সরকার হটানোর আন্দোলনে মরণপণ যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নয়া পল্টনে দলের এক সমাবেশে নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এবার সেই মরণপণ সংগ্রাম, মরণপণ যুদ্ধ। মরণপণ যুদ্ধ করে এবার আমাদের সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এদেরকে পরাজিত করতে হবে, এদেরকে সরাতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
বর্তমান সরকারকে স্বৈরাচার অভিহিত করে তিনি বলেন, আমাদের সামনে বিকল্প কোনো পথ নাই। আমাদের ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নাই। আমাদের অস্তিত্বের জন্য, জাতির অস্তিত্বের জন্য আজকে আমাদের সকলকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এই ভয়াবহ দানবকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, একটা জনগণের রাষ্ট্র, জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। সেটাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র চাওয়া। বর্তমান সরকার বিদায় হলেই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা–মোকাদ্দমা ও রায় সব কিছুর অবসান হবে। এজন্য মনের মধ্যে দৃঢ়তা নিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজা এবং নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এগুলোকে যদি আমাদের অপসারণ করতে হয়, দূর করতে হয় তাহলে একটাই মাত্র পথ– এই সরকারকে সরাতে হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব সেজন্য শ্লোগান দিয়েছেন। কী সেই শ্লোগান? ‘দেশ যাবে কোন পথে?’ এসময় নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে উচ্চস্বরে বলেন, ‘ফয়সালা হবে রাজপথে’। সবাই থামার পর বিএনপি মহাসচিব আবার শ্লোগান ধরেন ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের ফরমায়েসি রায়ের প্রতিবাদে এ সমাবেশ হয়। মহানগর ও জেলা সদরেও এ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। বৃষ্টির মধ্যেই বিকাল ৩টায় সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। চারটি ট্রাক একত্রিত করে তৈরি করা হয় অস্থায়ী খোলা মঞ্চ। বৃষ্টি উপেক্ষা করে জুম্মার নামাজের পর থেকে কার্যালয়ের সামনে হাজারো নেতাকর্মী সমবেত হয়। সড়কে জমা হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীরা বক্তব্য শোনেন। নেতাদের অনেককে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখতে দেখা যায়। বক্তৃতার সময় এমন বিরূপ পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই যে পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন, বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন। রাতে ঘুমাতে পারেন না পুলিশ হানা দিচ্ছে।
তার অভিযোগ, এরা দিনের বেলা বলবে আমরা তো ভাই সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে চাই, আমরা কারও প্রতি কোনো অন্যায় করছি না। অথচ হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হলে আবার সবাইকে গ্রেপ্তার করে। কত ভীরু হলে, কাপুরুষ হলে, ভয় পেলে তারা এটা করতে পারে। তিনি ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনের খেলায় নামার আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী বললো বা যুক্তরাজ্য কী বললো বা ভারত কী বললো– এটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নাই। আমাদের দরকার আমাদের জনগণ কী বলছে। আমাদের জনগণ পরিষ্কার করে বলছে, বিদায় হও। আর সময় নাই। যেতে হবে তোমাকে। এই সরকারকেই যেতেই হবে।