শৈশবে যিনি রোপণ করেন ভালোবাসার বীজ

রাশেদ রউফ | শুক্রবার , ৪ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বয়স যখন সাত বছর, তখন টুঙ্গিপাড়ার গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। সময়টা ১৯২৭ সাল। এই মিডল ইংলিশ স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তাঁরই ছোটো দাদা খান সাহেব আবদুর রশিদ। ওই এলাকায় সেই সময়ে এটিই ছিল একমাত্র ইংলিশ স্কুল। এখানে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। তারপর বাবার সঙ্গে তাঁর কর্মস্থল গোপালগঞ্জে চলে যান। ভর্তি হন গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে। ছোটোবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু মানবদরদি ও হৃদয়বান ছিলেন। তখন থেকেই তিনি তাঁর কোমলমতি হৃদয়ে মানুষের প্রতি ভালোবাসার বীজটি রোপন করেন। সেই বীজ ধীরে ধীরে পরিণত হয় চারায়। পরে পরিণত বয়সে সেটা মহীরুহে রূপ নেয়। তাঁর জীবনী পাঠে জানা যায়, কৈশোরে শেখ মুজিবুর রহমান রোদবৃষ্টিতে কোনো দরিদ্র ছেলেকে কষ্ট পেতে দেখে তাঁর ছাতা দিয়ে দিতেন। এর জন্য শেখ পরিবারকে মাসে বেশ কয়েকটি ছাতা কিনতে হতো। স্কুলের কোনো বন্ধুর পড়ার বই না থাকলে তাকে মাঝেমধ্যে নিজের বই দিয়ে আসতেন। শীতে কেউ কষ্ট পেলে নিজের গায়ের চাদর দিয়ে দিতেন।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘তিনি ছোটোবেলা থেকে অত্যন্ত হৃদয়বান ছিলেন। তখনকার দিনে ছেলেদের পড়াশোনার তেমন সুযোগ ছিল না। অনেকে বিভিন্ন বাড়িতে জায়গীর থেকে পড়াশোনা করতো। চারপাঁচ মাইল পথ হেঁটে স্কুলে আসতে হতো। সকালে ভাত খেয়ে স্কুলে আসতো। আর সারা দিন অভুক্ত অবস্থায় অনেক দূরে হেঁটে তাদের ফিরতে হতো। যেহেতু আমাদের বাড়িটা ছিল ব্যাংকপাড়ায়, আব্বা তাদের বাড়িতে নিয়ে আসতেন। স্কুল থেকে ফিরে দুধভাত খাবার অভ্যাস ছিল এবং সকলকে নিয়েই তিনি খাবার খেতেন। দাদির কাছে শুনেছি, আব্বার জন্য মাসে কয়েকটি ছাতা কিনতে হতো। কারণ আর কিছুই নয়, কোন ছেলে গরিব, ছাতা কিনতে পারে না, দূরের পথ, রোদ বা বৃষ্টিতে কষ্ট হবে দেখে তাকে ছাতা দিয়ে দিতেন। এমনকি পড়ার বইও মাঝে মাঝে দিয়ে আসতেন। দাদির কাছে গল্প শুনেছি, যখন ছুটির সময় হতো তখন দাদি আমগাছের নিচে এসে দাঁড়াতেন। খোকা আসবে দূর থেকে রাস্তার ওপর নজর রাখতেন। একদিন দেখেন তার খোকা গায়ের চাদর জড়িয়ে হেঁটে আসছে, পরনের পায়জামাপাঞ্জাবি নেই। কী ব্যাপার? এক গরিব ছেলেকে তার শত ছিন্ন কাপড় দেখে সব দিয়ে এসেছেন।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমগ্র জীবন সকলের জন্য অবশ্যই পাঠের বিষয়। বিশেষ করে তাঁর ছেলেবেলা প্রতিটি শিশুকিশোরের জন্য অনুসরণীয়।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক আজাদী

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘হল্যান্ড থেকে’ গ্রন্থ সমৃদ্ধ করবে পাঠককে
পরবর্তী নিবন্ধসার উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ আজ থেকে