বিভিন্ন উপজেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, দুর্ভোগ

রাউজান-রাঙ্গুনিয়া-হাটহাজারী-আনোয়ারা

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ৬ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানি বেড়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার পরিবার। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বৃষ্টিতে ধসে পড়েছে কালভার্ট ও সড়ক। পানিতে ডুবে আছে ফসলি জমি।

রাউজান : রাউজান প্রতিনিধি জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চাল প্লাবিত হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে গাছ উপড়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়। হালদা ও কর্ণফুলী নদীর সাথে থাকা গ্রামগুলো কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার নোয়াপাড়া, উরকিরচর, বিনাজুরী, পশ্চিম গুজরা, বাগোয়ান ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গতকাল শনিবার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের বাড়ি ঘরে প্রবেশ করেছে পানি। পানিতে ডুবে ভেসে গেছে চাষের মাছ।

রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সামাদ সিকদার বলেন, প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ইউনিয়ন জলমগ্ন অবস্থায় আছে। বৃষ্টি না কমলে পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা নেই। তবে পানির কারণে কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।

রাঙ্গুনিয়া : রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন মাঠঘাট পানিতে ভরে গেছে। যাতায়াতের সড়ক ডুবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা এবং সদ্য রোপণ করা আমন ক্ষেত। শস্যভাণ্ডার গুমাইবিলেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে সপ্তাহখানেক থাকলে বীজতলা ও ধানের চারাগাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি ছাড়লে গুমাইবিলেও বন্যার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। তবে পানি অপসারণে জরুরি পদক্ষেপ নিতে পাউবো বরাবর অবহিত করেছে কৃষি বিভাগ।

এদিকে, গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে প্রবল বৃষ্টির কারণে উপজেলার গুনগুনিয়া বেতাগী গ্রামের পশ্চিম পাড়া সড়কের একটি পুরাতন বঙ কালভার্ট ধসে পড়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েন ওই এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দা। তবে জরুরি ভিত্তিতে বাশের সাঁকো বানিয়ে চলাচল করছে মানুষ। বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম জানান, বিষয়টি এলজিইডি অফিসকে অবহিত করলে তারা দ্রুততম সময়ে এই স্থানে একটি বিকল্প কালভার্ট করে দেবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম জানান, কালভার্টটি জরুরি ভিত্তিতে করে দেয়া হবে। এছাড়া সম্পূর্ণ সড়কটির উন্নয়নে গত তিন মাস পূর্বে পরিমাপ করে একটি প্রকল্পে বরাদ্দের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

হাটহাজারী : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, উপজেলার দক্ষিণ এলাকায় পাহাড়ি ঢল ও হালদা নদীর জোয়ারের পানিতে বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। কিছু স্থানে বন্যার কারণে গ্রামীন রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া উপজেলা সদরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। হালদা নদীতে ঢলের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢল ও জোয়ারে পানিতে উপজেলার আওতাধীন নিম্ন এলাকায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলার দুবলা ছড়া, বোয়ালিয়া, সোনাই মনাই, ধলই খাল, কুমারী খাল বিপুলা খাল, চারিয়া ছড়া, মন্দারী ছড়া, আলাওল খাল, ছিলনীয়া খাল, চেংখালী, পোড়াকপালি, খন্দকিয়া খাল, পৌর সদরের মরা ছড়া প্রভৃতি খাল ও ছড়ায় বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢল বৃদ্ধি পেয়েছে। বুড়িশ্চর ইউনিয়নের উত্তর বুড়িশ্চর খালেকেরহাট এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন শিকারপুর ইউনিয়নের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান এম লোকমান হাকিম।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহিদুল আলম জানান, উপজেলার অপেক্ষাকৃত নিচু স্থানের কিছু বসতঘরে ঢল ও জোয়ারের পানি ঢুকে গেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানদের বলা আছে যেসব বসত ঘরে পানি ঢুকে গেছে তারা যদি কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চায় তাহলে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।

আনোয়ারা : আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, গত দুই দিনের টানা বর্ষণে আনোয়ারার ব্যস্ততম বাজার চাতরি চৌমহনী, জয়কালী বাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীন সড়কে জলবদ্ধতার কারণে স্থানীয়রা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। স্থানীয় বাঘখাইন মোল্লা পাড়ার বাসিন্দা অজিত বিশ্বাস জানান, গত দুই বছর ধরে স্লুইচ গেইট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গিয়ে মোল্লাপাড়ার দুই শত পরিবার উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যার কারণে আমাদের নৌকা দিয়ে অনেক কষ্ট আর ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। দুই বছর ধরে জোয়ারের পানি উঠানামার কারণে কয়েক শত একর জমিতে চাষাবাদ ব্যহত হচ্ছে। ফসলী জমি খালে পরিণত হচ্ছে। গত দুই দিন ধরে বসতঘরে জোয়ারের পানি উঠানামার করছে। আনোয়ারা নোয়ারাস্তা সড়কটিও জোয়ারে ডুবে গেছে।

চাতরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দীন চৌধুরী সোহেল জানান, স্লুইচ গেইট তলিয়ে যাওয়ার কারণে চাতরি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ দুর্ভোগের শিকার, চাষাবাদসহ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে।

উপজেলা কৃষ্টি কর্মকর্তা রমজান আলী জানান, স্লুইচ গেইটটি দ্রুত নির্মিত না হলে আগামী রবি মৌসুম ও বোরো হুমকিতে পড়বে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তার সাথে মোঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কারো বক্তব্য পাওয়া যাইনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিডিএকে দায়ী করলেন মেয়র
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে ২ কেজি হেরোইন জব্দ