বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনের পরিস্থিতি মোকাবেলাসহ জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণায় দলীয় নেতাদের মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রের দাবি, সরকারের পতন ঘটানোর এক দফা দাবি নিয়ে বিএনপি মাঠে নেমেছে। এ অবস্থায় পাল্টা শক্ত অবস্থান নিয়ে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ করতে চায় আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি যাতে মাঠ দখল করতে না পারে, সে জন্য এখন থেকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে আওয়ামী লীগ। তাই একই সাথে নির্বাচনী প্রচার এবং সরকার বিরোধী আন্দোলন প্রতিহত করতে দল ও দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল রোববার আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দেবেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
এ বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছে। আগামীকালের সভায় অংশ নেবেন আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জেলা, মহানগর ও উপজেলা, থানা, পৌর (জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভা) আওয়ামী লীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের দলীয় সদস্য, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের দলীয় চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দলীয় মেয়র এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তারাই মূলত মাঠ পর্যায়ে দলের রাজনীতি পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বস্তরের দলীয় কর্মী ও জনসাধারণের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন।
আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশের দলের তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে ঢাকায় বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখবেন তিনি। আগামী নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলে দিকনির্দেশনা দেবেন বলেও জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত গণমাধ্যম পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত কঠিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে এমন একটি বার্তা দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ থাকতে পারে আগামীকাল অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সভায় দলীয় ঐক্য সুসংহত করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেবেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক গতকাল আজাদীকে বলেন, আসলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের বিশেষ এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামীকাল রোববার। এতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বার্তা দেবেন। সেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি ছাড়াও তৃণমূলের দলীয় কোন্দল নিরসনসহ দলীয় ঐক্য সুসংহত ও সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিতে পারেন। এছাড়াও দলীয় এমপিদের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো ও দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ বাড়ানোর নির্দেশনা থাকতে পারে।
সূত্র জানায়, সারাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের প্রায় তিন হাজার নেতা, সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধি বিশেষ বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকবেন। সকাল সাড়ে দশটায় এই সভা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড মনে করছে, বিএনপির চলমান আন্দোলন প্রতিরোধে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিগুলোতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা গেলেও এতে অধিকাংশ মন্ত্রী–এমপি সম্পৃক্ত নন। দলের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করেও তারা (মন্ত্রী–এমপিরা) রাজপথে নেই। সে কারণে এই বিশেষ বর্ধিত সভায় সতর্ক করা হবে মন্ত্রী–এমপিদের।
চট্টগ্রাম থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, জাতীয় পরিষদের সদস্যগণ, চট্টগ্রামের ১৫ সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং নগরীর সকল থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ১৫ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকগণ উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, আমরা দুইজন (দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান) ঢাকায় চলে এসেছি। উপজেলা ও পৌরসভার সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকরা শনিবার (আজ) ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
অপরদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন আজ সকালে ঢাকায় চলে যাবেন। থানার নেতারা রাতে বাসে উঠবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সম্প্রতি বলেছেন, আগামী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। আর নির্বাচন হবে আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে। তাই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য তালিকা প্রণয়নে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করে পাঠাতে বলেছেন নির্বাচন কমিশন।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও)।