ইতিহাস ফিরে আসে বারবার

শিউলী নাথ | বুধবার , ২ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

২৩ জুন, ১৭৫৭পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার ঘটনা ইতিহাসবেত্তাদের গোচরীভূত। পলাশীর প্রান্তরে সিরাজউদৌল্লার পতনের মধ্যদিয়ে যে ট্র্যাজেডি শুরু হয়, তা সমগ্র বাঙালি জাতির ট্র্যাজেডি। নবাবের সরলতা, বিশ্বাস এর সুযোগ নিয়ে মীরজাফর চরম শঠতা ও বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিলেন। লোভ মানুষকে কতটা নীচ ও নির্মম করতে পারে তার দৃষ্টান্ত ‘পলাশীর যুদ্ধ’। নবাবের হেরে যাওয়া যতটা মানুষ মনে রেখেছে, তার চেয়ে বেশি মনে রেখেছে মীরজাফরের সেই বিশ্বাসঘাতকতা। তবে ইতিহাস তাকে ক্ষমা করেনি, আর ক্ষমা করেনি স্বয়ং গ্রষ্টাও। সেই ঘৃণ্য মানুষটি জীবনকে আর উপভোগই করতে পারেননি। সবশেষে কুষ্ঠরোগে ধুঁকে ধুঁকে মরেছেন! আজও বিশ্বাসঘাতক আর মীরজাফর সমার্থক শব্দ হয়ে আছে।

শেঙপিয়ার রচিত ‘ওথেলো’ নাট্যপ্রেমীদের কাছে অমর হয়ে থাকবে। স্বামী ওথেলোকে এত ভালোবাসার পরও দেসদিমোনাকে মৃত্যুবরণ করতে হয় ওথেলোর হাতে। অবিশ্বাস, সন্দেহ মানুষের মনুষ্যত্বকে বিকল করে দেয়।

জানিনা, মধুসূদন দত্ত এসব গ্রন্থের কোনো বিশ্লেষণ দিয়েছেন কী না! তবে সচেতন, সুতীক্ষ্ম ও প্রখর দৃষ্টিসম্পন্ন মনোভাব দিয়ে তিনি আমাদের দেখিয়েছিলেন চিরায়ত ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপরীতে অনবদ্য মহাকাব্য, ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’। রাক্ষস রাজা রাবনকে দেশপ্রেমিক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন পাঠকের কাছে। ধার্মিক বিভীষণ হয়ে গেলেন বড় ভাই রাবনের স্বর্ণলঙ্কা পতনের মূল বিশ্বাসঘাতক চরিত্র হিসেবে। ইতিহাসে তাইতো বিভীষণ ঘরের শত্রু হিসাবেই পরিচিত হলেন! ক্ষমা, বিশ্বাস, ভালোবাসার আবার ছন্দোপতন ঘটে ১৯৭৫ সালে। আগস্ট মাসের ১৫ তারিখে। যার চরম শিকার হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পৃথিবীর ইতিহাসে যুক্ত হলো এক কলঙ্কিত অধ্যায়। একজন স্বাধীন দেশের রূপকার, দেশপ্রেমিক, স্বপ্নদ্রষ্টাকে নির্মমভাবে খুন হতে হোলো নিজের বিশ্বস্তজনের কাছে। যারা একদিন তাঁর ছায়াতলে আশ্রয় পেয়েছিলেন, তাঁর নীতির কাছে মাথা নত করেছিলেন, তারাই নির্লজ্জভাবে অকম্পিত ও নির্লিপ্ত হাতে অস্ত্র তুলে নিলেন।

অরুণরাঙা ভোরের শেষ আলোটুকু দেখার সুযোগ না দিয়ে মুহূর্তেই তাঁর বুকের পাঁজর ঝাঁঝড়া করে দিলেন। সাময়িক পরিতৃপ্তি মিললেও খুনি মোশতাক ও অপরাপর ঘাতকেরা কেউ আর সুখের নিশানা দেখতে পাননি। শুধু ক্ষণিকের মোহে যারা এত বড় অপরাধ করলেন, তার শাস্তি তারা পেয়েছেন বা পাবেন। প্রসঙ্গক্রমে ১৯৮৪ সালের ভারতের তদানিন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জীবনের দিকে তাকালেও একই চিত্র দেখতে পাই। রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে উঠে তখন কারোই কিছু করার থাকে না। বিশ্বাস ভাজন, বিশ্বস্ত লোকের হাতেই ঝাঁঝরা হয়ে গেলেন মূহূর্তে বিশ্ব সেরা নেত্রী বাংলাদেশের সুহৃদ ইন্দিরা গান্ধী। ইতিহাসের সেই সোপান থেকে শুরু হয়ে আজ অবধি সরলতা, বিশ্বাস, মহত্ত্ব হেরেছে পদে পদে। বিজয়ী হয়েছে লোভীরূপী মীরজাফরেরা। তবে ক্ষণিকের জন্য! কারণ নিয়তি কাউকে রেহাই দেয় না। তবুও সততা, সরলতা, বিশ্বাসের কোনো বিকল্প নেই‘- যতরকম আদর্শের কথা বলি না কেন, ঐ শব্দগুলোই মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ ও হাতিয়ার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডেঙ্গু হলে ভয় নয় সচেতন হতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধআলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল : টেলিফোন আবিষ্কারক