আর্থসামাজিক মুক্তির জন্যই ছিল যাঁর লড়াই

রাশেদ রউফ | রবিবার , ১৩ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংসতম ঘটনা হলো পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট কালরাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড। পুরো পৃথিবী স্তব্ধ। নেমে আসে শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বাঙালি বিশ্বাসঘাতক হিসেবে বিশ্বে পরিগণিত হয়। নোবেল জয়ী তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেছেন, ‘মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে, তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন তাঁর ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড এবং ইতিহাসের দায়’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে লিখেছেন : কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো? এ প্রশ্নটি সামনে নিয়ে আসলে কয়েকটি বিষয়ের অবতারণা হয়ে থাকে। প্রথমত, বঙ্গবন্ধুর আনিত স্বাধীনতাকে খুনীচক্র এবং তাদের দোসররা মেনে নিতে পারেনি এবং এ চক্রটি স্বাধীনতার পর থেকেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে থাকে। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক মুক্তির প্রকল্প হাতে নেয়ার ফলে বঙ্গবন্ধু এক শ্রেণীর শোষকদের রোষাণলে পড়েন। কারণ, বিপথগামীরা বুঝতে পেরেছিল বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সাধারণ মানুষের জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন চলে আসবে। তৃতীয়ত, তৎকালীন পশ্চিমা গোষ্ঠীর একটি অংশ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারিশমাকে মেনে নিতে পারেনি; কেননা নতুন রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু একের পর এক গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে। চতুর্থত, স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রকে বঙ্গবন্ধু কখনই গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতেন না, তিনি ভাবতেন বাঙালি কখনই বঙ্গবন্ধুর ক্ষতি করতে পারে না। পঞ্চমত, দেশের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য গ্রহণীয় পদক্ষেপের বাস্তবায়নের বিরোধিতাকারীগণই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রভাবে বাঙালি জাতি হাজার বছর পিছিয়ে গেছে উন্নয়ন এবং সামগ্রিকতার স্বার্থে। সারাবিশ্ব পরবর্তীতে বাঙালিকে খুনী রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। কেননা, স্বাধীন দেশের প্রতিষ্ঠাতাকে বাংলার কুটিল চক্র যখন হত্যা করে খুনের মরণনেশায় মেতে উঠে তখন সে দেশটি বিপদাপন্ন হয়ে উঠে বিপথগামী সদস্যের দ্বারা। ভূলুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রিক কাঠামো, নষ্ট হয় রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য।

ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, যেন এর কোনো বিচার না হয়, তার ব্যবস্থাও করে রেখেছে। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে। সেই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করে। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপিজামায়াত সরকার গঠন করলে বিচার কাজ আবার ঝুলে যায়। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়। এর মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। ২০০২ সালে মারা গেছে একজন।

আমাদের ভালো লাগা এখানে যে, মুজিবপ্রেমীরা ক্রমে ক্রমে সংঘটিত হয়ে উঠেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে। সকল বাধাবিপত্তিকে পেছনে ফেলে ঐক্যবদ্ধ হন তাঁরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন সংগ্রাম করেছেন বাঙালির যে আর্থসামাজিক মুক্তির জন্য, সেই মুক্তির জন্য তাঁরা এখনো সংগ্রামরত।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক আজাদী

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোনো আন্তর্জাতিক শক্তি নেই : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধখাড়াভাবে কাটা হচ্ছিল পাহাড়