মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু

মহেশখালী প্রতিনিধি | শনিবার , ২৯ জুলাই, ২০২৩ at ৯:২৮ অপরাহ্ণ

জাইকার সাথে ঋণ চুক্তির দীর্ঘ ১০ বছর পর প্রায় অর্ধ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্প মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম একটি ইউনিটে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে।

আজ শনিবার (২৯ জুলাই) সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের উৎপাদন কার্যক্রম।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াট।

আজ শনিবার বেলা ১২টায় এই ইউনিটে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হয় বলে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন মজুমদার পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, পরীক্ষামূলক উৎপাদনের শুরুতে ৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এই ইউনিটে ১২৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতই পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন করা হবে। উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এই ইউনিটে পুরো সক্ষমতা অনুযায়ী ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার আশা করছেন সংশ্লিষ্ট এ কর্মকর্তা।

কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নের মাঝামাঝি এক হাজার ৬০৮ একর জমির উপর স্থাপিত হয়েছে দু’টি ইউনিটে বিভক্ত ১২শ’ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনওয়ার হোসেন মজুমদার জানিয়েছেন, মাতারবাড়ি পাওয়ার প্ল্যান্টের দু’টি ইউনিটের মধ্যে প্রথমটি আজ শনিবার পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। এই ইউনিটটির উৎপাদন ক্ষমতা ৬০০ মেগাওয়াটের হলেও প্রাথমিকভাবে ১২৫ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন করা হবে। এ জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। উৎপাদিত এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডেই সরবরাহ করা হবে।

মাতারবাড়ি পাওয়ার প্ল্যান্টের দ্বিতীয় ইউনিটের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে আগামী ডিসেম্বর মাসে। সেটিতেও পরীক্ষামূলক উৎপাদনে ১২৫ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের ডিসেম্বরে ইউনিটটির নিয়মিত উৎপাদন প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

প্ল্যান্টের সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট। আগামী মার্চ বা এপ্রিল মাসে পুরোদমে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে এটি পুরোপুরি চালুর পূর্ব পরিকল্পনা আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এটি জাপানের আর্থিক সহায়তার প্রায় ৫১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এবং এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, পুরো প্ল্যান্টে প্রতিদিন ১০ হাজার টন ও প্রতিটি ইউনিটে পাঁচ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হবে। এখন পর্যন্ত তিন লাখ টন কয়লা সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং আরো ৬৫ হাজার টন কয়লা আগামী ৭ আগস্ট উৎপাদন এলাকায় পৌঁছাবে।

প্রকল্প পরিচালক জানান, জাহাজ থেকে সরাসরি ট্যাঙ্কে কয়লা আনলোড করার জন্য প্রকল্প এলাকায় দু’টি জেটির পাশাপাশি ১.৭ মিলিয়ন টন স্টোরেজ ক্ষমতার চারটি ট্যাঙ্ক ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে। ট্যাঙ্কগুলোর ৬০ দিনের জন্য কয়লা সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে। জাহাজ থেকে কয়লা আনলোড করতে দেড় থেকে দু’দিন সময় লাগে। কয়লা উত্তোলনের জন্য দু’টি জেটি এবং কয়লা সংরক্ষণের জন্য চারটি ট্যাংক নির্মাণসহ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সাইটের কাছে এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইমো হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম-১০ এলাকায় ব্যাংক বন্ধ আজ