বিদ্যুতের ‘চাহিদা ও উৎপাদনের ভুল প্রাক্কলন’: বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক হয়ে উঠছে
দৈনিক বণিক বার্তার ২০২৩ সালের ১০ জুলাই সংখ্যার মূল হেডলাইন ছিল ‘২০২৫ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৬০ শতাংশ অব্যবহৃত থাকবে’। এই নিউজ আইটেমের অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ বাদেই বিদ্যুতের ইনস্টল্ড ক্যাপাসিটি দাঁড়িয়েছে ২৪,২৬৩ মেগাওয়াট। পিডিবি’র হিসাব অনুযায়ী ২০২৫ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় যুক্ত হবে আরো অন্তত সাড়ে চৌদ্দ হাজার মেগাওয়াট, যার ফলে ঐ সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়াবে ৩৮,৭০০ মেগাওয়াটেরও বেশি। অথচ, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে গড়ে সাড়ে তের হাজার মেগাওয়াট। এই চাহিদা যদি আগামী দু’বছরে গড়ে প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বেড়েও যায় তারপরও ২০২৫ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৬০ শতাংশই অব্যবহৃত থেকে যাবে। ফলে, অব্যবহৃত বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোকে যে ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ দিতে হবে তার বোঝা বহন করা পিডিবি’র জন্য ‘মারাত্মক বিপজ্জনক’ হয়ে উঠবে। বেসরকারী বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোর কাছে পিডিবি’র প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়ে গেছে ২০২৩ সালের জুলাই মাসেই, যা ২০২৫ সালে অসহনীয় বোঝায় পরিণত হয়ে যাবে। রামপালের ১,৩২০ মেগাওয়াট, বাঁশখালীর ১,৩২০ মেগাওয়াট, নারায়নগঞ্জের মেঘনাঘাটে সামিটের ৫৮৩ মেগাওয়াট, ইউনিক গ্রুপের ৬০০ মেগাওয়াট, ভারতের রিলায়েন্সের ৭৫০ মেগাওয়াট, মহেশখালীর মাতারবাড়ীর ১,২০০ মেগাওয়াট এবং সর্বোপরি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের ২,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় যুক্ত হতে যাচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহের এতবড় ‘ভুল প্রাক্কলন’ যারা করেছে তাদেরকে সরকার জবাবদিহির আওতায় আনতে পারবে কি? জ্বালানি মন্ত্রী স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ডঃ তওফিক–ই–ইলাহী চৌধুরী আর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ—তাঁরা কেউ তো ‘টেকনিক্যাল পার্সন’ নন, তাহলে কে বা কারা বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের এতবড় ভুল প্রাক্কলন করে দেশকে এই মহাবিপদে ঠেলে দিয়েছে?
বর্তমান সরকারের অত্যন্ত প্রশংসনীয় অর্জনের অন্যতম হলো দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা, কিন্তু ‘চাহিদা ও উৎপাদনের মারাত্মক ভুল প্রাক্কলনের’ ফলে উদ্ভূত বিদ্যুতের উদ্বৃত্ত ক্যাপাসিটি সরকারের এই সাফল্যকে ইতোমধ্যেই ম্লান করে দিয়েছে এবং ২০২৫ সালে অর্থনীতিকে বড়সড় বিপদে ফেলতে চলেছে। আমরা জানি, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেল, এলএনজি এবং কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারে যে মারাত্মক মূল্যস্ফীতি ও যোগান সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেটা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বড়সড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে। বিশেষত, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন যেহেতু গত এক দশক ধরে আমদানিকৃত এলএনজি এবং কয়লার উপর অতিমাত্রায় ‘পরিকল্পিত নির্ভরশীলতা’ সৃষ্টি করেছে তাই আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজি’র দামের স্ফীতি এবং যোগান সংকট বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ইতোমধ্যেই মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এর আগে ২০০১–২০০৬ মেয়াদে ক্ষমতাসীন বিএনপি–জামায়াতের বিদ্যুৎ উৎপাদনে অকল্পনীয় ব্যর্থতাকে কাটিয়ে ওঠার জন্য ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার অব্যবহিত পর মহাজোট সরকার প্রাইভেট সেক্টরের সহযোগিতায় যে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল–নির্ভর রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ গ্রহণ করেছিল সেটা হওয়ার কথা ছিল স্বল্পমেয়াদী জরুরি ব্যবস্থা। এই জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ তখনকার বাস্তবতায় মোটেও অযৌক্তিক মনে হয়নি, কারণ ২০০১–২০০৬ মেয়াদের সরকার ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন–সক্ষমতাকে তাদের পাঁচ বছরের শাসনামল–শেষে ৩২০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে ফেলেছিল। বিএনপি–জামায়াতের ঐ শাসনামলে টঙ্গিতে ৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি ‘পিকিং প্ল্যান্ট’ নির্মিত হয়েছিল, আর ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা সম্প্রসারণের অজুহাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুধু বিদ্যুতের খাম্বা স্থাপনের একটি ‘লুটপাট যজ্ঞ’ সম্পন্ন হয়েছিল। অন্যদিকে, ঐ পাঁচ বছরে অনেকগুলো পুরানো বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্বাভাবিক নিয়মে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় উৎপাদন প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট কমে গিয়েছিল। ২০০৭–৮ সালে ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনী–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বোধগম্য কারণেই এহেন অকল্পনীয় ব্যর্থতার ভাল সমাধান দিয়ে যেতে পারেনি। ফলে, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে যখন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল তখনো বিদ্যুতের লোডশেডিং অসহনীয় মাত্রায় অবস্থান করছিল। এমনকি, শিল্পখাতসহ পুরো অর্থনীতিতে তখন বিদ্যুতের এই মহাসংকট বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে ওয়াকিবহাল মহল আশংকা প্রকাশ করেছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতেই গৃহীত হয়েছিল মহাজোট সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের উল্লিখিত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। প্রাইভেট সেক্টরে ৫৮টি ফার্মকে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল–চালিত নানা উৎপাদন–ক্ষমতার রেন্টাল ও কুইক–রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য সরাসরি লাইসেন্স প্রদান করা হয় জরুরী ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য। কোন স্বীকৃত টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই এসব ফার্মকে বাছাই করা হয়েছিল ইমার্জেন্সি মোকাবেলার কথা বলে। আদালতে মামলা করে যাতে ঐ বাছাই প্রক্রিয়াকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে না পারে সেজন্য সরকার ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ জারি করে দায়মুক্তির ব্যবস্থা করায় এসব ফার্ম নির্বাচনে যে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মোচ্ছব চালানো হয়েছিল তার বিরুদ্ধে কোন আইনি প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ঐ ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ এখনো চালু রয়েছে। একইসাথে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি মহাপরিকল্পনাও ঘোষণা করা হয়েছিল, যাতে দাবি করা হয়েছিল যে ইমার্জেন্সি মোকাবেলায় স্থাপিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোর উৎপাদিত বিদ্যুতের ইউনিট–প্রতি খরচ যেহেতু ২০০৯ সালেই ১৬–২০ টাকায় হিসাব করা হয়েছিল তাই মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায়িত্ব ক্রমান্বয়ে আমদানিকৃত এলএনজি ও কয়লা–চালিত বিদ্যুতের বেশ কয়েকটি মেগা–প্রজেক্ট স্থাপন করে ওগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। তখন কয়লা ও এলএনজি’র আন্তর্জাতিক দাম যেহেতু অনেক কম ছিল তাই ঐ পরিকল্পনাকে তেমন অযৌক্তিক মনে হয়নি। বলা হয়েছিল, ঐ পরিকল্পনা অনুযায়ী ইউনিট–প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন–ব্যয় মধ্যমেয়াদে ৫/৭ বছরের মধ্যে ৭/৮ টাকায় নামিয়ে আনা যাবে। এর সাথে দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুতের উৎপাদন–ব্যয় আরো নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। রাশিয়ার ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণসহ মোট এক লক্ষ তের হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ রূপপুর প্ল্যান্ট ২০২৪ সালে উৎপাদনে গেলে বাংলাদেশ সেখান থেকে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে বলে সরকার দাবি করে চলেছে।
কিন্তু, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্ল্যান্টগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ক্রয় না করলে ওগুলোকে ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ প্রদানের ব্যবস্থাটা কয়েক বছরের মধ্যেই সরকারের জন্য বড়সড় বোঝায় পরিণত হয়ে যায়। অনেকগুলো রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্ল্যান্টের সাথে সরকারের চুক্তি বাতিলের সময় হলেও লবিয়িং করে ঐসব প্ল্যান্টের মালিকরা তাদের চুক্তি নবায়ন করিয়ে নিয়েছে। (এই মালিকদের প্রায় সবাই প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়–স্বজন কিংবা পৃষ্ঠপোষকতা–প্রাপ্ত ব্যবসায়ী)। মধ্যমেয়াদে এলএনজি এবং কয়লাচালিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো উৎপাদনে আসার পরও অনেক রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্ল্যান্ট চুক্তিবদ্ধ থেকে যাওয়ায় ক্যাপাসিটি চার্জ খাতের ব্যয় বাড়তে বাড়তে ২০১৯–২০ অর্থ–বছরেই ১৭,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার একটি নিউজ–ক্লিপ থেকে জানা যাচ্ছে, পানগাঁওয়ের ৩০০ মেগাওয়াটের এপিআর রেন্টাল প্ল্যান্টটিকে ২০১৯–২০ সালে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে ৫৩২ কোটি ৯১ লাখ টাকা, যার ফলে ঐ প্ল্যান্ট থেকে ক্রয় করা এক ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়েছে ১,৫৭৯ টাকা। একইভাবে সিরাজগঞ্জের ২০০ মেগাওয়াটের প্যারামাউন্ট রেন্টাল প্ল্যান্ট থেকে ক্রয় করা এক ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়েছে ১৮০ টাকা। কিন্তু, দেশের বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে শীতকালে ১১,০০০–১২,০০০ মেগাওয়াটে, এবং গ্রীষ্মকালে ১৫,০০০–১৬,০০০ মেগাওয়াটে। ইতোমধ্যে এলএনজি ও তেলের আন্তর্জাতিক দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের এলএনজি ও তেল আমদানির সক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে, ডিজেল–চালিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো ২০২২ সালের জুলাই থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ফার্নেস অয়েল–চালিত প্ল্যান্টগুলোতেও উৎপাদন–সংকোচনের নীতি গ্রহণ করতে হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ অনেকগুলো রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্ল্যান্টের ক্যাপাসিটি চার্জ এখনো বহাল রাখতে হয়েছে পিডিবি’কে। একইসাথে, এলএনজি–চালিত কয়েকটি বিদ্যুৎ প্ল্যান্টও পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না এলএনজি আমদানির সক্ষমতা না থাকায়। কয়লা–চালিত পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ইতোমধ্যে উৎপাদনে এসে যাওয়া সত্ত্বেও ওগুলো ঠিকমত চালু করা যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করতে না পারায়। এসব এলএনজি এবং কয়লা–চালিত প্ল্যান্টকেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে পিডিবি’কে। পিডিবি’র একটি প্রতিবেদনে তথ্য দেওয়া হয়েছে, ২০২১–২২ অর্থ–বছরে বিদ্যুৎ–ক্রয় বাবদ সংস্থাটির ব্যয় হয় ৭৪,২২৩ কোটি টাকা, যা ২০২০–২১ অর্থ–বছরে ছিল ৫১,৮৭৯ কোটি টাকা। এক বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ২২,৩৪৪ কোটি টাকা। ২০২১–২২ অর্থ–বছরে বেসরকারী প্ল্যান্ট (আইপিপি) থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবি’র ব্যয় হয়েছে ৪৯,২১৩ কোটি টাকা, যা আগের অর্থ–বছরের চাইতে ৭৭ শতাংশ বেশি।
এই অবস্থায় অব্যবহৃত বিদ্যৎ প্ল্যান্টগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ ২০২৫ সালে বেড়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এটা কি পিডিবি’র একটি অসহনীয় বোঝায় পরিণত হবে না? এই বোঝা কি ক্রেতাদের কাঁধে চাপানো হবে না? ২০২৩ সালে আইএমএফ থেকে আমরা যে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ গ্রহণ করেছি তার শর্ত মেনে বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি হ্রাস করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। প্রতিটি কিস্তি ছাড় করার আগে আইএমএফ তার শর্তগুলো পালিত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করবেই। ইতোমধ্যে দু’দুবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর প্রয়াস নিয়েছে সরকার। কিন্তু, এই ভর্তুকি তো বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রদত্ত ভর্তুকি নয়। সেজন্যই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, মারাত্মক ভুল পরিকল্পনার কারণে উদ্ভূত বিদ্যুতের উদ্বৃত্ত ক্যাপাসিটির ফলে বিপুল সংখ্যক অব্যবহৃত প্ল্যান্টকে যে ক্রমবর্ধমান পরিমাণের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে তার বোঝা কি অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না ভোক্তাদের কাঁধে? অব্যবহৃত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্ল্যান্টগুলোর সাথে সরকারের চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে না কেন? সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের আত্মীয় কিংবা পৃষ্ঠপোষকতাধন্য এসব মালিকদের চুক্তি–নবায়ন প্রক্রিয়া আগাগোড়াই প্রশ্নবিদ্ধ। ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ চালু রেখে এ–সম্পর্কে আইনি ব্যবস্থাকে সরকার বাধাগ্রস্ত করছে! কিন্তু, কার স্বার্থে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এত ‘অবাস্তব উচ্চ–প্রাক্কলন’ করা হলো? জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী তো স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, তাঁর মন্ত্রণালয়ে এত অদক্ষতা, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি কেন?
লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়