দশ দিন পিছিয়ে দেওয়া চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষা গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। গতকাল যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এইচএসসিতে বসল চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা।
১৭ আগস্ট শুরুর কথা থাকলেও এর আগের ক’দিনে বন্যায় বিপর্যস্ত বৃহত্তর চট্টগ্রামের পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এ পরীক্ষা দশ দিন পিছিয়ে দেয় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব–কমিটি। তবে যে দুর্ভোগের শঙ্কায় ওই সময় পরীক্ষা পেছানো হয়, সে দুর্ভোগ সঙ্গী করেই পরীক্ষায় বসতে হলো চট্টগ্রামের পরীক্ষার্থীদের। বিশেষ করে চট্টগ্রাম মহানগরের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বেশি। আগের রাত থেকেই টানা বৃষ্টিতে শহরের অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। গতকাল সকাল হতেই দেখা যায় কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর সমান পানি। জলাবদ্ধতার কোমর পানি মাড়িয়ে কেন্দ্রে পৌঁছাতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের। তবে পরিস্থিতি জেনে মহানগরের কেন্দ্রগুলোতে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা দেরিতে পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তের ফলে সকাল ১০টায় শুরুর কথা থাকলেও মহানগরের ২৭টি ও হাটহাজারীর দুটিসহ মোট ২৯টি কেন্দ্রে বেলা ১১টায় পরীক্ষা শুরু করা হয়। এতে করে দুর্ভোগ মাড়িয়ে কেন্দ্রে আসা পরীক্ষার্থীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়। একাধিক কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দশটার আগে অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা কেন্দ্রে এসে পৌঁছাতে পারেনি। কেউ ১৫ মিনিট, কেউ ২০ মিনিট, কেউ আধ ঘণ্টা পর কেন্দ্রে এসেছে বলে জানান বাকলিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জসিম উদ্দিন খান। সময় হারিয়ে ফেলেছে ভেবে দেরিতে আসা এসব পরীক্ষার্থীর মাঝে উদ্বেগ–উকণ্ঠা দেখা গেছে। তবে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর পরীক্ষা শুরু হওয়ায় কোনো পরীক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। পুরো কেন্দ্রে মাত্র একজন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল বলে জানান তিনি।
এক ঘণ্টা পর পরীক্ষা শুরুর এ সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরাও। তারা বোর্ডের এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছেন। রুপন নামে এক অভিভাবক জানান, তার ছেলের কেন্দ্র পড়েছে কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে। কিন্তু তার বাসা অঙিজেন এলাকায়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাসা থেকে বের হলেও দশটার মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁঁছানো যায়নি। অঙিজেন, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ছেলের জামা–কাপড়ও ভিজে গেছে। এরপরও দশটার মধ্যে কেন্দ্রে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ২০ মিনিট মতো দেরি হয়ে যায়। এ নিয়ে তাদের বাবা–ছেলের মাঝে উৎকণ্ঠা ভর করে। তবে কেন্দ্রে পৌঁছে পরীক্ষা এক ঘণ্টা পর শুরুর কথা শুনে অনেকটা হাফ ছেড়ে বাঁচেন। এ সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদও দিয়েছেন এ অভিভাবক।
পরিস্থিতি দেখে গতকাল সকালে বোর্ডের অধীন ১১৩টি কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করা হয় জানিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার আজাদীকে বলেন, সকালেই আমরা সব কেন্দ্রের পরিস্থিতির তথ্য সংগ্রহ করি। পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি–অনুপস্থিতির দিকে খেয়াল রাখতে বলি। তাছাড়া যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি, বিশেষ করে পরীক্ষা শুরুর আগে অনুপস্থিতির তথ্য বোর্ডে জানিয়ে প্রয়োজনে এক ঘণ্টা পর পরীক্ষা শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর মহানগরের ২৭টি কেন্দ্রে আলাদাভাবে ফোন করে এক ঘণ্টা পর পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। হাটহাজারীর দুটি কেন্দ্রেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, বন্যার কারণে এমন দুর্ভোগের শঙ্কা থেকেই পরীক্ষা দশ দিন পেছানো হয়। কিন্তু যে শঙ্কা থেকে পরীক্ষা পেছানো, সেই দুর্ভোগ ঠিকই ভুগিয়েছে। যদিও কেবল শহরের পরীক্ষার্থীদের এ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। তবে দুর্ভোগ–ভোগান্তি পোহাতে হলেও শেষ পর্যন্ত ভালো মতোই প্রথম দিনের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। অনুপস্থিতির সংখ্যাও কম। বলতে গেলে গতকালের পরীক্ষায় সব বোর্ডের মধ্যে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডেই অনুপস্থিতির সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে ৪৪৫ জন পরীক্ষার্থী প্রথম দিনের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল বলে জানান তিনি।
বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল আইসিটি বিষয়ে মোট ৯২ হাজার ৪০৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯১ হাজার ৯৬৩ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। ৪৪৫ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। এর মাঝে সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত চট্টগ্রাম জেলায়। মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৬৬ হাজার ১২৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অনুপস্থিত ছিল ২৯৯ জন। কঙবাজারে ১১ হাজার ৭০৩ জনের মধ্যে ৭৩ জন, রাঙামাটিতে ৪ হাজার ৭২১ জনের মধ্যে ২০ জন, খাগড়াছড়িতে ৬ হাজার ৬৯ জনের মধ্যে ৩৮ জন এবং বান্দরবানে ৩ হাজার ৪৩৭ জনের মধ্যে অনুপস্থিত ছিল ১৫ জন। শিক্ষাবোর্ডের অধীন মোট ১১৩টি কেন্দ্রে এবারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।