গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশ, কম্পিউটার ও কম্পিউটার সিস্টেমে ক্ষতি সাধন, সাইবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধের জন্য অজামিনযোগ্য চারটি ধারা রেখে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সচিবালয়ে ফিরে সাংবাদিকদের বলেন, খসড়ায় সংজ্ঞাসহ সামান্য কিছু পরিবর্তন করে সেটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৭, ১৯, ২৭ ও ৩৩ ধারা অজামিনযোগ্য রয়েছে। বাকিগুলো জামিনযোগ্য। ১৭ ধারায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশ, ১৯ ধারায় কম্পিউটটার ও কম্পিউটার সিস্টেমে ক্ষতি, ২৭ ধারায় সাইবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং ৩৩ ধারায় হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে বলা আছে।
বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে একই আদলে সাইবার নিরাপত্তা আইন করছে সরকার। ৭ আগস্ট এই আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। সংসদের আগামী মাসের অধিবেশনে এই আইন পাস করা হবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আগেই জানিয়েছেন। তবে নতুন আইনেও উদ্বেগ জানিয়ে আসছে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো ও অধিকারকর্মীরা। খবর বিডিনিউজের।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন নীতিগত অনুমোদনের সময় যে খসড়াটি ছিল, সেখানে দু’একটি সংজ্ঞাসহ ‘সামান্য কিছু’ পরিমার্জন করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জরিমানার ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি বলে জানান তিনি। আগের আইনের দায়ের হওয়া মামলাগুলোর কী হবে–সেই প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনের রহিতকরণ একটা ধারা থাকে। সেখানে বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর অধীনে অনিষ্পন্ন মামলা সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে এবং অনুরূপ মামলায় প্রদত্ত আদেশ, রায় বা শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল সংশ্লিষ্ট আপিল ট্রাইব্যুনালে এমনভাবে পরিচালিত ও নিষ্পত্তি হবে, যেন ওই আইন রহিত হয়নি। নতুন আইন কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত আগের আইনের যে সকল কার্যক্রম ছিল ওই আইনে সেগুলো নিষ্পন্ন হবে।
অংশীজনদের মতামত নিয়ে নতুন এই আইন করা হচ্ছে কিনা–এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা ওই মন্ত্রণালয়কে (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ) জিজ্ঞাসা করলে ভালো হবে। আমাদের কাছে খসড়াটা চলে আসে, প্রসেসটা আমাদের কাছে আসে না।
সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস করার আগে অংশীজনদের মতামত নিতে সরকারের প্রতি ইতোমধ্যে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবিত আইন নীতিগতভাবে অনুমোদনের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, খসড়াটি ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে, এর ওপর মতামত দিতে ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
অজামিনযোগ্য ধারা : ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশ করলে তিন বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দণ্ডিত হবেন। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে ক্ষতিসাধন বা বিনষ্ট বা অকার্যকর করেন বা এসব করার চেষ্টা করেন, তবে ছয় বছর কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে।
১৯ ধারায় কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম ইত্যাদির ক্ষতিসাধন ও দণ্ডের বিষয়ে বলা আছে। কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক থেকে কোনো উপাত্ত, উপাত্ত–ভান্ডার, তথ্য বা উহার উদ্ধৃতাংশ সংগ্রহ করেন বা স্থানান্তরযোগ্য জমাকৃত তথ্য–উপাত্তসহ ওই কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের তথ্য সংগ্রহ করেন বা কোনো উপাত্তের অনুলিপি বা অংশ বিশেষ সংগ্রহ করলে বা কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো ধরনের সংক্রামক, ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রবেশ করালে বা প্রবেশ করানোর চেষ্টা করলে, তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, উপাত্ত বা কম্পিউটারের উপাত্ত–ভান্ডারের ক্ষতি করলে বা ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করলে বা উক্ত কম্পিউটার, সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে রক্ষিত অন্য কোনো প্রোগ্রামের ক্ষতি করলে বা করার চেষ্টা করলে বা কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে কোনো বৈধ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কোনো উপায়ে প্রবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করলে বা বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাও অপরাধ হবে।
এর বাইরে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রেরক বা গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া কোনো পণ্য বা সেবা বিপণনের উদ্দেশ্যে, স্পাম উৎপাদন বা বাজারজাতকরণ বা করার চেষ্টা করেন বা অযাচিত ইলেকট্রনিক মেইল পাঠালে অথবা কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ বা কারসাজি করে কোনো ব্যক্তির সেবা গ্রহণ বা ধার্যকৃত চার্জ অন্যের হিসাবে জমা করলে বা করার চেষ্টা করলে সাত বছর কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে।
২৭ ধারায় সাইবার সন্ত্রাসী কার্য সংঘটনের অপরাধের জন্য ১৪ বছর কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ৩৩ ধারায় হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি হ্যাকিং করেন, তাহলে সেটি একটি অপরাধ। এজন্য অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
হ্যাকিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কম্পিউটার তথ্য ভান্ডারের কোনো তথ্য বিনাশ, বাতিল, পরিবর্তন বা এর মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাসকরণ বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিসাধন। অথবা নিজ মালিকানা বা দখলবিহীন কোনো কম্পিউটার, সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশের মাধ্যমে তার ক্ষতিসাধন।