যান্ত্রিক ত্রুটিতে গত ৬ জুন থেকে অকেজো হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের একমাত্র সিটি স্ক্যান মেশিন। ১৬ দিন অকেজো থাকার পর ২৩ জুন অবশেষে মেশিনটি সচল হয়। তবে সচল হওয়ার দেড় মাস না যেতেই (৪০ দিনের মাথায়) প্রায় ৭ কোটি টাকা দামের মেশিনটি এখন ফের অকেজো। একটি পার্টস নষ্ট হওয়ায় গত ৪ আগস্ট থেকে হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের একমাত্র এই সিটি স্ক্যান মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এতে ২০ দিন ধরে সরকারি কম খরচের এই সিটি স্ক্যান সেবাও বন্ধ রয়েছে গরীবের হাসপাতাল খ্যাত চমেক হাসপাতালে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গরিব–অসহায় রোগীরা। হাসপাতালের কম খরচের সেবা বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে কয়েকগুণ বেশি ফি–তে বেসরকারি ল্যাব–ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই সেবা নিতে হচ্ছে তাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরীক্ষা ভেদে সিটি স্ক্যান বাবদ চমেক হাসপাতালে ফি ২ হাজার ও ৪ হাজার টাকা। কিন্তু চমেক হাসপাতালের ২ হাজার টাকার এ ফি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৩ হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। আর হাসপাতালের চার হাজার টাকার এ ফি বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যান্ত্রিক ত্রুটিতে সিটি স্ক্যান মেশিন অচল হয়ে পড়ার পরদিনই (৫ আগস্ট) চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগ। এ তথ্য নিশ্চিত করে হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার আজাদীকে বলেন, মেশিন অচল হওয়ার বিষয়টি আমরা চিঠির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। পরে মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসে মেশিনটি দেখেও গেছেন। তবে এখনো মেশিন সচল হয়নি।
অবহিত হওয়ার পরপরই মেশিনটির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে খবর দেয়া হয় জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসে মেশিনটি দেখেছেন। মেশিনটি সচলকরণের চেষ্টা করছেন। তবে তারা জানিয়েছে, মেশিনটির একটি পার্টস নষ্ট হয়ে গেছে। ইনভার্টার নামে এই পার্টস দেশের বাইরে (জাপান) থেকে আনাতে হচ্ছে। যার কারণে মেশিনটি সারাতে সময় লাগছে। অবশ্য আর ৪/৫ দিনের মধ্যেই সিটি স্ক্যান মেশিনটি সচল ও ব্যবহার উপযোগী হবে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা এমন কথা দিয়েছেন বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক।
মেশিনটির ওয়ারেন্টি সময়সীমা শেষ হয়নি জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, সিটি স্ক্যান মেশিনটির ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি সময়সীমা আছে। যার কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেশিনটি সচলকরণে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাধ্য। এজন্য যা–ই বলুক, যত দ্রুত সম্ভব এই মেশিন সচল করতে তাদের (সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে) বলে দেয়া হয়েছে বলে জানান চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়ার পর হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে সিটি স্ক্যান মেশিনটি স্থাপনের কাজ শুরু করে সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড।
স্থাপনের কাজ শেষে ২০১৯ সালের মার্চে এই সিটি স্ক্যান মেশিনের সেবা পুরোদমে চালু হয়। তবে সেবা চালুর পর থেকে কিছুদিন পরপরই মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ছে। এতে করে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গরীব–অসহায় রোগীদের।
প্রসঙ্গত, হাসপাতালের ভারি মেডিকেল যন্ত্রপাতির মধ্যে আগে থেকেই এমআরআই, দুটি ক্যাথল্যাবের (এনজিওগ্রাম) একটি, ব্র্যাকিথেরাপি ও মেমোগ্রাফি মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এর মাঝে রেডিওলজি বিভাগের একমাত্র এমআরআই মেশিনটি গত বছরের (২০২২ সালের) মে মাস থেকে অকেজো। এর দাম প্রায় দশ কোটি টাকা।
হৃদরোগ বিভাগে থাকা দুটি এনজিওগ্রাম মেশিনের একটি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে (দেড় বছরের বেশি) অকেজো। মেশিনটির দাম ৫ কোটি টাকা। একটি টিউব নষ্ট হওয়ায় মেশিনটি আর কাজ করছেনা। ওই টিউবের দামও কোটি টাকার কম নয়। ওয়ার্ডে থাকা অপর মেশিনটিও প্রায় সময় ডিস্টার্ব দিচ্ছে। যেকোন সময় এই মেশিনটিও অচল হয়ে যেতে পারে বলে ওয়ার্ডের ডাক্তাররা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ক্যান্সার ওয়ার্ডে নারীদের জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত একমাত্র ব্র্যাকিথেরাপি মেশিনটি গত বছরের ৬ জুন থেকে অকেজো। মেশিনটির দাম প্রায় ৬ কোটি টাকা। ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই মেশিন চট্টগ্রামের আর কোথাও নেই। এখন জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের ব্র্যাকিথেরাপি দিতে হলে ঢাকা যাওয়া ছাড়া নিরুপায়।
রেডিওলজি বিভাগে থাকা ম্যামোগ্রাফি মেশিনটিও অকেজো হয়ে আছে বছরের বেশি সময় ধরে। নারীর স্তনে টিউমার–ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক এই যন্ত্র। যান্ত্রিক ত্রুটিতে গত বছরের শুরু থেকে এই সেবাও বন্ধ রয়েছে। মেশিনটির দাম কোটি টাকার কম নয়। সর্বশেষ অচল মেশিনের এ তালিকায় যুক্ত হল রেডিওলজি বিভাগের সিটি স্ক্যান মেশিনও। জাপানি হিটাচি ব্র্যান্ডের (১২৮ স্লাইস) অত্যাধুনিক এ মেশিনের দাম প্রায় ৭ কোটি টাকা বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।