চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলমের বিরুদ্ধে ‘অর্থ পাচারের’ অভিযোগ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ এবার উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, দুর্নীতি মোকাবেলায় নিষেধাজ্ঞা একটি ‘হাতিয়ার হিসেবে’ কাজ করতে পারে। মঙ্গলবার রাতে পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এস আলমের ‘অর্থ পাচারের’ বিষয়ে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে কি–না জানতে চাওয়া হয়। জবাবে মুখপাত্র মিলার বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে এ ধরনের কার্যক্রম নিয়ে তারা কখনোই আগাম আলোচনা করেন না। সাধারণতভাবে বলতে গেলে, দুর্নীতি মোকাবেলায় নিষেধাজ্ঞা একটি হাতিয়ার হিসাবে কাজ করতে পারে। আমাদের অন্যান্য অস্ত্রও রয়েছে। যেমন, সম্পত্তি জব্দ করা এবং বিচার করার জন্য অংশীদার দেশকে তথ্য দেওয়া।’ খবর বিডিনিউজের।
‘এস আলমের আলাদিনের চেরাগ’ শিরোনামে ৪ অগাস্ট ডেইলি স্টারে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে ‘কমপক্ষে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছেন। যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তিনি ‘নেননি’।
ডেইলি স্টার লিখেছে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য এ পর্যন্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামভিত্তিক বৃহৎ এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সেই তালিকায় নেই। নথি থেকে দেখা যায়, এক দশকে সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং অন্যান্য সম্পদ কিনেছেন। এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপায়ে কাগজপত্র থেকে তার নাম বাদ রাখা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নথির বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশ থেকে ৪০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে বিনিয়োগের জন্য নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বৈধ উপায়ে সিঙ্গাপুরে এক লাখ ৭ হাজার মার্কিন ডলার পাঠিয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানও এস আলমের মালিকানাধীন নয়। পত্রিকায় প্রকাশিত ওই খবর আদালতের নজরে আনার পর তা অনুসন্ধানে রোববার দুদককে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হবে বলে ওই দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিষয়ক সমন্বয়কারী রিচার্ড নেফিউ’র সঙ্গে বৈঠকেও অর্থপাচারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
ওই বৈঠকের পর এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেছিলেন, এস আলমের বিষয়ে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দুদক থেকে কোনো অনুরোধ পেলে সে অনুযায়ী কাজ করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ‘আমরা এ ধরনের কোনো ইনস্ট্রাকশন পাইনি এখন পর্যন্ত। যদি ওই রকম থাকে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যদি আমাদেরকে অনুরোধ করে– তাহলে আমরা আমাদের যেটা করার সেটা আমরা করব, আইনের মধ্যে থেকে।’ যুক্তরাষ্ট্র যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসাবে নিষেধাজ্ঞাকে চিন্তাভাবনা করে থাকে, সেটা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ।
দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের পরামর্শ দিয়ে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মিলার বলেন, ‘নিজেদের সীমানার মধ্যে দুর্নীতিবাজ শক্তিগুলোকে উৎখাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য আমরা বাংলাদেশকে উৎসাহিত করছি।’