আজ ‘৫০তম বাংলাদেশ লিও দিবস’। বাংলদেশের লিওইজম সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ২৩শে আগস্ট লিও ইজমের শুভ সূচনা হয়। ঢাকা ধানমণ্ডি লায়ন্স ক্লাবের অভিভাবকত্বে ‘কমলাপুর লিও ক্লাব’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে লিও আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। এই আন্দোলনের জনক এক মহান ব্যক্তিত্ব যিনি প্রথম বাংলা সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ এর সফল নির্মাতা ও প্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন আব্দুল জব্বার খাঁন। তিনি লিওদের মাঝে বাংলাদেশের লিওইজমের জনক নামে খ্যাত। অনেক রক্ত ও ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি সবুজ শ্যামলীমা বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে গৌরবজনক স্থান অর্জন করে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশে যুবকদের মাঝে বিরাজ করছিল অস্থিরতা ও চরম হতাশা। জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ যুব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে ও সেবার জগতে তাদের অনুপ্রাণিত করতে মনস্থ করলেন মরহুম লায়ন আব্দুল জব্বার খান। মূলত তাঁরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক সেবা সংগঠন লায়ন্স ক্লাবের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক যুব সেবা সংগঠন ‘লিও ক্নাব’ আত্মপ্রকাশ করে। আজকের এই দিনে আমরা সেই মহান লায়ন যাঁর মাধ্যমে আমাদের যুব সমাজ সেবার আঙিনায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারছে তাঁকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি এবং সেই সাথে বাংলাদেশের লায়নইজমের জনক মরহুম লায়ন এম,আর, সিদ্দিকীকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। লিও শব্দের অর্থ নেতৃত্ব, অভিজ্ঞতা ও সুযোগ। লিও মনোগ্রামে দেখা যায় দুইটি সিংহ দুই দিকে তাকিয়ে আছে। এর অর্থ হচ্ছে একটির মাধ্যমে লিওরা তাকিয়ে থাকবে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে যেখানে তারা প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে অন্যের দিকে। অন্যটির মাধ্যমে লিওরা স্ব–স্ব পেশায় আত্মনিয়োগ করে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।
লিও হওয়ার যোগ্যতা: আপনি যদি একজন সমাজ সচেতন তরুণ কিংবা তরুণী হন এবং বয়স যদি ১২ বৎসর থেকে ৩০ বৎসরের মধ্যে থাকে অবশ্যই আপনি লিও সদস্য হবার যোগ্যতা রাখেন। আন্তর্জাতিক ভাবে লিও সদস্য দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে আলফা বা নিয়মিত সদস্য, যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বৎসর। ওমেগা বা সিনিয়র সদস্য যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বৎসর। আপনাকে এই কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, লিও সদস্য পদ পেতে হলে আপনাকে সৎ চরিত্রবান ও সেবার মনোভাব সম্পন্ন হতে হবে এবং সমাজ রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপে জড়িত থাকা যাবে না।
লিও ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য: ১৯৫৭ সালে গঠিত এভিংটন হাইস্কুল লিও ক্লাবের অভিভাবক গ্ল্লেন সাইড লায়ন্স ক্লাব চারটি মহৎ উদ্দেশ্য সাধন করার দায়িত্ব দেন। দায়িত্বগুলো হল: স্কুলের প্রশাসন ও অনুষদের সহযোগিতায় ছাত্রদের নেতৃত্বদান, পান্ডিত্য অর্জন, পৃথক দায়িত্ব, সততা ও অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা অর্জনে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য স্কুলের সেবা করা। * সমাজের অভাবগ্রস্তদের প্রতি সাড়া দিয়ে সমাজের সেবা করা। সরকার ও নাগরিকদের উন্নয়নে দেশের জন্য সেবা করা। * লিও সদস্যদের বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সমঝোতার বন্ধনে আবদ্ধ করা।
বাংলাদেশ লিওইজমের সুবর্ণজয়ন্তী:
আজ বাংলাদেশের লিও সদস্যরা বাংলাদেশ লিওইজমের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে। আমরা লিওরা জীবনের অর্ঘ্য সাজাই আশার কুসুমে, স্বপ্নের বুননিতে গড়ি অনাগত জীবনের নকশীকাথাঁ। বিগত দিনের জীর্ণতার নাগপাশ ছিন্ন করে অনাগত দিনের রক্তিম সূর্যের উষ্ণ আলিঙ্গনে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রতিকূলতা অক্টোপাসের মত সহস্র বেষ্টনীতে ঘিরে আছে আমাদের যুব সমাজকে। আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় হোক মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত যুব সমাজ প্রতিষ্ঠা করে ফুলের মত সুভাসিত জীবন গড়ি। গভীর ধ্বংস স্তুপের মাঝে দাঁড়িয়েও আমরা নির্মাণের কঠিন শপথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সকল আঁধার সরিয়ে আলোকিত ঝর্নাধারার ধুইয়ে দিয়ে শান্তির নীলাকাশ প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে লিওদের। সকল ভালোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান আর অসুন্দরের প্রতি ক্ষমাহীন সংগ্রাম আমাদের। মনে রাখতে হবে এই বিশ্বে যা কিছু ভালো তা বিশ্বের সকল মানুষের অধিকার। এই অধিকার আদায়ের নাম হোক লিওইজম। আমরা এমন একটি দিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন স্বপ্নের পাখীরা নীড় খুঁজে পাবে, চিকিৎসাহীন মৃত্যু করবে না যখন উপহাস, দুস্থের মুখে হাসি আর অন্ধের চোখে আলো সেদিন থাকবে নিশ্চিত। আত্ম সচেতন ব্যক্তি ও জাতিই পারে বিশ্বের মাঝে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। এই জন্য যে উপকরণের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে নেতৃত্ব, অভিজ্ঞতা, মহতী উদ্যোগ ও সুষ্ঠু রিকল্পনা। আমাদের একান্ত বিশ্বাস বাংলাদেশের সোনার ছেলে মেয়ে বলে খ্যাত প্রিয় লিও ভাই বোনেরা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বের মানচিত্রে স্থায়ীরূপ দিতে সক্ষম হবেন। আমাদের লিও ভাই– বোনেরা সুশিক্ষা গ্রহণ, সৎচরিত্র গঠন ও আর্ত মানবতার সেবায় অংশ গ্রহণ করে আগামী দিনের আলোকিত মানুষ হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন।
লিও জেলা ৩১৫–বি ৪: মাল্টিপল লিও জেলা ৩১৫ এর অন্যতম সক্রিয় লিও জেলা ৩১৫–বি–৪, মাল্টিপল লিও জেলা ৩১৫ এর অধীন ৭টি লিও জেলা হচ্ছে এ–১, এ–২, এ–৩, বি–১, বি–২, বি–৩ বি–৪। লিও জেলা ৩১৫–বি–৪ বাংলাদেশ এর অধীন ৪৩টি সক্রিয় লিও ক্লাবস রয়েছে যার মধ্যে আলফা লিও ক্লাব ১টি, বাকী ৪২টি ওমেগা লিও ক্লাব। লিও জেলা ৩১৫–বি–৪ (১৯৯৭–৯৮) লিও সেবা বর্ষে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিাকালীন লিও জেলা সভাপতি হিসাবে নেতৃত্ব দেন ‘WE ARE FOR EACH OTHER’ শ্লোগানের প্রবক্তা লায়ন্স সেবা বর্ষ (২০১৭–২০১৮) সফল জেলা গভর্নর যিনি ডাক দিয়েছিলেন ‘CHILDREN FIRST’ লায়ন মো. মনজুর আলম মনজু – পি.এম.জে.এফ। স্থায়ী প্রজেক্ট ‘ONE CLUB, ONE CHILD’ আজ সবারি কাছে সমাদৃত। প্রতিষ্ঠাকালীন লিও জেলা সচিব ছিলেন বর্তমানে রিজিয়ন চেয়ারপার্সন হেড কোয়ার্টার (এডমিন) লায়ন ডা. এম. জাকিরুল ইসলাম। বর্তমানে লিও জেলা ৩১৫–বি–৪ এর অধীনে ৪৩টি লিও ক্লাবের মাধ্যমে ১৮৮১ জন লিও সদস্য সেবা কর্মকাণ্ডে নিজেদের সর্বদা নিয়োজিত রেখেছেন। লিও জেলা সভাপতি লিও আতিক শাহরিয়ার সাদিফ, সদ্য প্রাক্তন সভাপতি লিও ইরফান মোস্তফা, লিও জেলা সহ–সভাপতি লিও মো. ইসমাইল বিন আজিজ, লিও জেলা সচিব লিও মো. শওকত হোসাইন, লিও জেলা কোষাধ্যক্ষ লিও রাফিদ মো. আহনাফ লিও জেলা ৩১৫–বি–৪ এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মাল্টিপল লিও জেলা ৩১৫–বি–৪ এর বাংলাদেশ এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন লিও কাজী লামিয়া করিম। এছাড়া সদ্য প্রাক্তন সভাপতি, লিও রেজাউল করিম ভুঁইয়া, সহ–সভাপতি লিও মো. হাসানুল ইসলাম, জেলা সচিব লিও মো. আকিব দীপু ও জেলা কোষাধ্যক্ষ হিসাবে লিও আতিক শাহরিয়ার সাদিফ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মাল্টিপল জেলা ৩১৫ এর অধীনে ২১৫ টি লিও ক্লাব ৮৩২১ লিও সদস্য বাংলাদেশের লিওইজমে সেবা কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রয়েছেন। সারা বিশ্বে ৭৬০০ অধিক লিওক্লাবের মাধ্যমে ১৭২৪১৯ জন লিও সদস্য সেবা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন। লিওজেলা–৩১৫–বি–৪ কে সুচারুরূপে পরিচালিত করছেন প্রাক্তন লিওনেতা, বর্তমানে লিও ক্লাবস চেয়ারপার্সন লায়ন এ.কে.এম নবীউল হক সুমন ও যুববিনিময় চেয়ারপার্সন লায়ন শুভনাজ জিনিয়া – এম.জে.এফ।
লায়ন্স জেলা ৩১৫–বি–৪, বাংলাদেশ: বর্তমান লায়ন্স সেবা বর্ষ (২০২৩–২০২৪) লায়ন্স জেলা ৩১৫–বি–৪, বাংলাদেশ এর নেতৃত্বে রয়েছেন সম্মানিত জেলা গভর্নর ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির অন্বেষায়’ শ্লোগানের প্রবক্তা ‘MISSION FOR PEACH & PROSPERITY’ লায়ন এমডি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী –পি.এম.জে.এফ। সদ্য প্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন শেখ শামশুদ্দিন আহমেদ সিদ্দিকী –পি.এম.জে.এফ, ১ম ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন কহিনুর কামাল – এম.জে.এফ, ২য় ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন মোসলেহ উদ্দিন আহমদ অপু –এম.জে.এফ কেবিনেট সেক্রেটারী লায়ন মো. আবু বক্কর সিদ্দিকী – পি.এম.জে.এফ, কেবিনেট ট্রেজারার লায়ন মো. ইমতিয়াজ ইসলাম – এম.জে.এফ, জয়েন্ট কেবিনেট সেক্রেটারী লায়ন– এ.জেড.এম সাইফুল ইসলাম টুটুল, জয়েন্ট কেবিনেট ট্রেজারার লায়ন মোঃ ইউসুফ চৌধুরী – এম.জে.এফ নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আসুন, আমরা পরম সম্মানিত জেলা গভর্নর লায়ন এমডি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী– পি.এম.জে.এফ এর যুগোপযোগী ডাক ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির অন্বেষায়’ ‘MISSION FOR PEACH & PROSPERITY’ সফল বাস্তবায়নের জন্য একযোগে কাজ করি এবং সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠির জন্য কিছুটা আত্মত্যাগ করে সুপ্রিয় লিও জেলা সভাপতি লিও আতিক শাহরিয়ার সাদিফ এর নেতৃত্বে, বাংলাদেশ লিওইজমের সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির অন্বেষায়’পৃথিবীকে পরিবর্তন করার লক্ষ্যে সমাজের কম ভাগ্যবান লোকদের জন্য কিছু করার প্রত্যয়ে লিওদেরকে সঠিক পথে পরিচালনয়ায় অংশ গ্রহণ করি।
লেখক : রিজিয়ন চেয়ারপার্সন হেডকোয়ার্টার, লায়ন্স ক্লাবস্ ইন্টারন্যাশনাল, চিকিৎসক ও সমাজকর্মী।