোতে ইন্টারনালি যোগাযোগে সুবিধা হতো। অচল থাকায় যোগাযোগে আমাদের কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। এর প্রয়োজনীয়তাও আমরা ফিল করছি। যার কারণে এই পিএবিএক্স চালুকরণে উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়েছিলেন হাসপাতাল পরিচালক। এ নিয়ে টেশিসকে (টেলিফোন শিল্প সংস্থা) চিঠি দেয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।
চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে বর্তমানে ৪৬টি ওয়ার্ড রয়েছে। এসব ওয়ার্ড ও প্রশাসনিক কার্যালয়ের মধ্যকার ইন্টারনাল যোগাযোগের সুবিধার্থে ২০১৭ সালের দিকে একটি ডিজিটাল পিএবিএঙ স্থাপন করা হয়। হাসপাতালজুড়ে এর প্রায় পাঁচশ লাইন (সংযোগ) দেয়া হয়। তবে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই থেকে এই সংযোগ অকেজো হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মেশিনটি অচল হয়ে পড়ে বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। অচল এই পিএবিএঙ সচলকরণে ওই বছরের (২০১৯ সালের) ৫ আগস্ট টেশিস–এর জেনারেল ম্যানেজার বরাবর চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে
অচল পিএবিএঙ মেশিনটি জরুরি ভিত্তিতে সচলকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। তবে টেশিস–এর পক্ষ থেকে পরবর্তীতে মেশিনটি রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি নবায়নের কথা বলা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে মেশিন রক্ষণাবেক্ষণের ওই চুক্তি স্থগিত করে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীরের স্বাক্ষরে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়। এরপর পিএবিএঙটি চালুকরণে কোনো উদ্যোগের তথ্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে দৈনিক আজাদীর প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর অকেজো পিএবিএঙটি সচলকরণে চলতি বছর উদ্যোগ গ্রহণ করেন হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক। এ নিয়ে টেশিস–কে চিঠি দেয়ার পাশাপাশি মোবাইলেও কথা বলেন। এর প্রেক্ষিতে নতুন করে পিএবিএঙ সংযোগ স্থাপনে একটি প্রস্তাবনা দেয় টেশিস। তবে টেশিস এর পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেসরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা সংগ্রহ করে। সর্বশেষ বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে নতুন পিএবিএঙ সংযোগ চালুর চুক্তি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পিএবিএঙ–এর নতুন সংযোগে প্রায় ১৪ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। যাচাই–বাছাইয়ের মাধ্যমে সবচেয়ে কম টাকা দাবি করা প্রতিষ্ঠানের সাথে এ চুক্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। তিনি বলেন, আগে সংযোগ বেশি ছিল। এখন আমরা সংযোগ সংখ্যা কমিয়ে আনছি। বিশেষ করে যেখানে আমাদের যোগাযোগটা জরুরি, সেখানেই এই পিএবিএঙ সংযোগ দেয়া হচ্ছে। যেমন– ওসেক, আইসিইউ, ওটিসহ প্রতিটা ওয়ার্ডে। আগে প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক সংযোগ ছিল। এখন প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে সংযোগ দেয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডগুলোতে যাতে যোগাযোগ করা যায়, সেটাই মুখ্য। আমরা হিসেব করে দেখেছি, সবমিলিয়ে ১২০টি সংযোগে আমাদের পুরো হাসপাতাল কভার হচ্ছে। সেভাবেই আমরা নতুন লাইনের সংযোগ দিচ্ছি।
উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৯৭ সালে স্থাপন করা হাসপাতালের পিএবিএঙ মেশিনটি ২০১৪ সালের মার্চ মাসে অকেজো হয়ে পড়ে। সচলকরণে দফায় দফায় চিঠি চালাচালির পর অবশেষে নতুন একটি পিএবিএঙ ক্রয়ে বরাদ্দ পায় চমেক হাসপাতাল। সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্দে ২০১৫ সালের জুন মাসে নতুন একটি পিএবিএঙ মেশিন কিনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। টেশিস থেকেই এ মেশিন কেনা হয়। সম্প্রতি দ্বিতীয় দফায় দেয়া প্রস্তাবনায়ও সরকারি প্রতিষ্ঠানটি ৪০ লাখ টাকার বেশি দাবি করে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।