আমদানি কমে গেছে। কমে গেছে জাহাজের আনাগোনাও। খোলা পণ্যবাহী জাহাজ না থাকায় গত তিনদিন ধরে বন্দরের পাঁচটি জেটির মধ্যে দুইটি খালি যাচ্ছে। অপরদিকে কন্টেনার জাহাজের জেটির জন্যও অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা নেই বললেই চলে। সিঙ্গাপুর, কলম্বো কিংবা মালয়েশিয়া থেকে আসা কন্টেনার জাহাজ সরাসরি বার্থিং নিচ্ছে জেটিতে। আমদানি বাণিজ্যে ধস নামায় চট্টগ্রাম বন্দরে এমন অচিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে ১৩টি সাধারণ বার্থ, চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনালে (সিসিটি) ৩টি জেটি নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে ৫টি জেটি, ২টি ডলফিন জেটি, এবং ৬টি রিভার মুরিং জেটি মিলে একই সাথে ৩২/৩৩টি জাহাজ বার্থিং দেয়া যায়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১৭টি মূল জেটির মধ্যে ১ নম্বর জেটি এখন আর হিসাবে ধরা হয় না। ২ থেকে ১৩ নম্বর পর্যন্ত জেটির মধ্যে ১২ নম্বর জেটিতেও জাহাজ ভিড়ানো হয় না। সাধারণ কার্গো বার্থের ১১টিতে জাহাজ বার্থিং দেয়া হয়। এরমধ্যে ৭টি জেটিতে খোলা পণ্যবাহী জাহাজ এবং বাকি ৪টিতে কন্টেনার জাহাজ বার্থিং দেয়া হয়। এছাড়া সিসিটির ২টি এবং এনসিটির ৪টি মিলে ১০টি জেটিতে কন্টেনার জাহাজ ভিড়ানো হয়। মাঝেমধ্যে চাপ বেশি থাকলে জেনারেল কার্গো বার্থের মধ্যে কন্টেনার জাহাজের জন্য একটি জেটি বাড়িয়ে দেয়া হয়। এনসিটি ১ নম্বর জেটিতে শুধুমাত্র পানগাঁও টার্মিনালের জাহাজ ভিড়ানো হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি এবং এনসিটির সবগুলো জেটিতে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন রয়েছে। বাকি জেটিগুলোতে শোর হ্যান্ডলিং ক্রেন দিয়ে কার্গো এবং কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়। খোলা পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়ানোর জন্য যে ৭টি জেটি রয়েছে তার মধ্যে দুইটি গত তিনদিন ধরে খালি যাচ্ছে। ৬ এবং ৮ নম্বর জেটিতে কোনো জাহাজ বার্থিং দেয়া হয়নি। এখানে বার্থিং দেয়ার জন্য বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ কোনো জাহাজও নেই।
অপরদিকে বন্দরের ১০টি জেটিতেই কন্টেনার জাহাজ হ্যান্ডলিং করে। গতকাল ওই ১০টি জেটিতে জাহাজ বার্থিং দেয়ার পর বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ আর কোনো কন্টেনার জাহাজ ছিল না। বিদেশ থেকে কন্টেনার নিয়ে আসা জাহাজ সরাসরি জেটিতে বার্থিং নেয়ার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
সূত্র জানায়, বাজেট পরবর্তী সময়ে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে নতুন গতিশীলতা তৈরি হয়। আগস্ট–সেপ্টেম্বর মাসে বন্দরে জাহাজের আনাগোনা বেশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। এই সময় বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজের জট লেগে যায়। অথচ এবার একেবারে অচিন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বহির্নোঙরেও কোনো জাহাজ নেই। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি শূন্য থাকার ব্যাপারে গতকাল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, আমদানি কমেছে। তাই জাহাজ আসার পরিমাণ কমে গেছে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় একাধিক আমদানিকারক গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমদানি বাণিজ্যে সংকট চলছে অনেকদিন ধরে। ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকট এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন ব্যাংক শতভাগ মার্জিন ছাড়া এলসি খুলছে না, রেশনিং করছে। তাই আমদানির স্বাভাবিক গতি আর নেই। তাছাড়া দেশে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য ব্যবহার কমে গেছে বলে উল্লেখ করে একজন আমদানিকারক বলেন, ক্রেতারা পণ্য কম কিনছেন। আগে আমরা যে পরিমাণ চাল ডাল তেল চিনি বিক্রি করতাম, এখন গড়ে তার থেকে বিশ শতাংশ কম বিক্রি করছি। আমদানি কমে যাওয়ার প্রভাব তো বন্দরে পড়বে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, বিগত অর্থ বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৪ হাজার ২৫৩টি জাহাজ কন্টেনার ও খোলা পণ্য নিয়ে এসেছিল। আগের অর্থ বছরে এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ২৩১টি। চলতি বছর এই সংখ্যা কিছুটা কমে যাবে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে।












