এক পরিবারের কাছে ১২শ কোটি টাকার ঋণ

এবি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ম্যানেজারকে শোকজ

হাবীববুর রহমান | শুক্রবার , ২১ জুলাই, ২০২৩ at ৪:২৬ পূর্বাহ্ণ

কোনো রকম ব্যাংকিং নিয়ম কানুন না মেনে নগরীর এক ব্যবসায়ী পরিবারকে ১২০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে এবি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। এর ফলে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে পুরো টাকাই। বিপুল পরিমাণ এই ঋণ আদায়ে যথাসময়ে মামলাও দায়ের করেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। গ্রহণ করা হয়নি ঋণের বিপরীতে সহায়ক জামানতও। ঋণ বিতরণ থেকে শুরু করে মামলা দায়ের পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ার পরতে পরতে গাফিলতি পরিলক্ষিত হয়েছে চট্টগ্রামের একমাত্র অর্থঋণ

আদালতের কাছে। আদালতটিতে থাকা মামলাগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ের মামলা। ঠিক এই অবস্থায় এবি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ম্যানেজারকে শোকজ করেছেন আদালতের

বিচারক মুজাহিদুর রহমান। শৃংখলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর কেন আদেশের কপি পাঠানো হবে না তা তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ১২ আগস্ট আদালতে হাজির হয়ে গাফিলতি বিষয়ে তিনি ব্যাখা দিবেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ২০১৭ সালে প্রথমে ৭৩০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। পরের বছর তা খেলাপিতে পরিণত হয়। একটি টাকাও বিবাদীরা পরিশোধ করেননি। এমন অবস্থার পরও ২০১৯ সালে ফের বিবাদীদের ২৫৫ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। সব মিলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। ব্যাংকিং নিয়ম কানুন না মেনেই পুরো ঋণ বিতরণ করা হয়েছে আদালতের কাছে এমনটিই স্পষ্ট হয়েছে। এছাড়া যথাসময়ে মামলাও দায়ের করেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালে এসে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ঘুম ভেঙ্গেছে। গত ১৮ জুন ঋণ গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এতে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন, সীতাকুণ্ডের এআরএল শিপব্রেকিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতিয়ুর রহমান লস্কর, তার স্ত্রী সামসুন নাহার লস্কর এবং তাদের ছেলে মাহিন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান লস্কর। নানা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ ও যথাসময়ে ঋণ গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের না করায় এবি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ম্যানেজারকে শোকজ করেছেন বিচারক বলেও জানান রেজাউল করিম।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর মঞ্জুরিপত্রের মাধ্যমে বিতরণকৃত ৭৩০ কোটি টাকা ঋণ ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মেয়াদোত্তীর্ণ হয় এবং খেলাপিতে পরিণত হয়। ২০১৯ সালের ১৭ জুন উক্ত ঋণ পুনঃতপশীল করা হয়। শর্ত অনুযায়ী দুটি ত্রৈমাসিক কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয় বিবাদীরা। এমনটা হলে পুনঃতপশীল বাতিলপূর্বক ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে মামলা করার শর্ত ছিল। কিন্তু বিবাদীরা পুনঃতপশীল হওয়ার পর একটিমাত্র টাকাও পরিশোধ করেননি। অন্যদিকে বাদী ব্যাংক বিবাদীদের বিরুদ্ধে কোনও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ঋণের বিপরীতে তারিখ বিহীন চেক নেয়ার শর্ত থাকলেও উক্ত চেক ব্যবহার করে কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি। মর্টগেজকৃত স্থাবর সম্পত্তি অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ১২() ধারা মোতাবেক নিলামে বিক্রির জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়নি। আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়, এই বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে বাদী ব্যাংক কোনও কার্যকর পদক্ষেপই নেয়নি। ৭৩০ কোটি টাকা পুনঃতপশীলকৃত ঋণ অনাদায়ী থাকা সত্ত্বেও ২০১৯ সালের ২৭ জুন বিবাদীদেরকে নতুন করে ২৫৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয়।

আদালত সূত্র আরো জানায়, নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে বিশেষ সুবিধা দিয়ে এই ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় বাদী ব্যাংক বিবাদীদেরকে প্রচলিত ব্যাংকিং নিয়ম কানুন পরিপালন না করে বিপুল পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে। ঋণের বিপরীতে সহায়ক জামানত হিসেবে বন্ধককৃত সম্পত্তি পর্যাপ্ত নয়। খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ৪৬ ধারা মোতাবেক যথাসময়ে মামলা দায়ের দায়ের করা হয়নি।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাকে শোকজের পাশাপাশি গোল্ডেন লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডে থাকা ঋণ খেলাপি আতিয়ুর রহমান লস্করের ৪ লাখ ৬০ হাজার শেয়ার ও মেঘনা ব্যাংক লিমিটেডে থাকা আশিকুর রহমান লস্করের ২ কোটি ১২ লাখ শেয়ার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্রোকাবদ্ধ থাকবে বলেও জানান বিচারক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধদুই মামলায় আসামি ৫শ, গ্রেপ্তার ২৫