নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরে বিএনপি বলছে, যত ধরনের ঘটনা ঘটবে তা ‘সবাইকে’ জানানো হবে। গতকাল বুধবার বিকালে গুলশানের হোটেল লেকশোরে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কূটনীতিকদের সামনে বিএনপির কর্মসূচিসহ সামপ্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলী ও নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান ও পর্যবেক্ষণ বর্ণনা করেন। বিকাল ৪টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, জাপান, চীন, রাশিয়াসহ ২৫টি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন। খবর বিডিনিউজের।
ব্রিফিং শেষে বিএনপির বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ, পরদিন নগরীর প্রবেশ পথে অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলা, গুলিবর্ষণ, কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ, মামলা–গ্রেপ্তার, নির্যাতনের ঘটনা বিস্তারিতভাবে কূটনীতিকদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব ব্রিফিং করেন। তিনি কূটনীতিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এসময় দলের জ্যেষ্ঠ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গত ২৮ জুলাই ঢাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ডাকা পাল্টাপাল্টি সমাবেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে তা অনেকটাই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। পরদিন ঢাকার প্রবেশ মুখে দুই দলের অবস্থানের নতুন কর্মসূচি পুলিশের অনুমতি না পেলে আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাহার করে। তবে বিএনপি অনুমতি ছাড়া কর্মসূচি পালন করতে গেলে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এমন প্রেক্ষাপটের মধ্যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি নেতারা কূটনীতিকদের সঙ্গে এ বৈঠক করলেন, যা তারা বিফ্রিং নামে অভিহিত করেন।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে আমীর খসরু সাংবাদিকদের সামনে বলেন, আজকে বিষয়টা ছিল ব্রিফিং। বিশেষ করে বর্তমান রাজনৈতিক ঘটনাবলী, কি ঘটছে, ২৯ তারিখের আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার ও সরকারি দলের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের যে যৌথ কর্মকাণ্ড, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার ইত্যাদি বিষয়গুলো আমরা বলেছি। বাংলাদেশে যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে, গণতন্ত্র দেখতে চায়, গণতান্ত্রিক অর্ডার দেখতে চায়, মানবাধিকার দেখতে চায় তাদের জানা দরকার। এ কথাগুলো আমরা আগে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছি। আজকের ডিপ্রোমেটিক ব্রিফিংয়ে এই কথাগুলো বলেছি। কারণ ওরা জানতে চায় কী হচ্ছে বাংলাদেশে? নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে যে পথে চলছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করা, সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা, প্রতিনিয়ত হচ্ছে। খসরু বলেন, যত ঘটনা ঘটবে আমরা আপনাদের কাছে তুলে ধরব, সকলকে বলব। ওই দিন যারা আহত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা, বিদেশে ও হজে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়গুলো কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খসরু বলেন, উদ্দেশ্যটা তো বোঝাই যাচ্ছে। তাদের টার্গেট হচ্ছে আবার ভয়–ভীতি দেখিয়ে একটা নির্বাচনী কৌশলে ভোট চুরি করে আবার ক্ষমতা দখল করা। বিএনপির বক্তব্য শোনার পর পর কূটনীতিকরা কী বলেছেন জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, আমরা তো সার্বিক পরিস্থিতি ব্রিফ করেছি। উনাদের বলার বিষয় নয়। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশে ও দেশের বাইরে এদের (এই সরকার) অধীনে যে নির্বাচন হবে না এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। সেজন্য তো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথাটা এসেছে। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে মহাসচিব ফখরুল ছাড়া আরও অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, শামা ওবায়েদ, আসাদুজ্জামান আসাদ, নওশাদ জমির, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, নজরুল ইসলাম আজাদ, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, রুমিন ফারহানা, ফারজানা শারমিন পুতুল। রুদ্ধদ্বার এ বৈঠকের সময় হোটেলে প্রবেশে কড়াকড়ি ছিল। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও ভেতরে ঢুকতে পারেননি। তারা বাইরে অবস্থান করেন। পরে বেরিয়ে এসে বৈঠকের বিষয়ে জানান আমীর খসরু।