অবশেষে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে প্রতিষ্ঠা হচ্ছে বহুল কাঙ্ক্ষিত নিজস্ব হাসপাতাল। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল প্রকল্পসহ প্রায় ১৪ হাজার ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত মোট ২০টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ৬ মে কক্সবাজার সফরকালে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও নানা কারণে সেই হাসপাতালের নির্মাণ কাজ গত সোয়া পাঁচ বছরেও শুরু করা যায়নি। তবে গতকাল একনেকের সভায় হাসপাতালের প্রকল্পটি অনুমোদন হলেও এর নির্মাণ কাজ কবে শুরু হবে, এর বরাদ্দ কত; এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. ফরহাদ হোসেন বলেন, কমেক (কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ) হাসপাতাল প্রকল্পটি আজ (মঙ্গলবার) একনেকে অনুমোদন হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য এখনও পাইনি, পেতে আরও কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, কমেকে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবিটি এ কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণেরও। কমেক নিজস্ব হাসপাতাল পেলে এখানকার শিক্ষার্থীরা কলেজের পাশেই হাতে–কলমে শিক্ষা নিতে পারবে। বর্তমানে কমেক থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে তাদের ব্যবহারিক ক্লাশ নিতে হয়। তবে কলেজের ক্যাম্পাসে স্থাপিত পিসিআর ল্যাবে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত করোনাকালীন ৩ লাখ ৬৩ হাজারের বেশি করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যা বৃহত্তর চট্টগ্রামে একটি রেকর্ড সৃষ্টি করে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে নিজস্ব হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হলে একদিকে সদর হাসপাতালে রোগীদের চাপ কমবে, অন্যদিকে স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যসেবারও উন্নতি ঘটবে বলে আশা করেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা। তিনি বলেন, বর্তমানে সদর হাসপাতালে শয্যার অভাবে প্রায়ই মেঝেতে থেকে রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। একটু জটিল সমস্যা নিয়ে এলেই তাকে পাঠানো হচ্ছে চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকায়। এতে অনেক রোগীর যাত্রাপথেই মৃত্যু ঘটছে।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলালউদ্দিন বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয় ২০১১ সালে। এর ছয় বছরের মধ্যে ২০১৭ সালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়। ২০১৩ সালে গাজীপুরে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এর মাত্র চার বছরের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়। একইভাবে দেশের আরও কয়েকটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কয়েক বছরের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে শিক্ষার জন্য হাসপাতাল চালু হয়েছে। কিন্তু কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পরও এ কলেজের হাসপাতাল নির্মাণ শুরু হয়নি। তবে আজ (মঙ্গলবার) একনেকে কমেক হাসপাতাল প্রকল্পটি অনুমোদন লাভের আশায় বুক বেঁধে আছি। দ্রুত যেন কাজ শুরু হয় এবং কোন ‘নির্বাচনী মুলা’ যেন না হয়।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক’র চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরে বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রায় ১৪ হাজার ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত মোট ২০টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১২ হাজার ৪০৯ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা এবং বৈদেশিক অর্থায়ন ১ হাজার ৪৯ কোটি ৪ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৬১৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।