গুদামে ট্রাকে করে সার বোঝাইকালে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি হবে না মর্মে আশ্বস্ত হওয়ার পর চট্টগ্রাম থেকে সার উত্তোলন এবং পরিবহন আজ থেকে শুরু হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সফল একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের পর বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন তাদের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আজ থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে টেন্ডারে যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই সার ট্রাকে বোঝাই এবং পরিবহন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। এর বাইরে আর কোনো ধরনের বখশিস বা চাঁদা দাবি করা হবে না মর্মেও ঠিকাদারদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। অপরদিকে ঠিকাদারদেরও কোনো ধরনের অনিয়মে জড়িত না হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। সার পরিবহনকালে ভবিষ্যতেও যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম না হয় সেদিকে সকলকে সজাগ থাকারও নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
গতকাল বেলা বারোটা নাগাদ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ত্রিপক্ষীয় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম শফীউল্ল্যাহ, সিইউএফএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান, কৃষি বিভাগের উপপরিচালক আবদুস সোবহান, বিএফএর সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান, বাফার গুদামের ঠিকাদার ইফতিয়াল কাশেম চার্লিসহ ডিলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিস্তারিত আলাপ আলোচনার পর বাফার গুদাম এবং সিইউএফএল গুদাম থেকে ট্রাকে সার বোঝাইকালে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করা যাবে না মর্মে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। টেন্ডারে উল্লেখিত পরিমাণ সার ট্রাকে বোঝাই করে দিতে হবে। এখন থেকে বাফার গুদাম থেকে প্রতি ট্রাকে ৮ টন এবং সিইউএফএল গুদাম থেকে প্রতি ট্রাকে ১০/১৫ টন করে সার বোঝাই করে দেয়া হবে। সার বোঝাইয়ের জন্য এতোদিন যেভাবে বাড়তি টাকা আদায় করা হতো তা আর করা যাবে না। এই ধরনের কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। অপরদিকে ডিলারেরাও বাড়তি সার ট্রাকে বোঝাই করে দেয়ার জন্য কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ বা অশান্তি করতে পারবেন না। টেন্ডারে উল্লেখিত নিয়মেই সার বোঝাই এবং পরিবহন করা হবে। সার নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত না করারও ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার।
প্রায় একঘণ্টা ব্যাপী অনুষ্ঠিত বৈঠকে ফলপ্রসু আলোচনার পর ডিলারেরা আজ (রোববার) সকাল থেকে বাফার গুদাম এবং সিইউএফএল গুদাম থেকে সার উত্তোলন এবং সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে করে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামসহ ৮ জেলায় শতাধিক উপজেলায় ১২শ’রও বেশি ইউনিয়নে সার পরিবহনে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল তার সুরাহা হলো।
উল্লেখ্য, সিইউএফএল গুদাম এবং নগরীর কালুরঘাটস্থ বাফার গুদাম থেকে ট্রাকে সার বোঝাইকালে ডিলারদেরকে ঠিকাদার নির্দিষ্ট করে দেয়া হারে চাঁদা প্রদান করতে হয় বলে অভিযোগ করে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন (বিএফএ) সার উত্তোলন এবং পরিবহন বন্ধ করে দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে। গত বৃহস্পতিবার ঘোষিত এই কর্মসূচির আলোকে গতকাল সাংবাদিক সম্মেলন করার কথা ছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে সফল বৈঠকের পর বিএফএ সকল কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।
চট্টগ্রামের সিইউএফএল এবং কাফকোতে উৎপাদিত ইউরিয়া সার সড়কপথে চট্টগ্রাম, কঙবাজার, তিন পার্বত্য জেলা, ফেনী, নোয়াখালী,লক্ষীপুর জেলায় সার সরবরাহ দেয়া হয়। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণে প্রতি ইউনিয়নে একজন ডিলার এবং ১০ জন সাব ডিলার সার পরিবহন এবং সরবরাহের সাথে জড়িত। সিইউএফএল ব্যাগিং গোডাউন থেকে শুধুমাত্র আনোয়ারা এবং বাঁশখালীর ডিলারদের এবং অন্যান্য এলাকার ডিলারদের সার কালুরঘাটস্থ বাফার গুদাম থেকে সরবরাহ দেয়া হয়। এই দুইটি গুদাম থেকে সার ট্রাকে বোঝাইকালেই নির্দিষ্ট হারের চাঁদা পরিশোধ করার অভিযোগ ছিল এতোদিন। আজ থেকে ডিলারদের আর কোনো চাঁদা দিতে হবে না বলেও বিএফএ সূত্র জানিয়েছে।