দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনের সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অংশের সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া সংস্কারকাজ গত বৃহস্পতিবার শেষে হয়েছে। সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার পর আগের রূপে ফিরেছে রেললাইন।
পানির স্রোতে পাথর, কংকর ও মাটি সরে যাওয়ায় এমব্যাংকমেন্ট দেবে গিয়ে রেললাইন যে আঁকাবাঁকা দেখাচ্ছিল তা এখন বুঝার কোন সুযোগ নেই। সংস্কারের পর মূল লাইনের সাথে মিলে গেছে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন। তেমুহনী এলাকায় নতুনভাবে আরও তিনটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া দোহাজারী, কালিয়াইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও হারবাংসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকেল্পর বাকী থাকা কাজ শেষ করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষামূলক ভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুতে একটানা প্রবল বর্ষণ, সাঙ্গু, ডলুনদী ও হাঙ্গর খাল দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়ার উপর দিয়ে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বয়ে যায়। এ সময় সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন বন্যার
পানিতে তলিয়ে যায়। এতে পানির স্রোতে রেললাইনের নিচ থেকে পাথর, কংকর ও মাটি সরে গিয়ে লাইন দেবে যায়। পাথর ও মাটি সরে যাওয়ায় লাইনের কিছু কিছু অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এমব্যাংকমেন্ট দেবে যাওয়ায় রেললাইনের কিছু অংশ আঁকাবাঁকা দেখাচ্ছিল। গত ১৮ আগস্ট রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর ও রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ কামরুল আহসান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন পরিদর্শন করেন। এ সময় রেলপথ মন্ত্রনালয়ের সচিব সাংবাদিকদের জানান, টেকনিক্যাল টিমের সাথে বৈঠকের পর সংস্কারকাজ শুরু হবে। আগামীতে এলাকার মানুষ যাতে বন্যার পানিতে কষ্ট না পায় সেজন্য তেমুহনী এলাকায় নতুনভাবে আরো কয়েকটি কালভার্ট–ব্রিজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ লাইন সংস্কার ও প্রকল্পের বাকী কাজ পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা জানান।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনাস্ট্রাকশনের সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক (ডিপিএম) মোঃ রাশেদুজ্জামান জানান, সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইনের সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। মাত্র চার দিনের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বন্যায় রেললাইনের তেমুহনীতে ২৫০ মিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। পানির স্রোতে রেললাইনের পাথর, কংকর মাটি সরে গিয়েছিল। ফলে কয়েকটি অংশে রেললাইন কিছুটা দেবে গিয়েছিল। আবার কোথাও কোথাও লাইনের নিচে গর্ত সৃষ্টি হয়েছিল। টেকনিক্যাল টিম যেভাবে পরামর্শ দিয়েছেন আমরা সেভাবে সংস্কারকাজ সম্পন্ন করেছি।
প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, সাতকানিয়ার তেমুহনীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রেললাইনের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। এটা আসলে বড় ধরনের কোন ক্ষতি নয়। মাত্র ২৫০ মিটার এলাকায় কিছু কিছু অংশে পানির স্রোতে লাইনের নিচ থেকে পাথর, কংকর ও মাটি সরে গিয়েছিল। তাও একটানা নয়, কোথাও ৫ মিটার, কোথাও ৭ মিটার এভাবে। পাথর সরে যাওয়ায় কয়েকটি স্থানে লাইন দেবে গিয়ে কিছুটা আঁকাবাঁকা দেখাচ্ছিল। টেকনিক্যাল টিমের পরামর্শ মতে কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন আর কোন সমস্যা নাই।
এখন প্রকল্পের কত শতাংশ কাজ বাকী আছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এখনো ১০–১২ শতাংশ কাজ বাকী রয়েছে। বিশেষ করে দোহাজারী, কালিয়াইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও হারবাং এলাকায় কিছু কাজ রয়ে গেছে। এসব কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বৃষ্টির কারনে কাজে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টিতে মাটি ভিজে গেলে কাজ করা যায় না। কারন সবগুলো বাইরের কাজ। এরপরও বর্ষার বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। এখন একটাই চ্যালেঞ্জ বৃষ্টির মধ্যে কাজ শেষ করা। যতটুকু কাজ বাকী আছে তা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে পারবো। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষামূলক ভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী–কক্সবাজার ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।