সচরাচর সংকটাপন্ন রোগীকে আইসিইউতে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) রেখে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়ে থাকে। তবে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অনেক রোগী অন্যান্য রোগের পাশাপাশি কিডনি জটিলতায়ও ভুগেন। যাদের অনেকের কিডনি ডায়ালাইসিস করা জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ডায়ালাইসিস মেশিন না থাকায় এধরনের রোগীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো এতোদিন। ডায়ালাইসিসের জন্য সংকটাপন্ন ওই রোগীকে আইসিইউ থেকে তিনতলার কিডনি বিভাগে অথবা নিচতলার স্যান্ডরের ডায়ালাইসিস সেন্টারে টানাটানি করতে হতো। অবশেষে সংকটাপন্ন এমন রোগীদের এ দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে। কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা দিতে আইসিইউ বিভাগেই যুক্ত করা হচ্ছে দুটি ডায়ালাইসিস মেশিন। পোর্টেবল এ মেশিন সহজে স্থানান্তরযোগ্য। এতে করে আইসিইউ’র বেডে শুয়েই এখন ডায়ালাইসিস সেবা পাবেন কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত রোগীরা। আইসিইউ বিভাগে ডায়ালাইসিস মেশিন বসানোর তথ্য নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, সিএমএসডি (কেন্দ্রীয় ওষুধাগার) থেকে সম্প্রতি নতুন দুটি ডায়ালাইসিস মেশিন পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে এসব মেশিন হাসপাতালে পৌঁছে গেছে। আইসিইউতে ভর্তি থাকা সংকটাপন্ন রোগীদের কিডনি ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে যেন দুর্ভোগে পড়তে না হয়, সেটি বিবেচনায় আমরা এ দুটি মেশিন আইসিইউ বিভাগে বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যেই মেশিন দুটি বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।
মেশিন বসানোর প্রক্রিয়া শেষে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আইসিইউতে ডায়ালাইসিস সেবা চালু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ।
আইসিইউ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগে আইসিইউ বিভাগে একটি ডায়ালাইসিস মেশিন ছিল। যার মাধ্যমে আইসিইউতে ভর্তি থাকা রোগীরা (যাদের প্রয়োজন) কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা পেতেন। তবে ৫/৬ বছর আগে মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে। এরপর থেকে আইসিইউতে এই ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এখন পুনরায় এ সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে নতুন করে দুটি ডায়ালাইসিস মেশিন বসানো হচ্ছে আইসিইউ বিভাগে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ সময় ধরে ১০/১২টি আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) শয্যায় মুমূর্ষু রোগীদের সেবা দিয়ে আসছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। আরো ৮টি শয্যা যুক্ত করে ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এ নিয়ে আইসিইউ বিভাগে শয্যা সংখ্যা উন্নীত হয় ২০টিতে। যদিও ১৬/১৭টি শয্যায় সংকটাপন্ন রোগীরা নিয়মিত সেবা পেয়ে থাকেন। ভর্তি থাকা ১৬/১৭ জন রোগীর মধ্যে কিডনি ডায়ালাইসিস জরুরি, এমন বেশ কয়জন রোগীও থাকেন।
এদিকে, হাতে গোনা কয়েকটি শয্যা বাড়লেও হাসপাতালের একটি আইসিইউ শয্যার জন্য অসহায় রোগী ও তার স্বজনদের হাহাকার কমেনি। বৃহত্তর চট্টগ্রামে টার্সিয়ারি লেভেলের একমাত্র হাসপাতাল হওয়ায় দূর–দূরান্তের সংকটাপন্ন সব রোগীর ঠিকানা হয় এই হাসপাতালে। আর সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন হওয়ায় অধিকাংশ রোগীকেই আইসিইউতে স্থানান্তর জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু শয্যা সংকটে সংকটাপন্ন সব রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা সম্ভব হয় না। আকাশচুম্বি ফি’র কারণে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউর কথা চিন্তাও করতে পারেন না গরীব–অসহায় রোগীরা। ফলে আইসিইউ শয্যা সংকটে গরীব–অসহায় রোগীকে অনেকটা ধুঁকে ধুঁকেই মরতে হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে হাসপাতালে ওয়ার্ড সংখ্যা ৪৬টি। এসব ওয়ার্ডে দৈনিক প্রায় তিন হাজার রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। এর মাঝে নিউরোমেডিসিন, নিউরোসার্জারী, মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী ওয়ার্ডসহ উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু ওয়ার্ডে প্রতিনিয়তই সংকটাপন্ন রোগী আসে। সবমিলিয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অন্তত কয়েকশ সংকটাপন্ন রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। যাদের মধ্যে দেড়শ থেকে দুইশ রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু শয্যার অপ্রতুলতায় সেটি সম্ভবপর হয় না। এতে করে অনেক মুমূর্ষু রোগী আইসিইউ সংকটে ওয়ার্ডেই মারা যান। হাসপাতালের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য হাসপাতালে অন্তত শতাধিক আইসিইউ শয্যা জরুরি। অথচ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে হাতে গোনা ১৭/১৮টি।












