রেল সচিব হুমায়ুন কবির বলেছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ দ্রুত সংস্কার করে অক্টোবরেই দোহাজারী–কক্সবাজার রেল যোগাযোগ চালু হবে। তিনি বলেন, টেকনিক্যাল টিমের সঙ্গে বসে দ্রুত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন ঠিক করা হবে। সেপ্টেম্বরের দিকে সব কাজ শেষ করে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ট্রায়াল রানের পর একই মাসের শেষ সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথ চালু হবে। প্রকল্পের শুরুতে যে পরিমাণ কালভার্ট ব্রিজ রাখা হয়েছিল, স্থানীয়দের দাবিতে তার চেয়ে আরও অনেক বেশি কালভার্ট–ব্রিজ করা হয়েছে জানিয়ে রেল সচিব বলেন, প্রয়োজন হলে আমরা আরও কিছু কালভার্ট করে দেব, যাতে ভবিষ্যতে পানি আর না হয়। শুক্রবার সকালে সাতকানিয়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ পরিদর্শনে এসে তিনি এসব কথা বলেন। এখানে উল্লেখ্য, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সমপ্রতি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নির্মাণাধীন দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন। রেললাইনের নিচ থেকে মাটি–পাথর সরে লাইন একে–বেঁকে গেছে বিভিন্ন অংশে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, সারাদেশের সঙ্গে বিশেষ করে চট্টগ্রামের সঙ্গে পর্যটননগরী কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ স্থাপন একসময় স্বপ্নই ছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিচ্ছে সরকার। ২০২৩ সালেই কাজ শেষের লক্ষ্য নিয়ে দ্রুত এগোচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, অক্টোবরের মধ্যেই রেলে চেপে কক্সবাজার ভ্রমণে যেতে পারবেন পর্যটকরা। রেল সচিবও সেই আশাবাদ ব্যক্ত করলেন। তাঁরা জানান, রেল চালু হলে পর্যটক যাতায়াত সহজ হওয়ার পাশাপাশি স্বল্প সময়ে ও কম খরচে কৃষিপণ্য, মাছ, লবণ পরিবহন করা যাবে। এতে কক্সবাজারের পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
বলা জরুরি যে, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণে পর্যটন নগরীর সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি বহুদিনের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার পাশাপাশি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের দাবি দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন সমপ্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয়। পর্যটনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সরকার দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথে আগামী অক্টোবরেই পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের সিংহভাগ কাজও শেষ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু হবে। দৈনিক যাতায়াত করতে পারবে প্রায় ১ লাখ পর্যটক। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার লাইন বাংলাদেশ রেলওয়ের এমনএকটি রেলপথ। যেখানে যাত্রাপথে কখনো চোখে পড়বে নদীর সৌন্দর্য। মুগ্ধ করবে টিলা–পাহাড়ি এলাকার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য। যেতে যেতে কখনো দুই ধারে দেখা মিলবে বিস্তীর্ণ ধানখেতের নয়নাভিরাম দৃশ্য। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলতি পথের এই মনোরম পরিবেশ দেখার সুযোগ করে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই রেলপথ পর্যটন খাত ছাড়াও কক্সবাজারের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে এই অঞ্চলের মৎস্য সম্পদ, লবণ, রবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ পণ্য পরিবহনব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক সহজ হবে। ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যটন নগরীর সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। প্রধানমন্ত্রী ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডোয়েল গেজ ও সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথ চালুর খবরে সবার মনে বিরাজ করছে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস। তাঁরা বলেন, শতাব্দীকালের দাবি কক্সবাজার রেলপথ এখন স্বপ্ন নয়–বাস্তব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় চলতি বছরেই রেল আসার প্রতীক্ষায় রয়েছে কক্সবাজারবাসী। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেল চালু হলে অবশ্যই দরিয়ানগরের পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে।
পর্যটন বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘সস্তায় আসা যাওয়া– সস্তায় থাকা খাওয়া’ এটি পর্যটন বিকাশের মন্ত্র। চলমান সময়ে সারাদেশ থেকে কক্সবাজার আসতে আকাশপথ ছাড়া স্থলপথে ভোগান্তি পোহাতে হয়। রেলযোগাযোগ সচল হলে যাতায়াত সহজতর হবে। তখন কম খরচে ভোগান্তিহীন কক্সবাজার পৌঁছানো গেলে পর্যটক সমাগম অবশ্যই বাড়বে।