শহীদজায়া সংগঠক পান্না কায়সারের ইন্তেকাল

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ৫ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

সাবেক সংসদ সদস্য শহীদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সার আর নেই (ইন্না লিল্লাহেরাজেউন)। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকার বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সকাল ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

১৯৯৬২০০১ মেয়াদে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা পান্না কায়সার শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের স্ত্রী। তিনি অভিনেত্রী শমী কায়সারের মা।

বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সক্রিয় এ মহীয়সী নারী বদরুন্নেসা কলেজের সাবেক শিক্ষক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় অবদান রাখার জন্য তাকে ২০২১ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। জীবনভর যুক্ত থেকেছেন শিশু সংগঠন খেলাঘর এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর সঙ্গে। শহীদুল্লা কায়সারের হাত ধরে তার পরিচয় আধুনিক সাহিত্যের সঙ্গে, রাজনীতির সঙ্গে।

পান্না কায়সারের মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে দেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা তাকে স্মরণ করছেন একজন লড়াকু মানুষ হিসেবে, যার সংগ্রামী জীবন অনুপ্রাণিত করেছে বহু মানুষকে, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া নারীদের।

১৯৫০ সালের ২৫ মে পান্না কায়সারের জন্ম। তার পারিবারিক নাম সাইফুন্নাহার চৌধুরী। কলেজে পড়ার সময় ঢাকায় এক উচ্চবিত্ত পরিবারে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির অমানবিক পরিবেশ তার জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে ফের পড়ালেখায় মন দেন পান্না। এইচএসসি পাস করে কুমিল্লা মহিলা কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি নেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন বাংলায় মাস্টার্স করতে। সে সময়ই পরিচয় হয় তরুণ বুদ্ধিজীবী, লেখক শহীদুল্লা কায়সারের সঙ্গে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল এক দিনে কারফিউয়ের মধ্যে তাদের বিয়ে হয়।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক : পান্না কায়সারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার মৃত্যুতে আলাদা শোক বার্তা দেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য হিসেবে পান্না কায়সারের অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ করবে। শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।

এছাড়া শহীদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। শোকবার্তায় তিনি বলেন, পান্না কায়সার ছিলেন প্রজ্ঞা আর প্রাণশক্তির অনন্য উদাহরণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামী প্রজন্ম গড়ে তোলার কারিগর পান্না কায়সার তার কর্ম ও গবেষণার মধ্য দিয়ে আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন।

গতকাল জুমার নামাজের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে পান্না কায়সারের প্রথম জানাজা হয়েছে। আগামীকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার কফিন রাখা হবে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে আরেক দফা জানাজা হবে। পরে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শায়িত হবেন শহীদজায়া পান্না কায়সার।

খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির শোক : অধ্যাপক পান্না কায়সারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, সহ সভাপতি এম নাসিরুল হক, সহ সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য ড. বেণু কুমার দে, কবি আশীষ সেন, শিক্ষাবিদ অজিত আইচ, এড. শফিউল আলম, শিক্ষক নেতা অঞ্চল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোরশেদুল আলম চৌধুরী সহ খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটি ও শাখা আসর সমূহের নেতৃবৃন্দ। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তারা।

চবি উপাচার্যের শোক : পান্না কায়সারের মৃত্যুতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও উপউপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মরহুমার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর (মরহুমার) শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিসি লাইন বিকল, ৩৫ ঘণ্টা পর ফিরল বিদ্যুৎ
পরবর্তী নিবন্ধটেক্সি চালিয়ে জিপিএ-৫ প্রকৌশলী হতে চায় রাকিব