বন্যায় ভাসছে সাতকানিয়া চন্দনাইশ

কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কে পানি, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৮ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

বন্যার পানিতে ভাসছে পুরো সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এই দুই উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ। বন্যা কবলিত এলাকার অধিকাংশ বসত ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। শঙ্খ ও ডলুনদী দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল নদীর বাঁধ উপড়ে ২৩ ফুট উচু হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কেরানীহাটবান্দরবান সড়ক ও কেরানীহাটগুনাগরি সড়কের বিভিন্ন স্থানে কয়েক ফুট উঁচু হয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বান্দরবানের সাথে সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার অভ্যন্তরীন সড়ক পানি নিচে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এখনো পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

আমাদের সাতকানিয়া প্রতিনিধি জানান, বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ মেট্রিক টন চাউল ও ৫০ হাজার নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। বন্যা কবলিত অধিকাংশ মানুষের বসত ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। বসত ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ খাবার নিয়ে সংকটে পড়েছে। এছাড়া রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় লোকজন হাটবাজারেও যেতে পারছেন না।

সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের জানান, পৌর এলাকার বন্যা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। বর্তমানে পৌরসভার অধিকাংশ মানুষের বসত ঘরে কোমর সমান পানি রয়েছে। ডলুনদীর বাঁধের উপর দিয়ে ২৩ ফুট উচু হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এলাকার সব রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখনো পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

আমাদের চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় শঙ্খনদের পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বন্যা দেখা দিয়েছে চন্দনাইশ উপজেলায়। টানা বর্ষণের কারণে চন্দনাইশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও গতকাল সোমবার ভোর থেকে শঙ্খনদের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে চট্টগ্রামকঙবাজর জাতীয় মহাসড়কের হাশিমপুর বড়পাড়া এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি মহাসড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। দূর্গম পাহাড়ি জনপথ ধোপাছড়ি ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গতকাল রাত ৯টায় এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত নদের পানি প্রবল স্রোতে লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।

উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামীণ সড়কের উপর দিয়ে দ্রুত বেগে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত রবিবার রাত থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি উপজেলার হাশিমপুর বড়পাড়া এলাকায় চট্টগ্রামকঙবাজার জাতীয় মহাসড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গতকাল সোমবার ভোর থেকে শঙ্খনদের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় বর্তমানে ওই স্থান দিয়ে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আজাদ হোসেন জানান, ভয়াবহ বন্যায় পুরো চন্দনাইশে সবজি ও আউশ ও আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২ হেক্টর সবজি, ২১ হেক্টর আউশ ধান, ৪৫০ হেক্টর আমনের বীজতলা ও ১৫ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে। এতে অপূরনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন চন্দনাইশের কৃষকরা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসান আহসানুল কবির জানান, চন্দনাইশ উপজেলায় পুকুর রয়েছে ৪ হাজার ২০০টি। এরমধ্যে নিম্নাঞ্চলে এ পর্যন্ত দেড় হাজারের মতো পুকুর ডুবে সমস্ত মাছ ভেসে গেছে। পানি বাড়তে থাকায় আরো অসংখ্য পুকুরের মাছও ভেসে যাওয়ার অবস্থায় রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরিজভীর বিরুদ্ধে হিরো আলমের ৫০ কোটি টাকার মানহানি মামলা
পরবর্তী নিবন্ধহালিশহরে গ্যারেজের প্রহরী খুনের দায়ে দুজনের যাবজ্জীবন