শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় হাই কোর্টে রুল শুনানিতে দাঁড়িয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী শোনালেন জাতিসংঘের ‘পর্যবেক্ষণের’ কথা। আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বিচারকদের উদ্দেশে বললেন, আপনার আদালতে এমন একজন ব্যক্তির মামলার শুনানি হচ্ছে, যিনি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিষয়টি জাতিসংঘ সম্পূর্ণটাই অবগত। তারা লিগ্যাল বিষয়ে কনসার্নড। জাতিসংঘ মহাসচিব এ মামলার বিচার পর্যবেক্ষণ করছেন। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি সাহেদ নুর উদ্দিনের হাই কোর্ট বেঞ্চে এই শুনানি হয়। ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন পরে বলেন, আগামীকাল আবারো মহামান্য আদালত বিষয়টি শুনবেন। গত বৃহস্পতিবারও শুনেছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলাল শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। এ মামলায় অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে এসেছিলেন ইউনূস। তার আবেদনে ২৩ জুলাই রুল জারি করে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাশের হাই কোর্ট বেঞ্চ। শ্রম আদালতে অভিযোগ গঠনের আদেশ কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।
রাষ্ট্রপক্ষ ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ গত ৩ আগস্ট রুল শুনানির জন্য বেঞ্চ বদলে দেয়। সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে বলা হয়, বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ওই রুলের ওপর শুনানি শেষ করতে হবে।
এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এর আগেও হাই কোর্টে আবেদন করেছিলেন ইউনূস। সেই প্রশ্নে রুল শুনানি করে বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের বেঞ্চ ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট তা খারিজ করে রায় দেয়। ফলে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের পথ খোলে।
সেই প্রসঙ্গ ধরে ইউনূসের আইনজীবী মামুন গতকালের শুনানিতে বলেন, আগের এক আদেশে মতামতে একটি ভুল ছিল। তাই আমরা আপনার আদালতে ন্যায়বিচার না পাওয়ার শঙ্কার কথা বলেছিলাম। কিন্ত আপিল বিভাগ বলেছেন, আপনার আদালত আগে যেহেতু এই মামলা শুনেছেন, এ কারণে আপনার আদালতে পাঠিয়েছেন।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক তখন বলেন, আপনি তো আমাদের বেঞ্চে না পাঠানোর জন্য রিভিউ করতে পারতেন। আপিল বিভাগ না পাঠালে আমরা শুনানির দিন নির্ধারণ করতাম না।
ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। ইউনূস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে মামলায় বিবাদী করা হয়। শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪–এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয় সেখানে।