যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত (১৮৮৫–১৯৩৩)। আইনজীবী, রাজনীতিক, স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবী। তিনি চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার বরমা গ্রামে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা যাত্রামোহন সেনগুপ্ত ছিলেন আইনজীবী ও বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য। যতীন্দ্রমোহন কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পাস করেন। এরপর ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। যতীন্দ্রমোহন ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলাত যান। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্নাতক ও পরের বছর আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। এবং ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ব্যারিস্টারি পাস করেন। দেশে ফিরে এসে যতীন্দ্রমোহন চট্টগ্রাম জেলা আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত হন। এক বছর পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগ দেন। এসময় কিছুদিন তিনি কলকাতা রিপন ল’ কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কংগ্রেসের রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ওই বছর চট্টগ্রামের প্রতিনিধি হয়ে ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত দলীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনের সময় বার্মা অয়েল কোম্পানি (চট্টগ্রাম) ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ধর্মঘট পরিচালনা করে যতীন্দ্রমোহন গ্রেফতার হন। তাঁর স্ত্রী নেলী তিনি এ সময় ‘দেশপ্রিয়’ উপাধিতে ভূষিত হন। চট্টগ্রামের মানুষ তাকে ‘মুকুটহীন রাজা’ নামে আখ্যায়িত করে। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষ থেকে বার্মাকে বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে যতীন্দ্রমোহন রেঙ্গুন যান। সেখানে জনসমাবেশে বক্তৃতা দেয়ার সময় তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। যতীন্দ্রমোহন ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হন। পরবর্তী সময়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বরাজ পার্টি প্রতিষ্ঠা করলে যতীন্দ্রমোহন স্বরাজ পার্টিতে যোগ দেন।
১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হন। চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর (১৯২৫) যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত স্বরাজ পার্টির বিশেষ অধিবেশনে দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি বাংলা প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির প্রেসিডেন্ট এবং কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। যতীন্দ্রমোহন ছিলেন সমগ্র বাংলার অবিসংবাদিত নেতা। দেশবন্ধু পরিচালিত ফরোয়ার্ড পত্রিকার সাথে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। নিজে অ্যাডভান্স নামে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।