মিয়ানমারের ওপর রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার চাপ অব্যাহত রাখতে হবে

| সোমবার , ২৮ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়াটেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে মিয়ানমার সরকার ও তাদের সহযোগীদের নির্মম নির্যাতন ও গণহত্যার বিচার ও বসতভিটায় ফেরার দাবি জানান। গণহত্যার বিচার ও নিজ দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে বক্তারা বলেছেন, আমরা নতমস্তকে বাংলাদেশের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, এমন কঠিন সময়ে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায়। এদিনে আমাদের মনে পড়ে সেই বর্বরতার ভয়ঙ্কর দৃশ্যযেখানে আমাদের সন্তানদের পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘরবাড়িতে, অগণিত রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছিল, আমাদের মাবোনদের ধর্ষণ করা হয়েছিল, বাড়িঘর এবং আমাদের গ্রামে আগুন দেওয়া হয়েছিল। নিরপরাধের জীবন ও ভবিষ্যৎ কেড়ে নেয়া হয়েছে। সমাবেশে রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলেই ডাকা, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে আরাকানের গ্রামে গ্রামে প্রত্যাবাসন, প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত প্রত্যেক চুক্তি ও প্রক্রিয়ায় অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশ, এনজিও, সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা, বার্মার ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল, সম্পত্তি ফেরত, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারসহ নানা দাবি উত্থাপন করা হয়। সমাবেশে ইংরেজিতে লেখা একটি লিফলেট প্রচার করা হয়। সেখানে তারা উল্লেখ করেছেন, আজ যখন আমরা রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবসের ৬ষ্ঠ বার্ষিকী স্মরণে জড়ো হয়েছি, তখন আমাদের সেই ট্র্যাজেডির ক্ষণগুলো খুব বেশি তাড়িত করে চলেছে।

মিয়ানমার থেকে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থান ছয় বছর পূর্ণ হলো গত ২৫ আগস্ট। এত বছরেও রোহিঙ্গাদের ফেরানোর কার্যকর কোনো উদ্যোগ মায়ানমার দেখাতে পারেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ক্রমশই রোহিঙ্গারা আমাদের দেশের জন্য বোঝা হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে, মাদক দ্রব্য, অন্তর্দ্বন্দ্ব ইত্যাদি লেগেই আছে। কয়েকবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা কারণে এবং মিয়ানমারের টালবাহানায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। অথচ এখন তাদের ফিরে যাওয়ার দরকার। যখন প্রয়োজন হয়েছিল তখন আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তার অর্থ এই নয় যে তাদের আজীবন ধরে রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা পৃথিবী নিজেই এক বিরাট সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি মুহূর্ত পাড়ি দিচ্ছে এই মুহূর্তে। বছর বছর রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নেওয়ায় বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের সংখ্যাও। ফলে যত বছর পার হবে তত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। যা বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরি করবে। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে অনেকবার উঠছে। কিন্তু কার্যকর কোনো কিছু আসেনি।’

দৈনিক আজাদীতে গত ২৬ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুন আর অস্ত্রের মহড়া বেড়েই চলেছে। আধিপত্য বিস্তারে আরসাআরএসওর পক্ষ হয়ে কয়েকটি গ্রুপ প্রতিনিয়ত সংঘর্ষে জড়ায়। নিজেদের মাদক কারবারসহ অপরাধ কর্মকাণ্ড জিইয়ে রাখতে, মুন্না গ্রুপ, নবী হোসেন গ্রুপ, আরসাসহ সকল সন্ত্রাসী গোষ্ঠী প্রত্যাবাসন ঠেকাতে তৎপর। তাই তারা ক্যাম্পে ক্যাম্পে খুন ও নাশকতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে একাধিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝির দাবি।

ক্রমশই সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে সমস্যার তালিকা। আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশ্রয়হীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের খাদ্য ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানে জটিলতা বাড়ছে। কিন্তু এদের ভবিষ্যৎ কী হবে তার কোনো সুরাহা হয়নি। এখনো কোনো স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ইস্যুটি এভাবেই পড়ে থাকছে অমীমাংসিত ইস্যু হয়ে। যেখানে রোহিঙ্গা ফেরত যাওয়ার কথা, সেখানে তাদের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। রোহিঙ্গারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছে সেই উখিয়া, টেকনাফ এবং ভাসানচর থেকেও পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। তারা দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রবেশের চেষ্টা করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতি জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জোরদার করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, এ সংকট প্রশ্নে প্রধান আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশকে মর্মাহত করেছে। অথচ সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনের ফাঁকে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, আমি বারবার বলেছি, তারা (রোহিঙ্গারা) মিয়ানমারের নাগরিক। সুতরাং, তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারেই ফিরে যেতে হবে। শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতএব এ ব্যাপারে জরুরি প্রস্তাব গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ অবস্থায় মিয়ানমারের উপর রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার চাপ আন্তর্জাতিকভাবে অব্যাহত রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে