বছরের পর বছর চলে গেছে, কথা রাখেনি কেউ

গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ফ্ল্যাট

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ২৯ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

ফ্ল্যাট কেনার পর গত হচ্ছে বছরের পর বছর। কথা দিয়েও কথা রাখেনি কেউ। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে পারেনি। চট্টগ্রামের হালিশহর এবং ফিরোজ শাহ এলাকায় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ফ্ল্যাট নির্মাণ নিয়ে নয় ছয় চলছে শুরু থেকে। অভিযোগ রয়েছে, দুর্নীতি চলছে ফ্ল্যাট নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞের পদে পদে। দীর্ঘদিন আগে টাকা পয়সা দিয়েও ফ্ল্যাট বরাদ্দ না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। আবার ফিরোজ শাহ এলাকার নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট এলাকাবাসীর জন্য আতংক হয়ে দেখা দিয়েছে। স্থানীয় মাদকাসক্ত এবং ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে অর্ধনির্মিত এক একটি ভবন। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ হালিশহরের কিছু ফ্ল্যাট অচিরেই বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, সীমিত আয়ের মানুষের আবাসনের জন্য চট্টগ্রামের হালিশহর জি ব্লক এবং ফিরোজশাহ কলোনীতে ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে হালিশহর জি ব্লকে ৩১২টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হয় ২০১৭ সালে। কথা ছিল তিন বছর পর ২০২০ সালে ফ্ল্যাটগুলো বুঝিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ের বেশ পরে ২০১৮ সালের আগস্টে কাজ শুরু করে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৪ তলাবিশিষ্ট ৬টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, যাতে সর্বমোট ৩১২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরু থেকে চলে একেবারে ঢিমেতালে। নির্ধারিত সময় গত হওয়ার বহু পরেও ফ্ল্যাট বুঝিয়ে পাচ্ছেন না বরাদ্দপ্রাপ্তরা। প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে বড় অংকের ঋণ নিয়ে অনেকটা দায়সারা গোছের কার্যক্রম চালাতে থাকে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পরবর্তীতে নানাভাবে চেষ্টা করে প্রকল্পটিকে বর্তমানে কিছুটা দাঁড় করানো সম্ভব হয়েছে। আগামী মাস কয়েকে মধ্যে এই প্রকল্পের কিছু ফ্ল্যাট গ্রাহকদের বুঝিয়ে দেয়া হবে। ২০২০ সালে বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও চার বছর পর ফ্ল্যাট পাওয়ার আশায় বহু গ্রাহকই তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছেন বলেও জানিয়েছেন।

এছাড়া ফিরোজশাহ কলোনী এলাকায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য ৬৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। অথচ হয়নি। ফ্ল্যাটগুলো নিয়েও হতাশা বিরাজ করছে বরাদ্দপ্রাপ্তদের মাঝে। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে এই ফ্ল্যাটগুলোও কবে বুঝিয়ে দিতে পারবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। তবে নির্মাণাধীন এসব ফ্ল্যাট স্থানীয়দের কাছে বড় ধরণের আতংক হয়ে দেখা দিয়েছে। নির্মাণাধীণ ফ্ল্যাটগুলো অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ার পাশাপাশি ছিনতাইকারী, মাদকাসক্ত এবং স্থানীয় মাস্তানদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় বা লোকালয়ে নানা অঘটন ঘটিয়ে সন্ত্রাসীরা দিব্যি এসব ভবনে ঢুকে পড়ে। যাতে তাদের আর টিকিটির নাগাল পাওয়া যায়না। দিনের পর দিন এসব চলে আসছে বলেও সরজমিনে পরিদর্শনকালে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

মধ্য আয়ের মানুষদের আবাসন সংকট ঘুচাতে সরকারের গণমুখী একটি প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কারণে ভেস্তে যাচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তারা বলেন, স্বাধীনতার বহু আগে গঠিত ১৯৫৬ সাল থেকে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামে কাজ শুরু করলেও নগরীর আবাসন সংকট ঘুচাতে সংস্থাটি প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারেনি। এই সংস্থা চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে মাত্র সাড়ে সাত হাজার প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। ছোট খাটো এবং অপেক্ষাকৃত কম আয়ের মানুষদের জন্য এসব প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। এদের অধিকাংশ প্লটই স্বল্প আয়ের মানুষের কাছ থেকে টাকাওয়ালারা কিনে নিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন। একই সাথে এই সংস্থা ১৭৭১টি ফ্ল্যাটও বরাদ্দ দিয়েছে। তবে এখনো এসব ফ্ল্যাট ক্রেতাদের হস্তান্তর করা হয়নি। সংস্থার ঘাটে ঘাটে দুর্নীতির কারণে বহুমুখী সংকট তৈরি করছে বলে মন্তব্য করে একাধিক ফ্ল্যাট গ্রহীতা বলেছেন, বড় আশা করে ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। কিন্তু সবকিছুতে এত বেশি অনিশ্চয়তা যে এখন হতাশ হয়ে পড়েছি।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রামের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভোগান্তির কারণে নির্ধারিত সময়ে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০ হাজার কেজি অবৈধ চা জব্দ, ২ লাখ টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধনব্য জেএমবির ১৫ জনের বিচার শুরু