কোনো এক জ্যোৎস্না–ভরা রাত। নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে আছি। দূরের কোনো দ্বীপ থেকে ঢেউয়ের তালে,হীমেল হাওয়ায় দোলে মন মাতাল করা বাঁশির মোহিনী সুর ভেসে আসতে লাগলো। সুরের মুর্চনায় হ্নদয়টা আর্দ্র হয়ে গলে যাওয়ার উপক্রম। হঠাৎ প্রবল জোয়ারে যেমন স্রোত–ঢেউহীন নদীর মৌনতা ভেঙে যায় ঠিক তেমনি আমার শান্ত–শীতল মনের মৌনতাও ভেঙে অন্যরকম শিহরণ বয়ে গেলো।
নদী তটে সুপ্রাচীন বটবৃক্ষের ছায়ায় অস্ট্রপ্রহর অপেক্ষমাণ থাকে একটি ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা। বরাবরের মতো সেদিনও ঘাঁটে বাঁধা ছিলো সাকুর মাঝির ডিঙ্গি নৌকাটি। ছলাত ছলাত শব্দ করে ঢেউয়ের পর ঢেউ এসে অবিরাম আঘাত করছে ডিঙ্গি নৌকাটির পার্শ্বদেশে। ঢেউয়ের আঘাতে এপাশ ওপাশ দোলছিলো নৌকাটি।
মাঝি নিশিযাপন করতে গেলো। এই সুবিধা পেয়ে আমি বৈঠা হাতে নিয়ে নদীর অথৈ জলে নৌকা ভাসালাম। নদীর দুই দিকে বন–পাহাড়। জল যেন অথৈ নীলের ক্যানভাস। বিস্তৃত জলরাশি, উদ্দাম ঢেউয়ের অবিরাম মাতামাতি আর মন পাগল করা মাতাল হাওয়া আমার মনটাকে মুহূর্তেই উদাস করে দিলো।
রাতের নিস্তব্ধতায় তোমার বাঁশির সুরের আবেশ আর চাঁদসুন্দর রাতে নৌকা ভাসানোর স্মৃতি আজও মনে পড়ে! ভাসতে ভাসতে সেদিন চাঁদের বাঁধভাঙা হাসি মলিন হয়ে গেলো, টিমটিম করে জ্বলা শুকতারাও ঘুমিয়ে গেলো, লোকালয় সরব হয়ে উঠলো। আর কত! তুমিও বুঝি আমার মতো ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলে সেদিন। তাই ধীরে ধীরে বাঁশির সুরটিও স্তব্দ হয়ে গিয়েছিলো। যদি আবার বাঁশিতে সুর তোলো; কথা দিলাম, আমি সেই বহমান নদীর জলে মধুময় আরেকটি জ্যোৎস্না–ভরা রাতের অপেক্ষায় নিরন্তর দাঁড় টেনে যাবো।