বন্ধু

সাইফুল্লাহ কায়সার | রবিবার , ৬ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে ভালো বন্ধু পাওয়া বড় মুশকিল। অনেকের সাথে আপনার সম্পর্ক থাকতে পারে কিন্তু সবাই ভালো বন্ধু নয়। বন্ধুত্বের মর্যাদা সবাই দিতে এবং রক্ষা করতে পারে না। যে ভালো পরামর্শ দিবে এবং বিপদের সময় পাশে থাকবে সে হলো প্রকৃত বন্ধু। বন্ধু কেমন হওয়া উচিত, সেই সম্পর্কে ছোট্ট একটি গল্প উপস্থাপন করছি।

অনেক বছর আগের ঘটনা, একবার এক চাষি তার বাড়ির উঠোনে বসে বিশ্রাম করছিলেন। এমন সময় তার একমাত্র ছেলে ছুটে আসে এবং বাবাকে খবর দেয়, যে রাস্তার ধারের পুকুরে একটি ছেলে ডুবে যাচ্ছে। শুনে চাষী তৎক্ষণাৎ পুকুরের কাছে পৌঁছায়। গিয়ে দেখে তার ছেলের বয়সী একটি ছেলে জলে হাবুডুবু খাচ্ছে। পোশাক পরিচ্ছদ দেখে কোন শহরের ধনীর দুলাল বলে মনে হচ্ছে। সাথে বেশ কিছু বন্ধু বান্ধব থাকলেও তারা সাঁতার না জানায় পারে দাঁড়িয়ে বন্ধুর সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে। চাষী আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে জলে ঝাপিয়ে পড়ে এবং ছেলেটিকে উদ্ধার করেন।

এই ঘটনার দিন দুয়েক পর হঠাৎ একদিন গ্রামের পথে ধুলো উড়িয়ে এক ঘোড়ায় টানা সুসজ্জিত গাড়ি, আগু পিছু অস্ত্রধারী অশ্বারোহী নিয়ে চাষীর বাড়ির সামনে এসে থামলো। চাষী কিছুটা ভয় পেয়েছিল বৈকি। এরপর গাড়ি থেকে যে ব্যক্তি নেমে এলেন তার ব্যক্তিত্ব তার ঐশ্বর্যের পরিচয় বহন করে কিন্তু তার মুখের স্মিত হাসি চাষীকে কিছুটা আস্বস্ত করেন। তিনি স্মিত হেসে বলেন, -‘আপনি সেই মহানুভব যিনি আমার একমাত্র ছেলের জীবন বাঁচিয়ে ছিলেন?’ কৃষক মৃদু হেসে বললেন,

-‘আজ্ঞে হ্যা’। সেই ব্যক্তি এরপর গরিব চাষীর হাত ধরে অশ্রু সজল চোখে বলেন, -‘আপনার ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না। তবু বলুন আমি আপনার জন্য কী করতে পারি?’ চাষী প্রথমে কিছু নিতে রাজি হয় না, শেষ মেষ অনেক অনুরোধের পর বলেন, -‘দেখুন আমার সেই ক্ষমতা নেই যে আমার ছেলেকে ভালো স্কুলে পড়াই। তাই যদি আপনি ওর একটা ভালো স্কুলে পড়ার ব্যবস্থা করে দেন তাহলেই আমি চির কৃতজ্ঞ থাকবো আপনার কাছে।’ এই শুনে সেই ভদ্রলোক হেসে বললেন, -‘ঠিক আছে এই যদি আপনার ইচ্ছা হয় তবে আজ থেকে আপনার ছেলে আমার ছেলের সাথে একসাথে পড়াশুনো করবে, এবং ওকে আমি আমার বাড়িতে রেখে পড়াবো।’

এরপর অনেক বছর কেটে গেছে। চাষীর ছেলে আর ধনী দুলালের বন্ধুত্ব সময়ের সাথে আরো গভীর হয়েছে। দুজনেই অত্যন্ত মেধাবী, যদিও দুজনের পছন্দ ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। ধনীর দুলালের আকর্ষণ রাজনীতি, আর তার বন্ধুর চিকিৎসা বিজ্ঞান। স্নাতক হবার পর একজন মন দেয় অণুজীব নিয়ে গবেষণায়, আর একজন রাজনীতিতে। গবেষক বন্ধুর এক একটা গবেষণা পত্র যখন চিকিৎসা দুনিয়ায় আলোড়ন ফেলছে। তখন আর এক বন্ধুর নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা আকৃষ্ট করছে ইংল্যান্ডের যুব সমাজকে। এর মধ্যেই সেই রাজনীতিবিদ বন্ধু এক গভীর অসুখে আক্রান্ত হয়। অনেক বড় বড় চিকিৎসক যখন ব্যর্থ হয় ফিরে যায়, তখন সেই গবেষক বন্ধু এগিয়ে আসে। দিন রাত এক করে নিজের তৈরি ওষুধে চিকিৎসা করতে থাকেন নিজের বন্ধুর। এবং সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলেন নিজের প্রাণাধিক প্রিয় বন্ধুকে। কারণ তাকে ছাড়া তো আধুনিক বিশ্বের ইতিহাস লেখাই অসম্পূর্ণ থাকতো জানেন এই দুজন কে? সেই চাষীর ছেলে হলেন বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানী, পেনিলিসিলিনের আবিষ্কারক স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। আর তার বন্ধুটি হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতোমাকে চাই
পরবর্তী নিবন্ধদু চোখ