এবার ইলিশ কম কেন

জালে পড়ছে কম, খরচ উঠছে না জেলেদের

| বুধবার , ২৩ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর আকমল আলী ঘাটে সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, সাগর থেকে আসা ট্রলারগুলো থেকে ছোট ছোট খাঁচায় মাছ নিয়ে আসছেন জেলেরা। শ্রীধাম দাশ নামে এক জেলেকে দেখা গেল বেশ সক্রিয়। তিনি জানান, প্রতিদিন জোয়ারভাটার উপর নির্ভর করে তারা তিন বার সাগরে যান মাছ ধরতে। শ্রীধামের ভাষ্যে, মাছ ধরার খরচ এখন বেড়ে গেছে। প্রতিদিন তেল খরচ, জেলেদের বেতনসহ সাত থেকে আট হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু খরচের অনুপাতে এবার মাছ পাওয়ার পরিমাণ অনেক কম। তার সাথে যখন কথা হচ্ছিল, তখন জোয়ারের সময় সাগরে যাওয়া নৌকাটি ফিরে এসেছে। সেই নৌকায় ইলিশ এসেছে মোটে চার থেকে পাঁচ কেজি। অথচ ট্রলারের এই যাত্রায় ৪ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে বলে জানান এই জেলে। এবার ইলিশও ধরা পড়ছে কম জানিয়ে শ্রীধাম বলেন, গত অমাবস্যার জো’তে (জোয়ার) ভালো মাছ পাওয়া যায়নি। সামনে পূর্ণিমার জো আসছে। তাই আশায় আছি, এ জো’তে কিছু বেশি মাছ পাব। সবমিলিয়ে খরচটা তুলে আনতে পারব। অন্য জেলেরাও বলছেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর গত ২৩ জুলাই রাত থেকে তারা সাগরে মাছ ধরা শুরু করলেও শুরুতে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ট্রলার ফিরে আসতে হয়েছে। আবার যারা সাগরের তীরবর্তী এলাকা থেকে মাছ ধরেন, তারাও স্রোতের কারণে সাগরে যেতে পারেননি। এখন সাগর শান্ত হলেও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।

মাছের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়। এরপর থেকেই মূলত শুরু হয় ইলিশ ধরার মৌসুম। জেলেরা এখন হতাশ হলেও মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, এখন তেমন পাওয়া না গেলেও কিছু দিনের মধ্যে ইলিশে ভরে উঠবে জেলেদের জাল।

চট্টগ্রামের জেলেরাত সাগরে তারা মাছ ধরতে যান দুই ভাবে। কেউ কেউ ছোট নৌকা নিয়ে প্রতিদিন মাছ ধরতে যান, আবার কেউ কেউ টানা কয়েক দিনের জন্য যান গভীর সাগরে। চট্টগ্রাম থেকে গভীর সাগরে যারা মাছ ধরতে যান, তাদের মধ্যে কিছু অংশ থাকে কুতুবদিয়া সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ডের আশেপাশে। জেলেদের ভাষায়, সেগুলো সাদা জালের ট্রলার (ছোট ট্রলার)। আর কিছু ট্রলার যেগুলো চট্টগ্রাম পাড় হয়ে বরিশাল, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় গভীর সাগরের মাছ ধরতে যায় সেগুলোকে তারা লাল জালের ট্রলার বলে থাকেন।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার গহিরা এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর গত ৩০ জুলাই তার তিনটি ট্রলার পাঠিয়েছিলেন সাগরে। ঝড়ের কবলে পড়ে তার একটি ট্রলার নিখোঁজ হয়। বাকি দুটি ট্রলারও প্রত্যাশিত মাছ আনতে পারেনি। রহিম বলেন, তাদের সাদা জালের একটি ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গেলে বরফ, জেলেদের বেতনসহ অন্যান্য কিছু মিলিয়ে কমপক্ষে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। সে অনুযায়ী মাছ মিলছে না।

সম্প্রতি দুটি ট্রলার সাগরে পাঠানো হলেও যে পরিমাণ মাছ পাওয়া গেছে, তা বিক্রি করে আড়াই লাখ টাকা আয় হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কিন্তু সেগুলোর পেছনে খরচ হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি। গত বছর নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরপরই সাগরে প্রচুর মাছ পাওয়া গিয়েছিল, এবার তেমন পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান রহিম।

চট্টগ্রাম নগরীর ফিশারী ঘাট এলাকার ট্রলার মালিক মনির আহম্মেদও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, লাল জালের ট্রলারে যা একটু মাছ পাওয়া যাচ্ছে, সাদা জালের ট্রলারে তো কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। মনিরের দাবি, সাগরে একবার তার ট্রলার (লাল জাল) পাঠাতে খরচ হয় ৩ লাখ টাকা। তেলের দাম বেশি হওয়ায় এ বছর খরচটা বেড়েছে। কিন্তু আগের বছরগুলোতে এসময়ে একেক বার ৬০ থেকে ৭০ মন ইলিশ মাছ পাওয়া গেলেও এবছর সে পরিমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। দুই দফায় তার ট্রলারে ১৬ ও ২২ মন করে মাছ সংগ্রহ করতে পেরেছেন জানিয়ে মনির বলেন, খরচ উঠে এলেও লাভ আসেনি।

আকমল আলী ঘাট থেকে রোববার বিকালে ভাটার সময়ে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন যতীন্দ্র জলদাস নামে এক জেলে। জাল গোছাতে গোছাতে তিনি বলেন, ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার পর কয়েক দিন সাগরে গেলেও তেমন মাছ পাননি। উল্টো সাগর উত্তাল থাকায় স্রোতে জাল ছিঁড়ে যায়। এখন সাগর শান্ত থাকার পরও প্রত্যাশিত পরিমাণে ইলিশ পাচ্ছে না যতীন্দ্র, তবে আশায় আশায় প্রতিদিন যাচ্ছেন সাগরে।

তার মতো অন্য জেলেদের আশার বাণী শোনালেন চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ। তিনি বলেন, এবছর ইলিশ পাওয়া যাবে নাএমনটা বলার সময় এখনও আসেনি। মাছ আসা শুরু হয়েছে। অমাবস্যাপূর্ণিমা তিথীতে ইলিশ মাছের বিচরণের একটা সম্পর্ক আছে। তাই আগামী জো’তে মাছ পাওয়ার আশা করা যাচ্ছে।

এবার এখনও মাছ না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস বলেন, জলবায়ুজনিত পরিবর্তনগুলো ইলিশের জীবন চক্রের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাত দেরিতে শুরু হওয়ায় ইলিশ মাছের প্রজনন ও মাইগ্রেশন পিছিয়ে যাচ্ছে। আগে মেজুনে বৃষ্টিপাত শুরু হলেও এবার তা হয়েছে জুলাইয়ের শেষে। যেটা ইলিশের লাইফ সাইকেলের উপর প্রভাব পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই ভাইয়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড, আটজনের যাবজ্জীবন
পরবর্তী নিবন্ধআগামী বছর ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়বে চট্টগ্রাম বন্দরে