‘নজরুল শান্ত রসের দেশে আনেন রৌদ্র রসের অসহ্য দহন ও দীপ্তি’

রাশেদ রউফ | মঙ্গলবার , ২৯ আগস্ট, ২০২৩ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

নজরুলের নানা পরিচয়। তিনি দিগন্তপ্লাবী প্রান্তরকে স্পর্শ করেছেন তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে। মূলত বিদ্রোহী নামাঙ্কিত কবিতাটির জন্য সব পরিচয় ছাপিয়ে তিনি সর্বসাধারণের কাছে হয়ে উঠেছেন ‘বিদ্রোহী কবি’। প্রেমিকসত্তার দোর্দণ্ডপ্রতাপ ও শক্তি থাকা সত্ত্বেও পাঠকের মনে নজরুলের কাব্যমূর্তি গড়ে উঠেছে বিদ্রোহীর প্রতীক হিসেবে, তিনি চিহ্নিত হয়ে গেছেন বিদ্রোহী রূপে; এবং তা চিরকালের মতোই।

প্রেম আর বিদ্রোহকে নজরুল এতো চমৎকারভাবে নিজের হৃদয়ে সমন্বয় করেছেন, তা কেবল বিস্ময়কর নয়; একেবারে নতুনও। ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণতূর্য’ বলে যে রকম বৈপরীত্যকে ধারণ করেছেন নজরুল, বাংলা সাহিত্যে তা বিরল ঘটনা। নজরুল এ কবিতার মাধ্যমে ‘সম্পূর্ণ নতুন ও অজ্ঞাতপূর্ব শক্তি ও সম্ভাবনা আবিষ্কার করেছেন’। তিনি তাঁর ‘বিদ্রোহীকবিতায় নিয়ে আসেন এমন ‘তেজজোশআলোতাপ’, যা নজরুলের আগে বাংলা ভাষায় কল্পনাই করা যেতো না। বিষয়ে, বৈচিত্র্যে, উপস্থাপনায় ও বিন্যাসে ‘বিদ্রোহীবাংলা কবিতার ইতিহাসে এমন এক নতুনত্বের সন্ধান দেয়, যা ছিলো অকল্পনীয়। নজরুলের বিদ্রোহের বেগ বাংলা কবিতায় সম্পূর্ণ একটি নতুন আয়তন যুক্ত করেছে।

নজরুল যেমন সাহসী ও নির্ভীক ছিলেন, তেমনি ছিলেন সরলপ্রাণের উচ্ছল পুরুষ। তাঁর বক্তব্য ছিল ঋজু, অন্তরআত্মা ছিল অসম্ভব প্রাণোচ্ছল ও অনাবিল। তিনি যা ভেবেছেন, তা অকপটে প্রকাশ করেছেন; যা চেয়েছেন তা বলেছেন সহজভাবেই, তাতে কোনো দ্বিধা ছিলো না, জটিলতা ছিল না, ছিল না কূটসমস্যাও। তাঁর ছিল অফুরন্ত প্রাণশক্তি। তিনি ছিলেন অপরিমেয় মমতার আধারস্বরূপ। নজরুল নিজেকে উপলব্ধি করেছেন, আবিষ্কার করেছেন। বলেছেন, ‘আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!/ আমি চিনেছি আমারে, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!’

আসলে নজরুল তাঁর আত্মশক্তিকে প্রকাশ করেছেন এ কবিতায়; ‘আত্মদর্শন, আত্মউপলব্ধি, আত্মসম্মানের’ উদ্বোধন করেছেন। এই ‘আমি’ যে কতোটা শক্তিশালী, স্বতন্ত্র, সাহসী ও নির্ভীক; তা ভাবাই যায় না। অকপটে বলতে পারেন : ‘আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী/ আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!’ তাঁর মত দৃঢ়চেতা, প্রবল আত্ম প্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী সেকালে একালে কোনোকালেও দৃশ্যমান হয়নি।

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা নিয়ে বুদ হয়ে ছিলেন আবদুল মান্নান সৈয়দ। তিনি এতোটাই মগ্ন ছিলেন, শুধু নজরুলকে নিয়েই লিখেছেন তাঁর তিনটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। তাঁর মতে, ‘নজরুল তাঁর কবিতাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন, সেসময়ে তার প্রয়োজনও ছিল। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এমন দীপিত ও উজ্জ্বলআবেগী কবিতা লিখে রাজরোষে পড়ার ইতিহাসও তাঁরই’। ‘বল বীর, চির উন্নত মম শির’ বা ‘মহাবিদ্রোাহী রণক্লান্ত/আমি সেই দিন হবো শান্ত’ এমন সাহসী কাব্য লেখনীর মাধ্যমে তিনি দেশবাসীকে জাগিয়েছেন। পরাধীনতা, শোষণের কবল থেকে জাতিকে প্রথম স্বাধীন ও মুক্ত হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন নজরুল। তিনি প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে মানুষকে মুক্তিসংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছেন, জাগ্রত করেছেন জাতীয়তাবোধ। বলেছেন : ‘আমি চিরবিদ্রোহী বীর/ আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চিরউন্নত শির।’ ‘উঠিয়াছি একা’ বলে তিনি তাঁর অনন্য ও অগ্রগণ্যতার কথা দৃঢ়চিত্তে তুলে ধরেছেন। তাঁর কলম শাসকের অস্ত্রের চেয়ে বেশি শক্তিমান ছিল। নজরুল কবিতা লিখেছেন বিষয়কে ভর করে, নব নব ছন্দ এবং দেশিবিদেশি ভাষার প্রাঞ্জল মিশেল তাঁর কবিতাকে করে তুলেছিল শ্রেণিসচেতন এবং জনতার পাঠযোগ্য।

মান্নান সৈয়দ বলছেন, যে নজরুল ইসলামকে ‘Topical poet’ বা সাময়িক কবি বলে বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসবেত্তারা চিহ্নিত করেছিলেন, তাঁদের হিসাবে গরমিল ছিল, কেননা তাঁর মতে : ‘শিল্পের কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। কবিতারও নেই ওরকম কোনো যান্ত্রিক সংজ্ঞা। পৃথিবীতে নতুন কবিতা যতোদিন লেখা হবে ততোদিন তার জন্যে নতুন নিয়মও সৃষ্টি হবে। রবীন্দ্রনাথের পর নজরুল সৃষ্টি করেছিলেন নতুন কবিতা এবং একই সঙ্গে নতুন কবিতার নিয়ম। বাংলা কবিতার স্বভাব ও জগৎ সমপ্রসারিত হ’লো। ‘সাময়িক কবিতা’ও যে ‘চিরন্তন কবিতা’ হ’তে পারে বাংলা ভাষায় তা প্রমাণ করলেন নজরুল। তাঁর কালজ কবিতা এমনিভাবে হ’য়ে উঠেছে কালোত্তর কবিতা।’ তিনি বলেছেন, ‘নজরুল শান্ত রসের দেশে আনেন রৌদ্র রসের অসহ্য দহন ও দীপ্তি’।

বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের পর কবির ভাবচিন্তা ও শব্দ ব্যবহারের সমালোচনা করেছেন কেউ কেউ। তাঁদের উদ্দেশে নজরুল বলেছিলেন, “আমার বিদ্রোহী পড়ে যাঁরা আমার উপর বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন, তাঁরা যে হাফেজ রুমিকে শ্রদ্ধা করেন, এও আমার মনে হয় না। এরা কি মনে করেন হিন্দু দেবদেবীর নাম নিলেই সে কাফের হয়ে যাবে? তাহলে মুসলমান কবি দিয়ে বাংলা সাহিত্য সৃষ্টি কোনোকালেই সম্ভব হবে না….জৈগুন বিবির পুঁথি ছাড়া।…. বাঙলা সাহিত্য হিন্দুমুসলমান উভয়ের সাহিত্য। এতে হিন্দুর দেবদেবীর নাম দেখলে মুসলমানদের রাগ করা যেমন অন্যায়, হিন্দুরও তেমনি মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের মধ্যে নিত্য প্রচলিত মুসলমানি শব্দ তাদের লিখিত সাহিত্যে দেখে ভুরু কোঁচকানো অন্যায়। আমি হিন্দুমুসলমানের মিলনে পরিপূর্ণ বিশ্বাসী; তাই তাদের এ সংস্কারে আঘাত হানার জন্যই মুসলমানী শব্দ ব্যবহার করি, বা হিন্দু দেবদেবীর নাম নিই।”

পবিত্র সরকার বলেছেন, “নজরুলের নর্তনশীল অসমছত্রের প্রবল তরঙ্গময় ছন্দ আর বিস্ফোরক শব্দাবলির যুগলবন্দি অনেক বেশি সৃজনশীলতার পরিচয় নিহিত হয়ে আছে। এ কথাগুলো যেন দিগন্ত ও আকাশকে ব্যাপ্ত করে বজ্রের মতো এখনও বাঙালির শ্রবণে ধ্বনিত হয়ে চলেছেআমি বেদুঈন, আমি চেঙ্গিস,/আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্নিশ।

এই যে হিন্দু ও ইসলামের পুরাণ, প্রকৃতির বিপুল ঘটনাসবকিছু থেকে অগাধ বৈপরীত্যের সমাহার, এ তো শুধু তালিকা নয়, ছন্দেবন্ধে মিলে অনুপ্রাসে, প্রসঙ্গ ও ধ্বনির কঠিনকোমল সজ্জায় এ এমন এক নির্মাণ, যার তুলনা বিরল। এর মূল কথা আর কিছুই না, কবি তার ‘আমিত্ব’কে এমন বিশাল, উত্তুঙ্গ ও পরিব্যাপ্তভাবে অনুভব করেছেন যে, তা প্রায় বিশ্বের প্রতিস্পর্ধী হয়ে উঠেছে। শুধু প্রকৃতিপরিবৃত মানববিশ্ব নয়, মানুষের সৃষ্ট শিল্প ও পুরাণের কল্পবিশ্বকেও তিনি গ্রহণ করেছেন, দেশ ও কালের সীমানা ভেঙে ইতিহাসে, ভূগোলে চলেছে তার ব্যাপক পরিক্রমা। কিন্তু বিশ্ব যেখানে এক হিসেবে আপাতভাবে এক নিষ্ক্রিয় অস্তিত্ব, সেখানে কবির আমি এক অতি সচেতন সত্তা, সে উচ্ছ্বাসে, উল্লাসে, উন্মাদনায়, উদ্ভাবনায় ভরপুর। সেই সুতীব্র জীবনের স্পন্দন এ কবিতায় নজরুল আশ্চর্যভাবে ধরে দিয়েছেন।”

নজরুল বলায়চলায়, মতেপথে ও প্রকাশেপ্রকরণে এক ও অবিচ্ছেদ্য। কবিতা লেখার ক্ষেত্রে হোক, আর ব্যক্তিগত জীবনে হোক, কোথাও তিনি কোনো তন্ত্রমন্ত্রের ধার ধারেন নি। তাঁর কাছে একমাত্র বিবেচনার বিষয় ছিল মানবিকতা। মানবতার চরমমুক্তিই একমাত্র আকাঙ্ক্ষিত পূর্বশর্ত। এই বিবেচনায় নজরুলসত্তা আরো বেশি স্বতন্ত্রমণ্ডিত। তাঁর দ্রোহ সেখানে আপসহীন ও সুস্পষ্ট।

অক্ষয়কুমার গুহ ‘সৌন্দর্যততত্ত্ব’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে কবি রাতারাতি বিখ্যাত হলেও কিছু নিন্দুকসমালোচক এটিকে কবির পাগলামি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একে তার উন্মাদগ্রস্ততার লক্ষণও বলেছেন কেউ কেউ। তবে সব কিছু ছাপিয়ে নজরুল ও তার ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি যেনো আজও সমার্থক। এই বিদ্রোহী কবিতাটি বীররসপ্রধান হলেও এখানে রয়েছে প্রেম ও বিরহরসের অপূর্ব সংমিশ্রণ। কবি তার পরবর্তী প্রচুর রচনাতেও এরকম একাধিক রসের সংমিশ্রণে ছিলেন পারদর্শী। এ প্রেক্ষাপটে ভারতীয় পণ্ডিতগণের সৌন্দর্যতত্ত্বে রসতত্ত্ব সম্পর্কিত ধারণার কথা উল্লেখ করা যায়। তাঁরা বলেন, ‘রসই সৌন্দর্যের জীবন। বস্তুর সৌন্দর্য রসাত্মকতার উপর নির্ভর করে। বস্তু হইতে রস লইয়া যাও, বস্তুর সৌন্দর্য অন্তর্হিত হইবে। যে বস্তু যে পরিমাণে রসোদ্দীপনম, সেই বস্তু সেই পরিমাণে সুন্দর। ’

নজরুল নিজের বিদ্রোহ সম্পর্কে পূর্ণমাত্রায় সচেতন ছিলেন। তিনি মনে করতেন, ‘সত্য’ প্রকাশ করাই কবির কাজ। রাজবন্দির জবানবন্দীতে কবি নিজে বলেছেন, ‘আমি শুধু রাজার অন্যায়ের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করি নাই, সমাজের, জাতির, দেশের বিরুদ্ধে আমার সত্যতরবারির তীব্র আক্রমণ সমান বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে, তার জন্যে ঘরেবাইরের বিদ্রোহ, অপমান, লাঞ্ছনা, আঘাত আমার ওপর পর্যাপ্ত পরিমাণে বর্ষিত হয়েছে, কিন্তু কোনো কিছুর ভয়েই নিজের সত্যকে, আপন ভগবানকে হীন করি নাই, লোভের বশবর্তী হয়ে আত্মউপলব্ধিকে বিক্রি করি নাই, নিজের সাধনালব্ধ বিপুল আত্মপ্রসাদকে খাটো করি নাই, কেননা আমি যে ভগবানের প্রিয়, সত্যের হাতের বীণা; আমি যে কবি, আমার আত্মা যে সত্যদ্রষ্টা, ঋষির আত্মা।’

মানবাত্মার মুক্তিসাধনাই তাঁর সাহিত্যকর্মের প্রধান অন্বিষ্ট। মানুষের অন্তরআত্মায় সচেতনভাবে তিনি জ্বেলে দিতে চেয়েছেন মানবিকতার আলো। মানবিকতার শক্তি দিয়ে অতিক্রম করার চেষ্টা করেছেন ধর্মীয় বেড়াজাল। তাঁর কাছে ধর্মের চেয়ে মানুষ বড়ো। তিনি মনে করতেন ধর্মের জন্য মানুষ নয়, বরং মানুষের জন্যই ধর্ম। এই প্রাতিস্বিক মানববন্দনার পেছনে নজরুলের সৃষ্টিশীল ঐতিহ্যচেতনা ছিল সদাসক্রিয়। সামপ্রদায়িক বিভেদের বিরুদ্ধে নজরুল সংগ্রাম করেছেন একক শক্তিতে এবং তিনি বিশ্বাস করতেনমানবতা প্রতিষ্ঠিত হলেই দূর হয়ে যাবে সব অপশক্তি।

অমল চক্রবর্তীর ভাষায়, নজরুলের বিদ্রোহী সত্তা প্রচণ্ড গতিশীল ও বন্ধনহীন। আধুনিক মানুষের চরম আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে আবহমান মানুষের জীবনসংগ্রামকে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীর সংমিশ্রণ ঘটিয়ে নজরুল ব্যক্তিকে প্রমিথিউসের উচ্চতায় নিয়ে গেছেনঅস্তিত্ববাদী দর্শনের সার তিনি ধারণ করেছেন আপন মানসলোকে। তাকে খুঁজে পাই তীব্র জীবনবাদী দ্রোহী হিসেবে, যখন তিনি লেখেন: আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা,/ করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,/ আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!

বিদ্রোহী’ কবিতায় নজরুল আত্মস্বাধীনতা উদ্বোধনের গান গেয়েছেন। তাঁর কবিতা ব্যক্তিসত্তার চরম উদযাপন, সার্বভৌমত্বের প্রতিভূ। তাঁর কবিতা পাঠকের কাছে নতুনভাবে আবির্ভুত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাঁর অদ্বিতীয় কাব্যশৈলী, সাহসী শব্দচয়ন, আধুনিক মানসিকতা, ইন্দ্রিয়পরায়ণতা, রোমান্টিক চেতনা ও অতীন্দ্রিয়বাদের জন্য তিনি আবিষ্কৃত হচ্ছেন প্রতিদিন। মাত্র একটি কবিতা দিয়ে যদি নজরুলকে চিনতে হয়, তবে সেটি অবশ্যই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা। যে কবিতা দিয়ে এক নতুন যুগ শুরু হয় বাংলা কবিতার। নজরুলের ‘দুর্বিনীত আমি’ আমাদের পরম প্রাপ্তি। যুগ যুগ ধরে তিনি আমাদের চেতনায় জল ঢালবেন চির বিদ্রোহী হিসেবে, চির নতুন হিসেবে।

মোরশেদ শফিউল হাসানের কথা দিয়ে শেষ করতে চাই। তিনি বলেছেন, নজরুলের বিদ্রোহীকবিতার শেষ বাক্যগুলোর অনুসরণে আমরাও যেন বিশ্বাস করেছি, যবেতক উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশে বাতাসেধ্বনিত হবে, ‘অত্যাচারীর খড়গকৃপাণউদ্যত থাকবে, নজরুলের কবিতার আয়ু বা আবেদন আসলে ততদিনই। আশা আমরা নিশ্চয় করব, স্বপ্ন দেখব এক সুন্দর সুদিনের যেদিন নজরুলের কবিতা সত্যিসত্যিই তার লড়াকু আবেদন খুইয়ে বসবে। কিন্তু সেদিন কবে আসবে? আদৌ কখনো আসবে কি? এদেশে বা পৃথিবীর কোথাও এমন সমাজ কি কখনো কায়েম হবে যেখানে কোনো রকম শোষণবঞ্চনা, বৈষম্যবিভেদ, অন্যায়উৎপীড়ন থাকবে না; কায়েমি স্বার্থ নামক বিষয়টির চির অবসান ঘটবে? সে সম্ভাবনা কি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আজ আরও দূরপরাহত বলে মনে হচ্ছে না? এ কারণেও নজরুল আরও বহুদিন আমাদের যুদ্ধসঙ্গী, তাঁর কবিতাগান আমাদের অপরিহার্য রণবাদ্যরণসঙ্গীত।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক আজাদী;

ফেলো, বাংলা একাডেমি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজ্যোতির্ময় বঙ্গবন্ধু
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা ফাউন্ডেশনের চারা বিতরণ