ডেঙ্গু এক যুদ্ধের নাম

প্রতিমা দাশ | রবিবার , ১৩ আগস্ট, ২০২৩ at ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ

ডেঙ্গুর সাথে লড়াই করতে করতে মনে হয়েছে অসুখবিসুখ ব্যাপার টাকে যতটা সাদামাটা সাধারণ ভেবেছি আসলে কিন্তু তা নয়। রীতিমতো একটা যুদ্ধ। নিজেকে ভালো রাখার আপ্রাণ যুদ্ধ। একটা সাধারণ মশার কামড় যে মানুষের জীবনটাকে কতটা অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যায় তা এই কয়দিনে বুঝলাম। আমার ঘরে যেহেতু আমি টুকটাক পাতাবাহার গাছ দিয়ে সাজিয়ে রাখি তাই ডেঙ্গু আসার আগে থেকেই সচেতন ছিলাম। এমন কি আমার ছাদ বাগান ও দুইদিন পর পর প্রতিদিন পরিষ্কার করতাম। কোথাও কোনো জমানো পানি রাখিনি।

সেইদিন ১১ ই জুলাই.. হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই দুপুরবেলা গা কাঁপিয়ে মারাত্মক জ্বর এলো। আমার বর আর দেরি না করে পরের দিন সকালে গিয়ে ব্লাড পরীক্ষা করাতে নিয়ে গেল। বিকালে রিপোর্ট ডেঙ্গু পজেটিভ। প্রথমবার শোনার পর একটুও ভেঙে পড়িনি। নিজেকে নিজে বোঝাতে শুরু করলাম আমাকে যেভাবেই হোক মানসিকভাবে ফিট থাকতে হবে আমাকে ভালো হতে হবে। তার পরেরদিন দুপুরবেলা ১০৪ ডিগ্রির কাছাকাছি জ্বর। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। দুই ছেলে তখন কোচিংয়ে। নিজের সেবা নিজেই শুরু করলাম।

মারাত্মক জয়েন্টের ব্যথা সাথে জ্বর তো আছেই। এইসময় ভাত কিংবা যেকোনো খাবারের দিকে তাকাতেই ইচ্ছা করেনি। টানা ৬ দিন শুধু ফলের রস খেয়েছিলাম, এমনকি সুপ ও খেতে ইচ্ছা করেনি। তারপর মানসিকভাবে এটাই নিজেকে বোঝাতাম আমাকে আমার সন্তানদের জন্য সুস্থ হতে হবে। প্রতিদিন তিনটা ডাবের জল খেয়েছি। সুপ খেতাম প্রত্যেকদিন। পাশাপাশি মালটা, পেঁপে, আম, কলা, লটকন, পেয়ারা যতটুকু পেরেছি ফলগুলো খেয়েছি। প্রতিদিন একটা কিংবা দুটো করে ওরস্যালাইন খেয়েছি। এতে শরীরের পানি শূন্যতা অনেকটা কমে গেছে। আর দিনের বেশিরভাগ সময়ই মশারির ভিতরে থাকার চেষ্টা করেছি। ডেঙ্গু হলে এটাই পরামর্শ দিবো মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন না। রক্তে প্লাটিলেট ঠিক আছে কিনা দুদিন পরপর রক্ত পরীক্ষা করবেন।

আমার যেহেতু রক্তে প্লাটিলেট ঠিক ছিল তাই আমাকে এ ব্যাপারে আলাদা করে ভাবতে হয়নি। যদি কোনো ডেঙ্গু রোগীর শরীরে প্লাটিলেট কমে যায় তাহলে মিষ্টি কুমড়া কিংবা মিষ্টি কুমড়ার বীজ, পালং শাক, নিয়মিত লেবুর রস, আমলকি, বিটের রস, পেঁপে আর পেঁপে পাতার রস, অ্যালোভেরা কিংবা ঘৃতকুমারীর শরবত খেলে শরীরের প্লাটিলেট বাড়তে সাহায্য করে। ডেঙ্গুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নাপা কিংবা প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোনো ট্যাবলেট খাওয়া যাবে না। আর যেকোনো ধরনের রক্তপাত ডেঙ্গু রোগের জন্য বিপদ সংকেত। যদি পায়খানা প্রস্রাবের সাথে রক্ত যায় কিংবা চোখের কোথাও রক্ত দেখা যায়, মেয়েদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের তারিখ ছাড়াই আগেই পিরিয়ড হয় তাহলে অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। আর যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে স্বাভাবিক ভাবে রাখায় রোগমুক্তির প্রথম ধাপ। মনে রাখতে হবে ডেঙ্গু রোগ একটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদকে সংরক্ষণ করার দাবী
পরবর্তী নিবন্ধভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষ