ধানের বীজ তলায় ফলানো ধানের চারাকে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় ‘জালা’। সেই জালা নিয়ে বড় জ্বালায় (বিপাকে) রয়েছে পটিয়ার হাজারো কৃষক! ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ পটিয়ার হাজারো কৃষকের আমন মৌসুমের খরিদ–২ ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এতে চারা নিয়ে বিপাকে পড়ে হাজারো কৃষক। বর্তমানে কৃষকদের প্রয়োজনীয় ও চাহিদামত সেই চারা না মেলায় আমন চাষে হিমশিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের। অনেক কৃষক চারার প্রত্যাশায় বসে আছে। এতে আমন ধানের চাষ পিছিয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের বাড়ছে উদ্বেগ।
জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর আমন ধানের চারা লাগানো হয় আষাঢ় মাসের শুরুতে। এবার অনাবৃষ্টি ও পানির অভাবে মানুষ সময়মত বীজতলা তৈরী বা জালা ফেলতে পারেনি। অনেক কৃষক দূর–দূরান্ত থেকে অনেক কষ্টে পানির ব্যবস্থা করে আমন ধানের বীজতলা তৈরী করলেও পরে হঠাৎ করে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। এতে সময়মত ধানের চারা রোপণ করতে না পারা ও ব্যাপকভাবে চারার সংকট দেখা দেয়ায় বিপাকে পড়েন হাজারো কৃষক। অনেকে নতুন করে এ বীজতলা তৈরী করতে গিয়ে আমনের নিয়মিত চাষাবাদে মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে বীজতলা তৈরী করে ধানের চারা তৈরী করতে ২০–২৫ দিন সময় লাগে। তার উপর যেসব জমিতে এক ফুট বা তারও বেশি পানি জমে থাকে সেসব জমির জন্য লম্বা চারা প্রয়োজন হয়। এসব চারার বয়স হতে হয় কমপক্ষে ৪০–৪৫ দিন। আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সর্বশেষ আমনের চারা লাগানোর সময় থাকলেও নতুন করে বীজতলা তৈরী এবং রোপণের সময়ক্ষেপণ হওয়ায় অনেকে আমন চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। তার উপর অনেক জমিতে বেশি পানি জমে থাকায় চাষাবাদের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। পৌরসদরের আবুল কাসেম নামের এক কৃষক জানান, আমন চাষের ভরা মৌসুমে প্রথম দিকে ছিল পানি সংকট। শেষ সময়ে এসে যোগ হয় ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল। যার কারণে এবার আমনের জালা (চারা) আমাদের জন্য ‘আমনের জ্বালায়’ পরিণত হয়। জালা সংকট ও অতিরিক্ত চাহিদার পাশাপাশি যোগান না থাকায় জ্বালা সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। যার কারণে বর্তমানে আমন চাষ অনেক কৃষকের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। আমনের স্বাভাবিক মৌসুমে প্রতি আড়ি ধানের জালা ১ হাজার ১২শ এর মধ্যে হলেও বর্তমানে এ বছর জালা সংকটের কারণে তা বিক্রি হচ্ছে ২৫শ থেকে ২৮শ টাকায়। তারপরও ঠিক সময় ও চাহিদামত চারা পাওয়া যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কল্পনা রহমান জানান, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আমন মৌসুমে কিছুটা ধানের চারা সংকট দেখা দিয়েছে। তবে আশা করি এটা কিছুটা সময়সাপেক্ষ হলেও রিকভারি করা যাবে। তাছাড়াও কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আমাদের চলতি আমন মৌসুমে ১০ হাজার ৮৩৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আমন ধানের চারা সংকটের কারণে চারার চাহিদা যোগান দেয়ার জন্য কৃষকরা পরস্পরকে সহযোগিতা করে আসছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে প্রণোদনাও দেয়ার সিদ্ধান্ত আসছে। আশা করি তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে এবং বিভিন্ন জমিতে সবজি চাষে কৃষকদের বীজ দেয়া হচ্ছে।