পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

দূর করতে হবে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসের আগ্রহ

| মঙ্গলবার , ২৯ আগস্ট, ২০২৩ at ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ

পাহাড় ধস ও দেয়াল চাপায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে রোধ করা যাচ্ছে না। ষোলশহরে পাহাড় ধসে মৃত্যু হয়েছে বাবা ও মেয়ের। ঘটনাটি মর্মান্তিক। গতকাল ২৮ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রোজ ভোর ৫টায় নগরের ষোলশহর রেলস্টেশনে নিজের চাদোকান খুলে ক্রেতার অপেক্ষা করেন আবদুল আউয়াল সোহেল (৩৫)। ভারী বৃষ্টি হওয়ায় গত রোববার দোকানে যাননি তিনি। স্টেশনের পাশেই আইডব্লিউ কলোনিতে নিজের বাসায় ঘুমিয়েছিলেন সাত মাস বয়সী সন্তান বিবি জান্নাতকে নিয়ে। বাবামেয়ের সেই ঘুম আর ভাঙেনি। পাহাড় ধসে মারা যান তারা। গত রোববার সকাল ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় সোহেলের সঙ্গে একই বিছানায় ছিলেন তার স্ত্রী শরীফা বেগম ও বড় মেয়ে বিবি কুলসুম (১২)। ঘরের উপর পাহাড়ের মাটি পড়ার শব্দ শুনে দ্রুত বের হওয়ার সময় আটকে যান তারা। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে উদ্ধার করে তাদের। এ সময় মাথায় আঘাত পান শরীফা। কুলসুমও আহত হয়। জানা গেছে, আইডব্লিউ কলোনির পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট। খাড়া এ পাহাড়ের মাটি কেটে ঘর নির্মাণ করে রেলওয়ের খালাসি পদে কর্মরত আবদুল খালেক। সেখানে একটি রিটেইনিং ওয়ালও নির্মাণ করে। ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ের মাটির সাথে দেয়ালটিও ভেঙে পড়ে সোহেলের ঘরে। তার স্বজনদের দাবি, দেয়ালটি নির্মাণের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশে পাহাড় ধসের কারণে নানা সময়ে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হওয়ার সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু কেন এ পাহাড় ধস। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের পাহাড়ি অঞ্চলের উপরের দিকের মাটিতে কঠিন শিলার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। ফলে আমাদের পাহাড় ধসের আশঙ্কা এমনিতেই বেশি। তা ছাড়া মানুষ এসব জায়গায় বসবাসের জন্য ও চাষাবাদের জন্য পাহাড়ের উপরের দিকের শক্ত মাটির স্তরও কেটে ফেলে। পাশাপাশি বড় গাছপালা কেটে ফেলায় ভারি বৃষ্টিপাত হলেই পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বনভূমি উজাড় , অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে পাহাড় কাটা, পরিকল্পিত বনায়ন না করা, রাস্তা করার ক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ ও বিজ্ঞান সম্মত ড্রেন বা নিষ্কাশন ব্যবস্থা না রাখা, যত্রতত্র পাহাড় কেটে বাসস্থান নির্মাণ, আবহাওয়া বা জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ বারবার দেখা দিচ্ছে। এছাড়া, অতি বৃষ্টি ও ভূমি ক্ষয়ের কারণে পলি জমে প্রাকৃতিক নিয়মে সৃষ্ট ছড়া, নালা, খালনদী ভরাট হওয়ার প্রেক্ষিতে পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকা, বেলে প্রকৃতির পাহাড়ে বিভিন্ন অংশে পানি জমে থাকায় দীর্ঘ সময় একটানা অতি বৃষ্টির ফলে পানি ভিতরে প্রবেশ করার কারণে ন্যাড়া পাহাড়ের স্থিতিস্থাপকতাস্থিতিশীলতা যেমন একদিকে বিনষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে সহজেই পাহাড়গুলো ভঙ্গুর হচ্ছে।

আমরা প্রত্যক্ষ করছি, বিভিন্ন স্থানে অবাধে পাহাড় কাটা চলছে। প্রতিদিন ট্রাক্টর বোঝাই করে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। পাহাড় কাটার কাজ শুরুর আগে সেখানে অনেক গাছগাছালি ছিল। সেগুলো প্রথমে পরিষ্কার করা হয়। তারপর তারা মাটি কেটে নিয়ে যায়। পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষেধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটা চলছে। পাহাড় কাটার কারণে বেশ কিছু বনজঙ্গল কাটা পড়েছে। ন্যাড়া হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পাহাড়ের বিশাল এলাকা। এভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

এদিকে আজাদীতে একই দিনে প্রকাশিত অন্য একটি সংবাদে জানা যায়, ষোলশহরে রেলওয়ের মালিকানাধীন আইডব্লিউ নামের যে পাহাড় ধসে বাবামেয়ের মৃত্যু হয়েছে, সেই পাহাড়টি থেকে ৪০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ সময় সরিয়ে দেওয়া হয় ২৫০ জনকে। পাহাড়টি কাটার সাথে জড়িত আবদুল খালেক নামে রেলওয়ের একজন খালাসি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে তার বিষয়ে জানতে পারেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পরে পাঁচলাইশ থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড় ধসের অন্যতম একটা কারণ মানবসৃষ্ট। তাঁরা বলেন, অবৈধভাবে প্রচুর পরিমাণ পাহাড় কাটার ফলে পাহাড় ধস হচ্ছে এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী অনেকে মারা যাচ্ছেন। বারবার অভিযানের পরও ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাসের আগ্রহ দূর করতে হবে। মৃত্যুর মর্মান্তিক চিত্রকে তাদের সামনে উপস্থাপনার মাধ্যমে পাহাড় বসবাসে নিরুৎসাহিত করা জরুরি। যারা পাহাড় কাটায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে