পৃথিবীর বিভিন্ন বিখ্যাত ও নামী–দামি ই–কমার্স কোম্পানির নাম ও ছবি ব্যবহার করে অনলাইনে পার্ট টাইম কাজ দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে দুই চীনা নাগরিকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। রমনা থানায় একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে সাতকানিয়ার কেরানীহাট থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইউনিটের (দক্ষিণ বিভাগ) অতিরিক্ত উপ–কমিশনার মো. সাইফুর রহমান আজাদ জানান। গ্রেপ্তাররা হলেন ঝ্যাং পিং (৪০), ঝ্যাং ইরউয়া, (৩৮), সিয়াম চৌধুরী (২৪) ও মো. আবীর হোসেন (১৮)। খবর বিডিনিউজের।
মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা আজাদ বলেন, গত ১৩ জুলাই ফেসবুকে বিশ্বখ্যাত কোম্পানি অ্যামাজনের নাম দিয়ে একটি বিজ্ঞাপন দেখেন মামলার বাদী। ওই বিজ্ঞাপনে দৈনিক দুইশ থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে আগ্রহীদের অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়।
বাদী কৌতুহলবশত ওই বিজ্ঞাপনে ‘অ্যাপ্লাই’ লেখা লিংকে ক্লিক করলে তার হোয়াটসঅ্যাপে একটি মোবাইল নম্বর স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়। পরে ওই নম্বর থেকে কথা বলে ‘পার্ট টাইম’ কাজের কথা বলে বিভিন্নভাবে তিন লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৩ টাকা হাতিয়ে নেয় ওই প্রতারক চক্র। চক্রটি আরো ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪০২ টাকা দাবি করে এবং না দিলে মুনাফা ও মূলধন কিছু দেবে না বলে হুমকি দেয়। তখন তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ওই ব্যক্তি।
সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, এই প্রতারক চক্র বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন বিখ্যাত ও নামী ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের নাম ও ছবি ব্যবহার করে চাকরিতে নিয়োগ ও সহজে ১৫ থেকে ২০ মিনিট কাজ করে হাজার হাজার টাকা উপার্জন করার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। তিনি বলেন, এই চক্রের হোতা ডেং শোয়ামিং চীনে বসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানির অ্যামাজনের নামের কাছাকাছি ডোমেইন এমাজন৯৯ডটকম, এমাজন৯৫এসডটকম, এমজনোসডটকম কিনে বাংলাদেশিদের সহায়তায় অ্যাড বুস্ট করে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিলেন। আর সাধারণ মানুষ সহজে টাকা উপার্যনের আশায় ফাঁদে পা দিত।
ওই ওয়েবসাইটগুলো চীন থেকে পরিচালিত হয় জানিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা আজাদ বলেন, বিভিন্ন মোবাইল ফিন্যানসিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে চাকরি প্রার্থীদের বিভিন্ন অংকের টাকা পাঠাতে বলা হত। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমিশনসহ ওই অর্থ তারা ফেরত পাবে। ছোট অংকের লেনদেনে লাভসহ আসল ফেরত পাওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে তাদের এক ধরনের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হত। পরে বড় অংকের টাকা দিলে তা আর ফেরত দেওয়া হত না। এভাবে এই চক্রটি সাড়ে চার মাসে শত কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে চীনে পাচর করেছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা। সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, ঝ্যাং পিং ও ঝ্যাং ইরউয়া দুজনই প্রযুক্তিতে দক্ষ। ডেং শোয়াইমিং তার প্রতিনিধি হিসেবে তাদেরকে এদেশে পাঠায়।
বাংলাদেশি আবীর হোসেন ও সিয়াম চৌধুরীর ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চীনে গিয়েছিলেন। সেখানেই এ চক্রের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। পরে দেশে এসে তারা ওই দুই চীনা নাগরিকের সঙ্গে যোগ দেয়।